ঢাকা,মঙ্গলবার , ১০ জুলাই ২০১২, ২৬ আষাঢ় ১৪১৯,১১ তম সংখ্যা


বর্ষার কবিতা নিয়ে মুক্তডানার ১১তম সংখ্যায় আছে মোট চৌদ্দটি কবিতা, লিখেছেন-   রেজা রহমান,অমিতাভ দাশ,ফারহানা খানম,ইন্দ্রানী সরকার,শ্রীশুভ্র,শুভ বাবর,রুদ্রনীল রায়চৌধুরী,আব্দুল্লাহ্ আল জামিল,খান রনক,হেনরী ইকবাল,আলী রেজা,সায়ক চক্রবর্তী,এলিজা আজাদ এবং সৌভিক দা' । 

 যদি
রেজা রহমান 
আমার যত ডাকাডাকি সাড়া-না-পাওয়া
রইল সবই হাওয়ার কাছে
শুনতে যদি চাও কখনো
হাওয়ায় ভেসো

যেটুকু জল চোখের ছিলো শুকিয়ে গেছে
রইল সবই মেঘের কাছে
ভিজতে যদি চাও কখনো
বৃষ্টি এসো

যতটা পথ হেঁটেছি আমি তোমার দিকে
রইল সবই মাটির কাছে
সঙ্গ যদি চাও কখনো
ধুলোয় মেশো

আমার যত স্বপ্ন ছিলো উড়ালপাখি
রইল সবই তারার কাছে
সেই তারাদের ছোঁবে যদি
স্বপ্ন দেখো

যেটুকু ছাইভস্ম ছিলো ভালবাসা
রইল সবই সন্ধ্যাদীপে
ফুলের আলোয় ফুটবে যদি
জ্বলতে থেকো
 
বৃষ্টি এলো
  অমিতাভ দাশ
বৃষ্টি এলো পদ্ম-পাতায়,
পদ্য পেতে, মনকে মাতায়,
মনের রসের গহন ফোঁটা
তুল তুল তুল বিন্দু গুলো

বৃষ্টি এলো মনের মাঠে
পদ্য ঝরে একনাগাড়ে
ঝুপ ঝুপ ঝুপ বৃষ্টি ভিজে
তুমিও এলে হাফ-ডে কোরে
চা বসাতেই সন্ধ্যা এলো!

চুপ চুপ চুপ ভুতের মতোন
অন্ধকারে, দুই চেয়ারে
আমরা বসে, রাত্রি হলো!
বৃষ্টি তুমি কয়েই গেলে
কোন সে আষাঢ়, প্রথম দিবস
কোন সে মেঘের প্রথম প্রেমের
কোন সে গভীর বার্তা এলো

তোমার মুখে কিসের আভা
কোন পুরানো লজ্জা ছুঁলো

বৃষ্টি পড়ে পদ্ম-পাতায়
এবার বুঝি বন্যা এলো!


শ্রাবণধারা  
ফারহানা খানম

ধুসর বিকেলে একাকী দাঁড়িয়ে
ব্যলকনিতে দেখি আকাশে মেঘের
আনা গোনা
তুমি বলেছিলে,খুব রোদ্দুর ওখানে
আমি মেঘ পাঠালাম তোমার আকা
শে, বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়লো অঝোর ধারায়
ভিজে কাঁঠালিচাঁপা বিকেল
ভিজে যাচ্ছ তুমি
ভিজলো আমার ভালবাসা
আমি নির্নিমেষ দেখি
টলটলে জলে ভালবাসা আমার
কষ্টের বৃষ্টি বিন্দু

অনুভবে বুঝে নিলাম তীব্র অনুভব যতো
কষ্টের আর ভালবাসার রঙ্গে উন্মাতাল সাগর

আমি শ্রাবণ চোখে মিষ্টি
হেসে বলেছিলুম হারিয়ে ফেলনা
আমার সবুজ কিশোর
এই ক্ষণটুকু!!
 
 
ওর চোখে বৃষ্টি 
  
ইন্দ্রানী সরকার
এলোমেলো বৃষ্টি ওর
চোখের পাতা ছুঁয়ে দেয় |
ওর কাজল কালো
চোখে জমানো মেঘ
জলের ফোঁটা হয়ে
বৃষ্টিধারায় মিশে যায় |
অভিমানী মুখখানি
বৃষ্টিতে ভিজে আরো যেন
সুন্দর, সতেজ হয়ে ওঠে |
ওর ঠোঁট কাঁপতে থাকে
কোন অজানা আবেগে !
কান পেতে শুনি বলছে -
"
মন মোর মেঘের সঙ্গী |"
ছুটে যায় বৃষ্টি ভেজা মাঠে
ওর নরম পা দুখানি ভেজা
মাটির স্পর্শে যেন আবার
জীবন ফিরে পায় |
ছুটে বেড়ায় পরম আনন্দে,
যেন পারিজাতের পাপড়ি
ধীরে ধীরে খুলে যাচ্ছে |
অথবা কবিগুরুর ভাষায়
"
বাদল দিনের প্রথম কদম
ফুল করেছ দান |"
এক খণ্ড প্রেমের গল্প 
শ্রীশুভ্র 
 আজ রাতে বৃষ্টি হবে নারী?
আমার মধ্য বয়সের
সঞ্চিত ভাঁড়ারে?
তোমার শরীর জুড়ে
রাত বারোটার গান
আষাঢ় হয়ে নামুক!
মাধবীলতার মৃদু সঙ্গীত নিয়ে এসো টাপটুপ ছন্দে!
আকাশ জোড়া কালো
চুলে বজ্রবিদ্যুৎ এঁকো!
আমি পথ চিনিয়ে
নিয়ে আসব ঘরে!

