ঢাকা, বুধবার, ১৮ জুলাই ২০১২, ৩ শ্রাবণ ১৪১৯, ১২ তম সংখ্যা ।

১২তম সংখ্যায় আছে মোট ষোলটি কবিতা,লিখেছেন- রত্নদীপা দে ঘোষ,রেজওয়ান তানিম,মুনীব রেজওয়ান,এস.আর.এফ খান,শওকত কবির কাজল,মৌ দাশগুপ্তা,শাকিলা তুবা,সিপাহী রেজা,সঞ্জয় চ্যাটার্জ্জী,-জে এম আজাদ,তামজীদ আহমেদ,সুমনা ভট্টাচার্য্য, রবিউল মানিক,দুর্জয় বৈদ্য,রবি এবং ইমেল নাঈম

প্রহর  
 -রত্নদীপা দে ঘোষ
পাখিরা ছড়ায় কেলাসিত আকাশ
আর ঝিনুক ডাকছে সম্ভাবনায়
নরম আঁশের ভ্রূ - পল্লব
 
মেঘের দানা কুড়িয়ে শালিক
অন্যরঙের নদী ছুঁয়ে নাচে আঙুল
যেন এখুনি দরিয়া হয়ে উঠবে গাছপালায়

আইভিলতায় কেউ বুনবে সরগম কেউ মিথ হয়ে আসবে চাঁদবেলায়
আমাদের ব্যথা মোমের মতো একলা আলো পৃথিবীর জরায়ুতে

একদিন ডেকে উঠলে নক্ষত্র
মনে পড়বে শাঁখের বৃষ্টি , পানপাতার কতো কথা
নদী সাঁতরে একতাল ঘুঙুর বাজবে গানের গা বেয়ে আর
তারার মতো ফুটবে একঝাঁক এস্রাজ

গ্রহণ লাগা নদী 
 -রেজওয়ান তানিম
ভালবাসা কি? এই প্রশ্ন বুকে নিয়ে
উত্তর খুঁজতে নেমে একদিন- শতরূপা ফুলেল বাগান,
সাত কোটি পরাগ রেণুর ওড়াউড়িতে
হলদে হয়ে থাকা সরিষার মুগ্ধ মাতাল ক্ষেত;
তাল, সুপারি, শিরীষের বনের ভেতর থেকে
বেড়িয়ে এসে, কংক্রিটের প্রাবল্য, নগরায়নের বানে ভাসা
এই তপ্ত নগরীর অলি গলি,
বিকারগ্রস্ত শকুনের মত খুঁজেছিল সে।
জীবনের শোষণে কাকবলি হয়ে
জন্মে মরে যাওয়া সেই প্রেত যুবক,
সারা বিশ্ব চষে বেড়িয়ে, সাত সমুদ্দুর ঘুরে আসা
ফেরারি জাহাজে ধূসর মাস্তুল উড়িয়ে, অবশেষে
কল্পনার ললাটে রক্তের ফোঁটার মত
ভালবাসা নিয়ে, দৈব ঘূর্ণিপাকের অনাবশ্যক শিকার হয়ে
একবার এসেছিল এই গ্রহণের নদীতে। আমরা
ফিরিয়ে দিয়েছিলাম তাকে, রক্তগোলাপ গুলোর উষ্ণতাসহ !
আমরা নিষ্ঠুর, অবিবেচক নই। সমাধির বুক থেকে
ঝরে যাওয়া ফুল নিই শুধু। ভালবাসা
থাকতে নেই হারানো স্মৃতির প্রতি। ওরা অতীত
বিষাদের জন্মদাত্রী, মৃত বিষণ্ণতা প্রসবা !

