ঢাকা, মঙ্গলবার, ৫ মার্চ ২০১৩, ২১ ফাল্গুন ১৪১৯,২৯তম সংখ্যা।

২৯তম সংখ্যায় আছে মোট ১৫টি কবিতা, লিখেছেন-শামীম পারভেজ,মৌ দাশগুপ্তা,শওকত কবির কাজল,ফারহানা খানম,সুরথ সরকার,সালাহউদ্দিন আহমেদ সালমান,শুভ বাবর,নীল আলো,চৌধুরী ফাহাদ,আহমেদ মুনীর,কাজরী তিথি জামান,কানিজ ফাতেমা রুমা,যোবায়ের বাশার জিহান,
ইন্দ্রাণী সরকার এবং ইমেল নাঈম।


হে নতুন প্রজন্ম
শামীম পারভেজ

রক্তে রঞ্জিত মাটিতে
একাত্তরের বীজ থেকে
জন্ম নিলো নতুন প্রজন্ম
রক্ষা করতে ইতিহাসকে

গানে গানে কলতানে
জ্বলছে মশাল মোমবাতি
রাজাকার ধ্বংস নির্মূলে
জড় হচ্ছে সব দিবা রাতি

শ্লোগানের সুর ছড়াচ্ছে
কি রাত কি ভোরে
বসেছে নতুন প্রজন্মের মেলা
সেই প্রজন্ম চত্বরে

এগিয়ে যাও এগিয়ে
হে নতুন প্রজন্ম
গড়তে সোনার বাংলা
হয়েছে তোমাদের জন্ম


বাংলা
মৌ দাশগুপ্তা

সাত সমুদ্র তেরো নদীর গল্প বলতে বলতে
অলস দুপুরে মায়ের মুখে প্রাণ পেত সে জাদুকরী ভাষা
আমার শিশুমন স্পষ্ট দেখত ক্ষীরনদীর কূলে বসে
কেশবতী রাজকন্যা ক্ষার-জলে ধুয়ে নিচ্ছে তার মেঘবরণ চুল


কিম্বা যখন সাঁঝবাতির আলোয় দেওয়ালে ফুটে ওঠা ছায়ায়
চোখ রেখে ঠাকুমার কোল ঘেঁসে বসে শুনতাম ,
ভুত রাক্ষস দত্যি দানোর গল্প, তখনো মন জুড়ে মায়া ছড়াতো
আমার মায়ের ভাষা, আমার ভাষা, বাংলা ভাষা

তারপর, নতুন করে সে ভাষাকে মায়ের হাত ধরে চিনলাম,
লিপির অক্ষরে, কালো স্লেটের ওপর সাদা খড়ির আঁচড়ে
রোজকার দেখা ফুলহীনা গাছটায় ফুলফোটার খবর জানার মত
নতুন চোখে চিনতে শিখলাম তাকে বইয়ের পাতায়,লেখার খাতায়

বানান, যতিচিহ্ন, সন্ধি, সমাস, ণত্ব বিধান,ষত্ব বিধান,
প্রত্যয়, অপনিহিতি বিপ্রকর্ষ, নিস্পৃহ চোখ চেয়ে দেখতাম,
চিরকালের চেনা ভাষাটির শাড়ীর ভাঁজে কত রহস্য, না জানা তথ্য
কত অলঙ্কার,কত রূপক, কত উপমা,কত অহঙ্কারের ছড়াছড়ি

আজ আমার বাংলা লেখার খাতার ওপর এসে পড়ছে দূষণের ছায়া
যতবার মুছতে যাই, টুকরো আলোছায়ার পর্দা ঠেলে সে ছড়িয়ে যায়
শুদ্ধ অশুদ্ধ বানান’, ‘বর্ণবিপর্যয়’, ‘বিদেশী ভাষার অনুপ্রবেশ’, এসব পড়োনি বুঝি?
বলতে বলতে দুএকটা স্বরবর্ণ এসে উঁকিঝুঁকি মারে,বাংরেজী,হিংলারা মুচকি হাসে