অবিনশ্বর সময় চলে অনন্ত ধারার গণিত তত্ত্বে!
শৈশব চপলতা, তারুণ্যের অই উদ্যমতা,
যৌবনের প্রথম প্রেমের অস্থিরতা থিতিয়ে আসা-
সেই যুবক, আগুন লাগা স্রোতে ভাসাবে
বলে, আবারো আসে গ্রহণ নদীতে।
এবার সে বেদনায় নীল। ম্লান মলিন মুখ তার
নিঃশব্দে সরব। আমরা গ্রহণ করি
এপিটাফের তলা থেকে নিয়ে আসা শোকার্ত
শাদা অর্কিডগুচ্ছ। অন্তিম শয্যা নেয়া
ভালবাসারা প্রশ্নবিদ্ধ হয়তবা সময়ের আয়নায়,
তবু তারা মরেনা কোনদিন
শুধু নির্জনতার নীল হুলিয়া জারি হয়
কালো কালো বাতাসের স্রোতে
  
 তোমার জন্যে
-মুনীব রেজওয়ান
রাজসিক অপচয়ে বড় নিঃশব্দে ফুরিয়েছে জীবনের সব উপার্জন
পথ চলতে কখনো তবু হাত চলে যায় ফুলবাবুর পকেটে
সিকি আধুলির মত ঝনঝনিয়ে কাঁদে এখনো খুচরো কিছু সময়

বিকেলেরযাই যাইরোদে প্রলম্বিত ছায়া দিগন্ত ছোঁবার আগে
জীবনের বাকী পথটুকু মাপা গেলে বেশ হত!
জীর্ণ প্রাসাদটা ঘুরিয়ে দিতাম অজানু, --সুবর্ণ কোনো নগরীর দিকে

নিভৃতের সেই বাগান বাড়ীতে প্রতিশ্রুত চুনকাম সেরে
দক্ষিণের বারান্দায় ফোটাতাম দোলনচাঁপা, রজনীগন্ধা আর কাঠবেলী;
তোমার প্রিয় সব সাদাপরী ফুল বাতাসে তুলতো সুনিপুণ ঢেউ

গোপন প্রেমের মহানন্দা ভিড়িয়ে দিতাম কোনো এক সুখম উপকুলে
তোমার কারুকর্মের দোয়াত ছুঁয়ে অতি প্রাচীন কলমে
রুদ্ধশ্বাসে লিখতাম প্রতিদিন চার পাঁচটা প্রেমের কবিতা

বোনা যেত আরো কিছু স্বপ্ন সীমাহীন বিপুল আকাশে
সময়টা জানা গেলে একটা হীরের আঙটি গড়াতাম তোমার অনামিকা মেপে
কৈলাস শৃঙ্গের হিমবাহ ভেঙ্গে আরেকটি ব্রহ্মপুত্র দিতাম গড়িয়ে বঙ্গোপসাগরে
 
পুনরায় কোথাও আমাদের
 -এস.আর.এফ খান 
পুনরায় কোথাও আমাদের
দেখা হতে পারে,
ভালো করে তাকিয়ে তো দেখবোই
তখন তুমি আমার হাতটিও ধরতে পারো,
কখনো এমনও হতে পারে
দরজায় কড়া নেড়ে ঘুম ভাঙাচ্ছ;
কোন কাজে ব্যস্ত আমি রিক্সায় যাচ্ছি
পথে চেনাজানা মানুষের সাথে
অথবা বৃষ্টির আগে পড়ে
সেলুন থেকে চুল দাঁড়ি কাটিয়ে
বের হতেই স্বাভাবিকভাবে
তোমার সাথে দেখা হতে পারে
হতেই পারে কোনোদিন

পুনরায় কোথাও আমাদের
দেখা হতে পারে,
কথা তো হবেই তখন, হাতে সময় সুযোগ
থাকলে তোমাকে নিয়ে পরিচিত আশপাশটা
কিছুক্ষণ না হয় ঘুরেও আসা যাবে,
এমনও হতে পারে
ঘরের খুনসুটি, বাজারের টুকিটাকি
লোকের ভিড়ে
হাতভরতি এটা-ওটা নিয়ে
বাড়ির পথে ফিরে তোমাকে দেখবো,
চমকে যাবার কিছুই নেই
দেখা হতেই পারে কোনভাবে

অথবা দিনক্ষণ বা পরিকল্পনা
ছাড়াই কোথাও হঠাৎ দেখা হয়েই
যেতে পারে আমাদের,
আমি তুমি পৃথক পৃথক জীবনের
যে অবস্থায় থাকি না কেন
এখন কিম্বা আরও একযুগ পরে
যখনই দেখা হোক দেখা হবেই, এবং
দেখা হলে এটা অন্তত জেনো
বহু আগে থেকেই তোমাকে দেখার জন্য
খুব উৎসুক আমার চোখ
এবং আমি তোমাকে দেখার আশায়
ভীষণ উদগ্রীব হয়ে থাকি