খবরে প্রকাশ, আজকাল বাংলাও নাকিভোল বদলাচ্ছে’,
নমনীয় সময়ের চাপে কথ্য বুলির অভ্যস্ত মুখোশে
রবীন্দ্রনাথ থেকে নজরুল, মুজতবা আলি থেকে জীবনানন্দ, বনফুল থেকে জসীমউদ্দিন,
আজও আমার বাংলা ভাষা, নকশীকাঁথার রঙদার নকশা থেকে ফিনিক্সপাখী হয়ে দুইবাংলার আকাশে উড়ে বেড়াচ্ছে

 
ল্যাপটপের আঙ্গুল রাজপথে মুষ্টিবদ্ধ
শওকত কবির কাজল

বায়ান্নর চেতনা যখন বয়সী জরাগ্রস্ততায় দুর্বল
একাত্তরের চেতনা যখন হাবুডুবু চোরাবালিতে
রাজনৈতিক চেতনা যখন দূর্বৃত্তায়ন আর জোটের জালে
দুরপনেয় কলঙ্ক লেপে হেঁটে যাচ্ছিলো কালো-গহ্বরে
তখন ল্যাপটপ-প্রজন্মের কতিপয় অখ্যাত ব্লগারের আঙুল
আশা ভঙ্গের ক্ষোভে ঝলসে উঠেছে স্ফুলিঙ্গের মতো
দ্রোহের আগুন জ্বেলে শাহবাগ চত্বরে নিটোল দেশ প্রেমে

একাত্তরেরজয় বাংলা শাণিত শ্লোগানে
যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসির দাবিতে কবিতা গানে
তরুণ প্রজন্ম গড়েছে শাহবাগ চত্বরে এক নতুন বাতিঘর!
প্রজ্বলিত মোমের শিখায় আঁধারের ঘরে ঘটে গেছে নতুন জাগরণ
চেতনার বিচ্ছুরিত আলোয় উদ্ভাসিত আজ বাংলার পথ-ঘাট-মাঠ

আবহমান বাংলায় জেগে আছে আজও সহজিয়া সুর
জেগে আছে ফাগুনের বৃষ্টি
জেগে আছে কোকিলের গান
জেগে আছে পলাশ-শিমুল-কৃষ্ণচূড়ার দ্রোহ
জেগে আছে আজও প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের ধমনীতে
রফিক,সালাম,বরকত,আসাদ
ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্ত স্রোত
দুলক্ষ বীরাঙ্গনার সম্ভ্রম হারানোর বেদনা

জেগে থাকবে আরো আগামীর ইতিহাসে শহীদ রাজিবের নাম
জেগে উঠছে দেখো তাঁর ক্ষত-বিক্ষত রক্তাক্ত মুখ থেকে
প্রভাতের সূর্যালোকের মতো অগণন মুক্তিযোদ্ধার হাত
ল্যাপটপ থেকে রাজপথে আজ নব চেতনায় যা দৃঢ়-মুষ্টিবদ্ধ!


সময়
ফারহানা খানম

একে একে জ্বলে উঠলো অযুত নক্ষত্রের আলো,
স্বপ্নচারী মনে ছিলে নীরব নিভৃতে
জীবনের রেল গাড়িটা কয়েকটা ইষ্টিশন পার হয়ে গেলে
এলে তুমি মোহনীয় বিজ্ঞাপনের মত
গভীর আঁধারে বিদ্যুৎ ঝলক
আমাদের চোখে ছিল চোখ
কেটে গেল অনির্ণেয় কাল , আমরা কাটিয়েছি বেলা
ডুব সাঁতারের খেলায় কখনো বা
কথার অজস্রতায়
নদীর ওপারে তেপান্তরের মাঠ
অগুনতি চোরকাঁটাতে ভরা
ওখানে আমাদের খেলাঘর ছিল মাটির উঠোনে
ধুলোবালি দিয়ে গড়া ভরন্ত সংসার ...
শুনেছি এখন পাড়ার ক্লাবঘর ওটা