মৃত্যুর মহা মিছিল
শওকত কবির কাজল
সেই অবুঝ কৈশোর থেকেই এসেছি দেখে
সত্তুরের ভয়াল ঘূর্ণিঝড়ে উপকুলব্যাপী
একাত্তরে জলে-স্থলে প্রতি বর্গমাইলে
এই বাঙলায় না না অজুহাতে
লাশ আর লাশেদের বীভৎস মিছিল।

আর কতো দেখবো বলো
এখন প্রতি বর্গইঞ্চিতে লাশ
চট্টলার পাহাড় ধসের মতো
চাপা পড়ে আছে কতো অপঘাতে
রোদ-জোছনা আর বৃষ্টির দহন মেখে।

রাক্ষসেরা তো খেয়েছে আগেই
খাল-বিল-নদী-নালা
এখন খায় পাহাড়
পাহাড়ের সবুজ গাছপালা আর মাটি।
অসহায় তপ্ত পাহাড় বৃষ্টির শীতল ছোঁয়ায়
গভীর নিশিতে অভিমানে ধসে
কাটা খুঁড়া নড়বড়ে রক্তাক্ত পায়ের নীচে
মাথা গুঁজে থাকা অসহায় সব মানুষের দেহে।

তবু নিপুণ যোগসাজশে মহা উল্লাসে
বধ্যভূমিতে ওঠে সুরম্য বাণিজ্যিক ভবন
বিজ্ঞাপনী ছলা-কলায় স্বপ্নের অভিজাত শহর
আর কালো টাকার দিশেহারা খরিদ্দারের
টলমলে মাতাল দুটি পা ধরা দেয় মৃত্যু-ফাঁদে।

হায়!ভূমি,জল,পাহাড় খেকোরা জানেনা
লাশের বিনিময়ে গড়া অন্ধ স্বপ্ন-সাধ
এক লহমায় ভেঙে যাবে একদিন
চট্টলার খুলশী পাহাড়ের মতো
আচমকা আট মাত্রার ভূমির নড়াচড়ায়
আগামীর অন্ধকারে তারাও হবে সামিল
ইতিহাসের ঘূর্ণনে মৃত্যুর মহা মিছিলে!

রূপকথা: (আমি তুমি, পর্ব-)

-মৌ দাশগুপ্তা

আমার চোখে ঊষর আগুন,দারুণ অভিমান,
তুমি তখন নীরব প্রেমিক, গুনগুন স্বরে গান।
গানের সুরে উদাস হল আমার বাউল মন,
তোমার মাঝে খুঁজে পেলাম আমার আপনজন।
মনখারাপের বাদল যখন অশ্রু হয়ে ঝরে,
ঠিক তখনই তোমার কথা বড্ড মনে পড়ে,
আত্মসুখী স্বপন আমার রামধনু ঝলমল,
তোমার চোখে বেদনার নীল সমুদ্র টলমল।
আমার ঠোঁটে যখন হাসি, চন্দ্রকলার ঝিলিক,
ভুল ধরছো কথার তুমি, ঠিক কিম্বা বেঠিক।
তুমি যখন ছন্দহারা ফাল্গুনী মৌতাতে,
একা আমি ছন্দ খুঁজি দিনে কিম্বা রাতে।
তোমার মনে মেঘ সরিয়ে জ্যোৎস্না যখন ওঠে,
আমার মনে রঙ ধরিয়ে কৃষ্ণচূড়া ফোটে,
তখন তুমি কৃষ্ণ আমার,প্রযত্নে মধুমাস,
তোমার চোখে চোখ রাখতেই আমার সর্বনাশ।
তুমি আমি, আমি তুমি, অলীক নীরবতা,
বারোমাস্যার কাহিনী নয়, জীবনের রূপকথা।।
 
রোদ-জোছনা
 শাকিলা তুবা
জানো, রোদেরা বিভক্ত দুই ভাগে
এক ভাগে প্লাবন তাপ, অন্যভাগে সমার্থক ছায়া
দ্বিপ্রহরের জোড়া শালিক
উড়তে উড়তে পাখা পুড়িয়ে
শুয়ে থাকে ডানাভাঙা
রোদের নিজস্ব নির্জনতা আছে,
আছে কিচির মিচির পক্ষী মুখরতা।

বলছিলাম রোদের কথা
দিনের বেলায় তাকে জোছনা বলে ভ্রম হয়
রাত্রির অন্ধকারে খর রোদের তাপে নিবিড় ছায়া ঘনায়।
অঞ্চল ভেদে ছায়ারা আবার
গুটি গুটি পায়ে নেমে আসে
মানুষের মতো হাত-পা নাড়ে
ফুটে ওঠে বাড়ি-ঘর, গাছ-নদী সবই।

ছায়া ছায়া মানুষ আর প্রকৃতি
সব কিছু ছবি হয়ে দোলে
কখনো প্রাণবন্ত জোছনায়
কখনো প্রবল রৌদ্রতাপে
সেই সব ছবির মৃদু কম্পনে
বোঝা যায় পৃথিবীর সবটাই ভাগে ভাগে বিভক্ত
এক ভাগ মন রোদেলা জোছনায় কানামাছি খেলে।


চিরকুট 
-সিপাহী রেজা
.
মুখ ভর্তি অজস্র গালি ! মুখ ভর্তি অজস্র ছওয়াব ! মুখ ভর্তি অজস্র চুম্বন !
দেয়াল ধরে হেঁটে যাওয়া এই মাতাল' শহরে, আমি ভুলে যাই, গুলিয়ে ফেলি-
কখন কাকে, কোনটা দিব ! কোনটা দিতে হয় অথবা দেওয়া উচিৎ ছিল !
.
এই শহরকে আমি দিয়ে যাব একটা উড়ন্ত ঘুড়ি যার-মাথা থেকে লেজ পর্যন্ত
আত্মকাহিনী, ক্ষোভ, অল্প কিছু পাওয়ার ঠিকানা...
ঘুড়িটার সুতো ছিঁড়ে গেছে ইতোমধ্যে।
তার পিছু পিছু কয়েকটা বস্তির ছেলে, দৌড়চ্ছে উত্তরের বাতাস।
সেখানে ভেসে যাচ্ছে শহরের অজানা ইতিহাস
.
এখনো আমি হুট-হাট বেরিয়ে যাই বৃষ্টির সন্ধানে
গুড়িগুড়ি, হালকা থেকে ভারী বর্ষণের ঠিক আগমুহূর্তে।
ক্যাম্পাসের সেই যাত্রী ছাউনির নিচে, চুলে এখনো তৃষ্ণার জল !
যেখানে দাঁড়িয়ে থাকতাম প্রত্যহ। আর কয়েকটা ফুল
তুমি তাকে বিনয় করে বলতে... কদমফুল !
আমি বলতাম- বর্ষার প্রথম কন্যা ! আষাঢ়ের প্রেমিকা। বৃষ্টির বাল্যবন্ধু
.
বিস্ময় ভরা চোখে, ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলাম...
ছায়াও মানুষকে বিশ্বাস করে না, সর্বদা অবিশ্বাসী অনুসরণ ভূমিকার আশপাশে
কখনো কখনো সামনে এসে আবার দূরে সরে যায়, চোখে তরল ঘৃণা পুষে!
.
আরেকটা সত্য আছে তাকে আমি গোপন করে রাখি মিথ্যা দিয়ে, অর্ধেক হাসি দিয়ে;
যেমন- ঢেকে রাখে নেশা তার সমস্ত ক্ষত;
ধুঁয়া দিয়ে, ভুলে থাকার প্রতিশ্রুতি সরূপ এক পেগ স্বপ্ন দিয়ে...
.
এমন সন্ধ্যায় আমি চায়ের সাথে তোমায় খুঁজলাম, কড়া লিকারে...
হিম হয়ে আসা দূরের আকাশ তির তির করে কাঁপে বুকের পাঁজরে !
.
তোমার ফেলে যাওয়া ঝুমকা, এক রাশ বাক স্বাধীনতা !
খোঁপা খুললেই চুলের আস্তরণ, তাতে পাশে টানার গন্ধ !
কোমরে গুঁজে রাখা চর্বির দাউ দাউ থেকে চোখের তীব্র কামনা।
সবটুকু চাই ! যতটুকু হলে দীর্ঘশ্বাস মরে যায়, বিরহের দুর্ভিক্ষে !
.
এমন রোদের দিনে, শহরের সমস্ত রাস্তা হোক কৃষ্ণচূড়ায় প্লাবিত
তার উপর দিয়ে নদীর মত ঢেউ ফেলে চলে যাক কয়েকটা ফিঙ্গে
-
যদিও সে গ্রামের ছেলে !