কবিতার জন্য প্রতীক্ষা
সুরথ সরকার

আজ একজন কবি ,
কবিতার শান্ত সুশীতল দেহের উপর
তীক্ষ্ণ ধারালো, খসখসে কলম চালিয়ে
ঘরে তুলবে কবিতার পঙক্তি
না, আজ কবিতার পঙক্তি মালায়
আসবে না কুসুমিত রক্ত জবা ভোর
শিশিরস্নাত ভোরের সুশোভিত বৃক্ষের হরিৎ উৎসব
কিংবা রঙ্গিন ডানা মেলা রং বেরঙের প্রজাপতি
অথবা সায়াহ্নের প্রথম প্রহরে
গোধূলির ধুসর আলোর নিদারুণ মুহূর্তে
শান্ত হয়ে ঘরে ফেরা পাখির ডানার সুর মূর্ছনা
কিংবা নদীর ঢেউ জলের মধুশ্রাব্য
কলকল ধ্বনি
আজ কবি লিখবেন, সুখের কোন স্মৃতি নয়
তিনি লিখবেন দুঃখ জাগানিয়া পাখির
দুঃখ বিলাসিতার কথা,
তিনি লিখবেন, কঙ্গো কিংবা সোমালিয়ার
জীর্ণ শীর্ণ হারের সেই বীভৎস শরীরের কথা
যাদের দেখলে,
আমাদের হারের ভিতর, আমাদের মজ্জায়
ভয় আহত সাপের মত হিস্ হিস্ করবে
এবং শীরার মধ্য প্রবাহমান রক্ত শুকিয়ে যাবে
আজ কবি, কোন ফুল, ফল, নদী কিংবা
কোন রমণীর মধুর স্মৃতিকথা আওরাবেন না
তিনি আজ বলবেন অনাহারী এক বৃদ্ধের
ক্ষুধায় কাতর মুখের কথা, তার অন্তর আত্মার
করুন মৃত্যুর বৈভবের কথা
কবি লিখবেন, সেই সব মায়ের কথা
যাদের জীর্ণ শীর্ণ শরীরের স্তন থেকে
দুধের ধারা খাদ্য অভাবে বন্ধ হয়ে গেছে
আর সেই সব দেব তুল্য শিশুর আত্মচিৎকার
যা কানে লাগা মাত্র যেকোনো মায়ের
চোখ থেকে অঝর ধারায় ঝরবে অশ্রু
আজ এমন একজন পিতার কথা কবি লিখতে বসেছেন
যার কথা মনে আসলেই
চোখের জল আর কলমের কালি দুইই শুকিয়ে যায়
তাই আজও কবির সেই কবিতা লেখা হল না
তিনি আর লিখতে পারলেন না
অথচ কবি তার খাতা নিয়ে লিখতে বসেছিলেন
যে কবিতা তার মাথার ভেতরে রাতদিন
ভ্রমরের মত গুনগুন করছিল, সেই কথা
কলমের আঁচড়ে তার সুনিপুণ হাতে
কেবলি লিখবেন এবং ছড়িয়ে দিবেন পৃথিবীর বাতাসে
কিন্তু একি সর্বনাশের ঝড় উঠল
কবি তার কবিতার খাতা থেকে কলম তুললেন
এবং আকাশের দিকে তাকালেন , বড় স্থির সেই দৃষ্টি
যেন চোখের পলক পড়েনা
আকাশে তখন কোন মেঘ ছিল না
কবি মেঘের জন্য কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলেন
তারপর একফালি মেঘ ছুড়ে দিলেন আকাশে
(
তার কবিতার খাতা থেকে)
সঙ্গে সঙ্গে সুনীল আকাশের সমস্ত নীল ছাপিয়ে
আকাশ হয়ে উঠল বিষ নাগ
ফণা তুলে কেবলি ছোবল মাড়তে থাকল
আর আর্তনাদ করলো
ওমনি শুরু হল বৃষ্টি, সেকি বৃষ্টি যেন বৃষ্টি উৎসব
কবি আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়ালেন
এবং হাঁটতে লাগলেন তার চেনা পথ ধরে
হাঁটতে হাঁটতে একসময় তিনি অন্ধকারে মিলিয়ে গেলেন
তাই আজও কবির সেই কবিতা লেখা হল না
যার জন্য কবির দীর্ঘ এই প্রতীক্ষা
 