কোন এক পুকুরে ঝাঁপিয়ে পড়ুক শহুরে সাঁতার না জানা সভ্যতা
ঘাটলায় বসা একটা বুড়ো বলেই ফেলুক, "আইজ এতো গরম ক্যা"
.
এখন আকাশে চলতি মাসের মেঘ!
ফাঁকা পকেটের এই ঢাকা শহরে, আসন্ন বৃষ্টি মানেই মধ্যবিত্ত মাস শেষ!
গুড়গুড় ডেকে যাওয়া মনের পাঁচিলে, বিজলী মানেই ক্রমশঃ স্বস্তির রেশ...

অশরীরী 

-সঞ্জয় চ্যাটার্জ্জী
পড়ন্ত বিকেল, দিনটা বয়ে যায়,
শ্রান্ত অবসন্ন আমি,
মুদ্রিত নয়নে আধ শোয়া বিছানায়,
একটি একটি করে দিন গুনি।
কি গো? কি ভাবছো? তুমি ডাক দিলে -
জানতাম তুমি আসবে, রোজই আসো এই সময়ে।
বললাম, দাঁড়িয়ে কেন? বসো !
আজ এতোদেরী যে?
দেরী? দেরী কোথায়? এখনি তো আসি আমি !
আজ কেমন আছো?
ওই, একই রকম ! নাহ! বোধহয় ভালই আছি !
আজও সেই একই শাড়ি?
তুমি হেসে বললে, ভুলে গেলে?
তো তোমারই দেওয়া শেষ উপহার !
মনে পরে গেলো,
দীর্ঘ সেই পঁচিশ বছর আগেকার কথা |
মুখে চন্দনের ফোঁটায় কল্কা আঁকা,
কপালে লাল সিঁদুরের টিপ,
সিঁথিতে চওড়া সিঁদুর,
গলায় গোরের মালা,
মুদ্রিত নয়নে তুমি শুয়ে আছো |
নাকে তুলসী পাতা -
বেলা আর নেই !
  

আপন দর্পণে নমিত

-
জে এম আজাদ

আপন দর্পণে যখন নমিত হও
দেখতে কি পাও
অসুখী এই কুমোরের বুকের পাঁজর ?
ভেতরে থই থই করা বেদনার জলে
স্মৃতির দেহটা তার ভেঙ্গে হয় কুচি কুচি,
তুমিতো জলের ভেতরে ডুবে থাকা
বেদনার ভাষা ভুলে গেছ,
ভুলে গেছ আলো আঁধারের মাঝামাঝি
স্বপ্নের দোল খাওয়া জীবনের
মৃদু সুখ ধ্বনি
প্রস্ফুটনের কালে যে কুসুম বৃন্তচ্যুত হয়
সেতো কেউ নয়, আমি
আমারই দুঃখের সমান বয়সী
এক নীল জলাভূমি,
হারিয়ে ভাব, ভাষা জীবনের আলোক
সে যেন হয়ে গেছে
হারানো কৈশোরের সেই অসুখী বালক

বিস্মৃতির সুখের পারদে
তোমাকে রঙ্গিন হতে দেখে দেখে
ভেতরে থই থই করা বেদনার জল
যতটুকু গাঢ় হয় হোক,
দুঃখের পাতন জলে লেখা আছে
যতটুকু ক্ষয়
সবটুকু আজ আমারই হোক ।।
 