বিজয়ের দৈববাণী
সালাহউদ্দিন আহমেদ সালমান

কোজাগরী আসমানে জ্যোৎস্নার পিদিম
আমি অনাড়ম্বরপূর্ণ আঁধারের উৎসবে
ক্ষুধাতুর উলঙ্গ কাঙাল বেশে
ঝুলে আছি মহাশূন্যে
ঘুমন্ত শরীর থেকে ক্ষয়ক্ষরিত ভেজা ঘাম
কোন এক মাসের নীলবর্ণ ছুঁয়ে
ক্রমশ বাড়ে সন্ন্যাসীর
সঞ্চারিত ক্রোধ
নতজানু হয়ে অকপটে বলতে চাই
আজো;আজো ঘুচেনি মনের আর্তরব
বেলা বয়ে যায় সুপ্রাচীন অন্ধকারে
তৃণ পুড়ে হচ্ছে বিরান
তবু বুঝলেনা অভিমানী দুঃখবোধ
বুকের ভীতর কামড়ে থাকা
পিপাসার দাগ,আষ্টেপৃষ্ঠে চৌচির নিনাদ
স্বপ্নের তালিকায় রিজার্ভ দুঃস্বপ্ন
পাঁজরের আবডালে পাঁজর ভাঙে
দূরত্বে অব্যাহতিহীন অফুরন্ত চাতক চক্ষু
ছেঁড়া খোঁড়া প্রত্যাশার নিসর্গ
দৃশ্যের গভীরে জয়জয়ন্তী হাসির কলধ্বনি
মসজিদ থেকে মন্দিরে গির্জা থেকে তীর্থে
জনতার মুখে মুখে শুনি ভেসে আসছে
চূড়ান্ত বিজয়ের দৈববাণী


আমিও ইনশাল্লাহ প্রস্তুত
শুভ বাবর

আমার দেশের মাটি ,তোমার পরে ঠেকাই মাথা
জয় বাঙলা আমিও ইনশাল্লাহ প্রস্তুত

মৃত্যু-উপত্যকায় অবারিত রতির সুকৌশলে মৌলবাদ
জনতা ফাঁসীর কাব্যগ্রন্থে ভাজে ভাজে নাচছে শরীর ,
সর্বনাশের পাশে দাড়িয়ে গায় বিদ্রোহের কবি বাদক

কালো পোশাকের শিহরিত প্রতিশোধের জ্বালা পূর্ণ হবে
গণস্বাক্ষর প্রায়শ্চিত্তের শ্মশানে হেঁটে চলা ছোট বড় ছায়া
প্রকাশ্য পথে চিৎকার করে নতুন প্রজন্ম ৷জয় বাঙলা

নির্লজ্জ পছন্দের পাকিস্তানের পতাকা
বিচারকের চোখে রক্তের দাগ
নগ্নতার এই পক্ষ নিয়ে যারা করেছে বড় মায়া ,
এই সুন্দর ঠোঁটে আফসোস বলতেও তাদের বড় ঘৃণা হয়

সময়ের দূরত্ব যতই দীর্ঘ হোক ,রঙ্গিন স্পর্শে বিপ্লবী জাগরণ
জয় বাঙলা স্লোগানে ,প্রতিটি লোমকূপ প্রস্তুত
আবারও মানচিত্রের সমর যুদ্ধে যেতে আমিও ইনশাল্লাহ প্রস্তুত
মুক্তি জাগরণে জ্বরে দ্রুত সুস্থ হতে নতুন প্রজন্মের ঈমান প্রস্তুত



ঠিক যেন দিঘীর মত
নীল আলো

তুমি ঠিক যেন দিঘীর মত
আমি যতবার আঙ্গুল টেনে ভাগ করে দেই-
ততবার তুমি মিলে যাও,
ধৈর্যের দীক্ষা নিয়ে আমি এক ধ্যানে থাকি --
বিচলিত হয়ে যদি উঠতে চাই
তখনি তোমার প্রপঞ্চ সুক্ষজালে উষ্ণতা দিয়ে
আমার হৃদয়ে সুরভি ঢেলে দেয়।।
সীমিত সঞ্চয় মধুগন্ধী বিরহ দহন--
যা আমার অনন্ত কালের বিচ্ছেদী সুখ,-
অতলান্তিক দুঃখজরা দূর করে,
তারি প্রয়াসে আমি সম্মোহিত হয়ে থাকি তোমার পানে
স্বপ্ন মায়ায় তুমি বিষকাটা হয়ে বিধে আছো মনে
আমিও পুষে রাখি তোমায় পূজারিণী হয়ে ...
প্রিয়,জীবন বেলায় থাক তুমি দীঘি হয়ে ।।
বিরহ নীলকণ্ঠের সীমাহীন যন্ত্রণা
একেবারে নিরেট পাথর , তার উপরে কিছু নেই,
অবিমিশ্র সুধা বিষ পান করে...
আনন্দে পতঙ্গের মত উড়ে উরে পরি আগুনে,
চিরন্তন সত্য শুধু এই...
দু'টি মন মিশে আছে দীঘালয়ে
বিচ্ছেদের হিমেল গভীর চুন্বনে।।