অপেক্ষারা 
-তামজীদ আহমেদ
হৃদয়ের শত শত আবেগে আবেশে
নির্জনতাকে একাকী ভালোবেসে
যবনিকার আলোড়নে শেষ হবে
উল্লাস-সিন্ধুর কুবিপ্লবে

গাঢ় আকাঙ্ক্ষার আলোড়ন চলছে বয়ে
ধীর লয়ে
হেমন্তের নদী,শীতল ঢেউ উদ্বেল অচঞ্চল
হৃদকুঞ্জে গাহে শত পাখিদল

অপেক্ষারা গাঢ় অশ্রু ফোঁটায় ঝরে
আবর্তনে বিবর্তনে আমার অন্দরে

অপেক্ষারা-
নিদারুণ শোকাহত অক্ষরে অক্ষরে
ক্ষুধিতের মতো এক সকরুণ সুরে
ফেলছে নিশ্বাস উড়ে উড়ে ভস্ম করে
হতাশ প্রাণে অনিদ্রাহরণে নিকষ অন্ধকারে

মায়াজাল জ্বলন্ত শিখর প্রদেশে
নক্ষত্রের মশাল হাতে
অলৌকিক সুদর্শন
দুঃখভরা স্মৃতিতে
.
দুপুরে-বৈকালের আলোয়,সন্ধ্যার ম্লানে অস্থিরতা!
রাতভর কেঁপে কেঁপে জাগে তীব্র নীল ব্যথা

আদি অঙ্গারে নিমগ্ন জীবন-যৌবন সীমানা
রস-রাগ-সৌন্দর্য-সুধা-স্বপ্ন ইত্যাদি গুপ্তবাসনা

অধীর অন্তর রে করেছে অস্থির অসহিষ্ণু
অন্তহীন পিপাসার রাশি রাশি নীরব নিঃসঙ্গতায়
পৃথিবীর বৃহৎ ক্ষুধিত গহ্বর
মনের ঘর
সব মানুষের অগোচর

চুপকথা 
 -সুমনা ভট্টাচার্য্য
ভিক্টোরিয়ার সবুজ লন পাতাবাহার বর্ষায় সজীব
একলা শালিক আড়মোড়া ভাঙে আমলকীর ডালে
সমগ্র পৃথিবীর আগের রাতে দেখা স্বপ্ন গুলো
গাছের গা বেয়ে নামে পূর্ণতার খোঁজে

মাটির কণার সাথে আলাপচারিতার পর
কিছু জলকণা প্রবেশ করে গভীরে
বাকিরা মিলেমিশে কোলাজ রামধনুর
প্রতিটা ঘাসের ডগায় স্ফটিক বিন্দু

দুঃখ খরা তাপ সহে শ্বেতপরী কালো
বাঁশি ধরা মুখে, নিঃশব্দে আকাশের বুকে
ওড়া সহজ, তবে ফেরা নয়, তাই থাকে স্থবির
ডানা না থাকার বেদনা, ঘুচে যায় অচিরে......

দুর্যোগ
 
-রবিউল মানিক
অত্যুজ্জ্বল অন্ধকারে ভুলে ভরা স্বপ্ন
চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত নিয়েছে অক্ষিগোলকে
মানুষেরা ভুল স্বপ্ন সময়ের অবাস্তব চাঁদরে জড়িয়ে
রাখে আপাদমস্তক;চোখের সমুদ্রে কেউ কেউ
নিদ্রার নির্বোধ নৌকা নোঙরবিহীন ভাসিয়ে রাখে
দুঃস্বপ্নের আনাগোনা ঠেকাতে অথচ সূর্য
ঠিকঠাক সৈকতের নরম বালিতে লিখে যায়
দুর্যোগের নাম।


অস্কারের দাবিদার


দুর্জয় বৈদ্য

অন্ধ চোখের সামনে তুমি ফ্লাডলাইট জ্বালাও ,
আর এরপর এসে দাঁড়াও খুব আশেপাশের কোথাও
স্থবির জীবনের একমাত্র সজাগ থাকা বাঁ-পাশটাঃ
যেটা তোমার কাছে বন্ধক দেয়া ;
সেটাতে সমুদ্র এসে চোখ টিপ মারে
আকাশ আমাকে দেখে করুণা করে
আর চাঁদ ফেরত দিয়ে যায় অমাবস্যার আলো
আমি তখন আর বাঁচি না ,
কেবল বেঁচে থাকার অভিনয়ে অস্কারের দাবিদার হয়ে উঠি

 কেন ভালবাসা আসে বার বার 

-রবি
ভালবাসা ঘুরে ফিরে কেন আসে বার বার ?