বিবেকের আলিঙ্গন থেকে
চৌধুরী ফাহাদ

কেউ ওদেরকে বুঝাও ধর্মের মূলমন্ত্র
সেই শান্তির বাণী যুগে যুগে এনেছে ধর্ম
কেউ ওদেরকে জানাও অন্ধ না হতে
গোঁড়া বিশ্বাসে ধর্মকে ধ্বংস না দিতে
মানুষ কখনো মানুষের জন্য হয় না বন্য
মানুষ হবে অপরিসীম আলোর অরণ্য

কেউ সবাইকে বুঝাও না হতে বর্ম
মানুষকে ভালোবাসা মানুষেরই ধর্ম
কেউ সবাইকে জানাও আগুন না ছড়াতে
হিংসাতে রাঙ্গিয়ে জীবন অমানুষ না হতে
সব মানুষের রয়েছে অধিকার মানুষের মত
মেরে-মরে হয়োনা কেউ মনুষ্যত্বের ক্ষত

এই মাটি, এই স্বদেশ, মা সবার
সব মানুষের আছে সমান অংশীদার
এই মানুষ, মায়ের গর্ভ ছেঁড়া ধন
সেই তো সবার পরম আপন
কেউ বুঝাও সবাইকে, জাগাও মানুষের হুঁশ
মানুষ হয়ে মায়ের বুকে ধ্বংস কর না মানুষ

 .
স্বপ্ন সমুদ্রসুখ
আহমেদ মুনীর

অকস্মাৎ রেগে যাও
অকস্মাৎ কাঁদো
অকস্মাৎ ভালোবাসো
অকস্মাৎ হাসো
অকস্মাৎ নদী হয়ে
বুকের ভিতর বহো ।।

তোমার অথৈ অটল জল
করে টলমল
মনে হয় সব কিছু
তোমারই ছল ।।

অকস্মাৎ তলিয়ে দাও আমায়
তোমার সমুদ্র জলে
ভাসাও সুতীব্র স্রোতে
করো সুতীব্র আঘাত বাঁকে
আঁখিকোণে তোমার বর্ষার ঢল
ভাদ্রের রোদে তরঙ্গ দোলে ঝলমল ।।

বোঝে না মন
কী হলো কী হয় কখন
ভালোবেসে খুঁজ সুখ
ছিন্নভিন্ন করো
অভিমানে ভরো বুক
গুটিকত শব্দ নিয়ে বসবাস
গুটিকত রঙ নিয়ে হা-হুতাশ
রৌদ্রের ডানায় ভর করে
পাতাবাহার আর প্রজাপতির রঙ ।।

এইভাবে এইতো আশা ভাষায়
আর ভরসায়
বেঁচে থাকা বেঁচে আছি
তরঙ্গে দোলে স্বপ্ন সমুদ্রসুখ ।।


ঘাসফুল
কাজরী
তিথি জামান

একটা কাঁচের চুড়ি ভাঙ্গলো না হয়!
আনবো আবারওঘাসফুল’....
আঁচলে বেঁধে রাখো গন্তব্য আমার
পৃথিবী যত বড়ই হোক না কেন-
তোমার বলয়ে বিন্দু হয়ে
ফিরে আসবোই ........ ‘ঘাসফুল’!!
এই সবুজ গালিচার নরম উষ্ণতায়,
শীতল নদীর শ্বাসের গভীরতায়
দিগন্তের মিলন রেখায় ছাপ এঁকে -
নির্ঝরের মায়াবী স্রোতোধারায়,
আমার মুঠোভরা সবটুকু নির্যাস
আমার আলোময় বিশ্বাসে
তোমার বলয়ে বিন্দু হয়ে
ফিরে আসবোই ........ ‘ঘাসফুল’!!
আমার বর্ণিল-বিহ্বলতা,দুরন্ত উত্তাপ,
আমার গোপন কালবৈশাখী,তৃষিত প্রতাপ
আমার আকাশ ভাঙ্গা জল সুখময়
একাদশী চাঁদের সাতকাহনে
অলিন্দের কোণে কোণে স্বপ্ন ছড়ায়ে
তোমার বলয়ে বিন্দু হয়ে
ফিরে আসবোই ........ ‘ঘাসফুল’!!
ঘাসফুল’...........

 
কাঞ্চী বাঁশি
কানিজ ফাতেমা রুমা

কাঁপা হাতে কাঞ্চন একটি
বাঁশ আনিয়া দিয়া বলিল,
কাঞ্চী গো-
একটা বাঁশি বানাইয়া দাও
ইহা শুনিয়া কাঞ্চী বলিল,
কি হইবে বাঁশি দিয়া?
কাঞ্চন কয়-
আমি নদীর পাড়ে বসিয়া
মনের আনন্দে দুপুর বেলা
বাঁশি বাজাইব
কাঞ্চী কহিল-
দুপুরে কেন?
বিকালে কেন নয়?
কাঞ্চন কহিল কারণ
দুপুর বেলাতেই তোমার সখী
কলসি কাঁখে জলের ধারে আসে,
নইলে যে তার দেখাই পাই না
কাঞ্চী কপাল কুঁচকাইয়া কহিল
আহারে হতচ্ছাড়া-
তুই বাঁশ কাটিয়া
আমার হাতে বাঁশি বানাইয়া
আমার পিরিতে
বাঁশ দিতে বইসা আছ!
কাঞ্চন কহিল- না কাঞ্চী
ভাবিওনা
আমি তোমারেই ভালোবাসি
সখী তো শুধু আমার সুরের সাথী
সখী ছাড়া যে আমি বাঁশিতে
সুর খুঁজে পাইনা,
তুমি আমার বাঁশি আর সখীরে
কখনই সতিনের চোখে দেখিও না
কাঞ্চী কহিল আচ্ছা,
যাহা তুমি বল,
তোমার সুখই আমার সুখ,
তুমি মনের সুখে বাঁশি বাজাও
আমি একটু দক্ষিণ চরে যাই,
বহুদিন রাখালের মুখ দেখিনা
আজ বড়ই মন আনচান করিতেছে
কাঞ্চন বলিল হায়!
কেমন কথা, আমি থাকিতে রাখাল কেন?
কাঞ্চী কহিল যেমন সখী ছাড়া
তোমার বাঁশি সুর যেন তেন!


সেই রাত আর কাঞ্চী ঘুমাইতে পারিল না , বার বার ভাবতে লাগিল সে কি ভুল করিল? তার সহজ সরল কাঞ্চা আজ কাল এমন পালিয়ে পালিয়ে বেড়ায় কেন? কাঞ্চী ঘরের দাওয়ায় বসে এটা ওটা ভাবতে লাগলো , ভাবতে ভাবতে নিজে নিজে বলেই যাচ্ছিল~~


কাঞ্চীকাঞ্চাকে বাঁশী বানানো শিখাইয়া
যে ভুল করিয়াছে তাহা সে-
হাড়ে হাড়ে টের পাইতেছে!
ইদানীং কাঞ্চা বাঁশী ভাঙ্গিয়া গেলে
আর কাঞ্চীর ধারে আসে না
বাঁশঝাড়ে যাইয়া বাঁশ কাটিয়া
নিজেই বাঁশী বানাইয়া তাতে
মধুর সুর ধরে-
কাঞ্চী ভাবে আহারে কাঞ্চা!
আমি যদি জানিতাম
তোর বাঁশীর সুরে এমন গরল
তবে কি তা পান করিতাম
কখনোই না,
কখনোই তোর মধুর কথায়
মন ভিজাইতাম না