কেন পথ ভুলে অন্য পথে
হারিয়ে যায় না ভালবাসা ?
দিনকে দিন এতো কিছু উথাও হয়ে যায়
ক্লান্তির শরীরের লুনা ঘাম বেয়ে
ক্ষয় হয়ে যায় নব রাস্থা,
চিকন সুতার মতো
চাঁদটা ভরাট হতে হতে
এক সময় ভর পূর্নমায়
হারিয়ে যায় গহিন আঁধারে ...

তবুও ভালবাসা ,
তবুও ভালবাসা হারিয়ে যায় না কেন কেন .. ?

প্রশান্ত মহাসাগর থেকে
রাশি রাশি জল কণা
নিঃমেশে কাঁটাতারের সীমানা ছেড়ে ,
আকাশ সীমানা পাড়ি দিয়ে
হারিয়ে যায় অজানা রেখায় ।
এত হাজার হাজার নক্ষেত্র
কক্ষ পথ ভুলে ঝড়ে পরে অগ্নি বৃষ্টি
অবশেষে বিলীন হতে হতে
ছাই টুকু চোখে পরে না

তবুও ভালবাসা ,
তবুও ভালবাসা কেন কেন
আমারি পুড়া জীবনে
জ্বল জ্বলিয়ে জ্বলে উঠে বার বার ...!
 
কবিতাদের বিদ্রোহ ভালবাসার নম্র নগরীর বুকে

ইমেল নাঈম

ভাবনাদের শোক মিছিল মনের দ্বারে
কবিতারা করছে হাপিত্যেশ অস্তিত্ব
হারাবার ভিন্ন নতুন কোন অপরাধে,
কারো কারো মতে সাহিত্য আজ ঠিকাদারী
ব্যবসা, এতে কোন শিল্প বা সৃষ্টি নেই।
কারো কারো হৃদয় পুড়ছে নড়কের
অণলে বন্ধুত্বের অপপ্রয়োগের কল্যাণে।
এসব দেখে কবিতারা খুবই হতাশ
করছে তারা সংবাদ সম্মেলন প্রেসক্লাবে,
হয়ত একটু পরেই হয়ে যাবে মানব বন্ধন
আর প্রতিকী অনশন। কবিতাদের এমন
প্রতীবাদ দেখে আজ আমি সত্যি স্তম্ভিত।

অলরেডী বোদ্ধাদের রাতের ঘুম পুরোটাই
হারাম হয়ে গেছে এই ব্যপারে, পুরু গ্লাসের
পাওয়ারী চশমা চাপিয়ে তাঁরা খুঁজে বেড়াচ্ছে
কিছু প্রশ্নের উত্তর। কেন আজ কবিতাদের
এই বিদ্রোহ ভালবাসার নম্র নগরীর বুকে,
কেন কবিরা এতোই কষ্ট পায় বন্ধু হারানোর
তিব্র জ্বালাতে, কেনই বা একজন কবি বন্ধু
চিনতে বারবার করে ভুল। কেনইবা কবিতারা
নিজের অস্তিত্বকে হারিয়ে ফেলছে চুরির
চাদরে, এসব ভাবতে ভাবতে কখন যেন
ঠান্ডা হয়ে গেলো কফির কাপ। আজকে
আমি আর ছোঁব না কফির কাপ, কারণ
আজকে অভিমানী কবিতাদের মন খারাপ।

1 টি মন্তব্য:

  1. ধন্যবাদ জানাই এই গ্রুপের এ্যাডমিনকে এই ই-পত্রিকায় আমার কবিতাকে প্রকাশের সুযোগ দেবার জন্য। এই সংখ্যার প্রতিটি কবিতা অতি মনোমুগ্ধকর ও যথার্থ। সকল কবিদের আমার আন্তরিক অভিনন্দন জানাই।

    উত্তরমুছুন