কাঞ্চী বুঝিল কাঞ্চা তার হুস হারিয়াছে, কাঞ্চা কে সোজা রাখিতে হইলে এইবার বাঁশি না তাকে বাঁশের বেত বানাইতে হইবে ~ তাই কাঞ্চী ভাবতে লাগল কি করিয়া কাঞ্চা কে আবার নিজের উঠোনের বকুল তলায় বাঁধা যায়, যেখানে বসিয়া কাঞ্চন শুধু কাঞ্চী কে দেখিয়াই বাঁশিতে সুর তুলিত আর কিছুই তাহার মনে আসিত না, কিন্তু এখন বকুল তলা ভুলে তো কাঞ্চা নদীর তীর ছাড়তেই চায় না! এই বার কাঞ্চী পুরো উঠোন জুড়ে হাঁটতে লাগল আর নিজের সাথেই নিজে বলতে লাগল ...


কাঞ্চী কি কাঁচের পুতুল
কথায় কথায় ভেঙ্গে যাবে?
কাঞ্চা তুমি বাঁশীর সুরে
নতুন কাঞ্চী ঘরে নিবে!
তা হবেনা তা হবেনা
কাঞ্চী আছে যতদিন,
সাতপাকের ওই মন্ত্র ভুলে
বাজবে না আর নতুন বীণ!
কাঞ্চা তোর বাঁশী বাজা
নতুন নতুন কুঞ্জ সাজা
মনের সুখে মোহন সুরে
বৃন্দাবনে রাধিকা নাচা
গেলাম আমি দক্ষিণ গাঁয়ে
রাখাল যেথা থাকে বসে
আজ খাওয়াবে নিজের হাতেই
গুঁড় মুড়ি আর রসের পায়েস
এবার তুই মিটা বসে
নদীর পাড়ে নিজের খায়েস



বিষাদসবটুকু পথে…!
যোবায়ের বাশার জিহান

সাগরের যদি তৃষ্ণা লাগে?
তৃষ্ণার্ত সাগরে কে দেবে জল?
খালি করে দেয়া বুকে সেই হাসি কখনো ফেরেনি…!
শুকনো মরুভূমি; একান্তে বটগাছ; আর কত সহ্য আর শক্তি পরীক্ষা দেবে?
হাসো আর একটি বার
নিশ্চিন্তে মৃত্যু বরণ করি






তোমার ভাবনা

ইন্দ্রাণী সরকার

আজও যখন হাসনুহানা ফোটে
মনে হয় তোমার চেনা গন্ধ
যেন নাকে এসে লাগছে |
যখন তুমি ক্লান্ত হয়ে আমার কোলে
মাথা রেখে ঘুমিয়ে যেতে
সেই স্মৃতি কেন জাগছে !
হঠাত যখন বৃষ্টি ঝরে টাপুর টুপুর
সোঁদা গন্ধ নাকে আসে
আমার মন তোমায় ভাবছে |
পথে যেতে যেতে হঠাৎ ফিরে চাই
তুমি কী ডাকলে আমায় ?
ফিরে দেখি শুন্যতা হাসছে |
তবে তুমি কী কখনো ছিলে না !
কে তবে চেয়ে থাকতো ?
তোমার দৃষ্টি অপলকে কেন চাইছে ?
আজ শুধু চারিদিকে ঘাসফুল ছড়ানো
আঙ্গিনায় বকুল ঝরে টুপটাপ
তোমার ভাবনায় মন আমার মাতছে ||


 
নির্বাক প্রশ্ন
ইমেল নাঈম

শব্দ সংকটে ভুগছি , আজ তো তোমায়
নিয়ে কবিতা লেখার কথা তোমার খোঁপায়
গুঁজে দেয়ার কথা বেলি ফুলের মালা

তবে কেন ভিন্ন পথে ছুটছি
নিরস্ত্র হয়ে দাঁড়াচ্ছি হিংস্র দানবের সামনে ,
তবে কি বিয়াল্লিশ বছরেও ভূখণ্ড হয় নি প্রেমের

মায়ের শাড়ির আঁচল আর কতবার
দু'টুকরো হবে বলতে পার ,
আর কত স্তম্ভ ভাঙলে ঘুম ভাঙবে তোমার
আর কতবার রক্ত গঙ্গায় ভাসলে দেশ
হবে তোমার , আমার , সবার


৩০তম সংখ্যা প্রকাশিত আগামী ১৯ মার্চ ২০১৩ মঙ্গলবার।