এমনই এক আষাঢ় সন্ধ্যা
নিয়ে শ্রাবণ বিতানে
বর্ষা হয়ে ওঠার প্রত্যয়ে
পৃথিবীর যাবতীয় সঞ্চয়
কেবলই প্রেমের কথা বলে!

সরস মৃত্তিকার মতো নারী
তোমার ভরা যৌবনে
যত বর্ষা নেমেছে নিয়ত,
আমায় ভেজাবে তো!

বাইরে নিকষ কালো অন্ধকারে আকাশ ভেঙ্গে
নেমে দেখ!
পুরুষের বুকের জলাধারে
সাত সমুদ্র তেরো নদীর জল! তোমারই অপেক্ষায় তবু! ভালোবাসা শ্রাবণ হয়ে ঝরুক! বর্ষা আরও প্রেমের গল্প বলুক!
চলো ভিজি আজ শ্রাবণধারায়
 শুভ বাবর
এক দম বন্ধ করা মনের মতো ভদ্র বৃষ্টি
মুহূর্তের মধ্যেই পুরো জায়গার চেহারাটাকে বদলে দিল
প্রতিটা ফোঁটার সাথে
অন্যরকম গল্পের অনুভূতি চোখের পানির স্বাদ
শ্রাবণের হাওয়ায় উড়ন্ত জলরাশি বিষণ্ণ লীলাচঞ্চল
মন বদলের পড়ন্ত বিকেলের সেই সূর্যটা অস্ত যায় গগণে
বর্ষণ মেঘে মেঘে গুড় গুড় লেগে যায় ঘর্ষণ অঞ্জন হাতে তুমি
বর্ষায় বৃষ্টির গানে ধুলো জমে ওঠা শহুরে জীবন ধুয়ে মুছে যায়
আজ সরসীর হাস্যোজ্জ্বল মুখে কালো মেঘের আনাগোনা
বিচিত্র বৃষ্টি মানুষ খোঁজে ভালবাসার স্পর্শে গভীর টানে
প্রতিটি বর্ষে ধন্য হোক জীবন উজ্জ্বল আলোর পুণ্যবানে
শ্রাবণধারায় উদ্ভাসিত হোক মন ,বুক ভেজাব ছায়ার মেঘে

বাইরে আকাশের তর্জন-গর্জন চলছে আকাশ ভাঙ্গবে বলে
ভালোবাসার মেঘ বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ুক আমার গায়ে ক্লান্ত হয়ে
আজ ভরা বরষায় মন খারাপের গল্প বলোনা কেউ ,
দল ভাঙ্গা মেঘ পরবাসে মেঘের পরে মেঘ বাড়ি যায়
মনের চোখে ফিরে গেছে বারবার কান্নার নীরবতার বুক চিরে ,
মনের ভিতরে মন ওত পেতে বসে আছে নিষ্ঠুর বিরান দেহের ফাঁকে
কাঁচ-কুয়াশা ফুঁড়ে রোদ এসে চোখের তাঁরায় চোখটি ছুঁয়ে বলে ,
অভিমানী অন্ধ মেঘ
বৃষ্টি হয়ে মন ভেজাও গাঙচিলেরা নামবে জলের পরে ,
ঝুলন্ত আকাশে শূন্য ভেলায় মেঘ জমেছে বৃষ্টির শিষে
আমার হাতটি ধরো পাখির ডানায় দৃষ্টি রেখে বলো ,বড় ভালবাসি

মেঘ পিয়নের ব্যাগের ভেতর দীর্ঘ চিঠি বৈশাখী ঝড় আনো
যে প্রহরে স্বপ্ন কাঁদে দক্ষিণে-হাওয়া চঞ্চল শিহরন অনন্ত সঙ্গীতে
সকালগুলো আঁকড়ে ধরে আঁধার কৃষ্ণকলি
ধূলিমাখা বিদীর্ণ পথের বাঁকে
দোল খায় কৈশোরে ফেলা আসা শুভ্রতা প্রতিচ্ছবি
আত্মভোলা খেলার-ছলে মন দিয়ে বসে আছে কোন কিশোরীর মায়ায়
মাতাল হাওয়ার পাগলা গানে অন্য সুরের বাঁশীওয়ালা বাজায় বাঁশি
সুর বিহনে কোথাও কোন কষ্ট নেই ,দুঃখ নেই ,
আজ এক ছায়া এঁকে ফিরিয়ে দিয়ে কালের স্রোতে ভেসে যায়
আমার আঙিনায় অদ্ভুত সুন্দর মেঘলা সারাদিন
বৃষ্টি তে আজ সুখ সাজাবো দুখ হাসাবো গীতিরঙে মন ভাসাবো
এইতো সেদিন তুমিও ছিলে আমিও ছিলাম শুভ বৃষ্টির শুভ্রতায়
চলো ভিজি আজ শ্রাবণধারায় ,মেঘলা দিনে জলকেলির এই উৎসবে !
শ্রাবণ সিক্ততায়
রুদ্রনীল রায়চৌধুরী
সম্বিত ফিরে দাঁড়িয়েছি একা নিরালায়,
রিমঝিম বৃষ্টির সুর লহরী মনকে নাড়া দেয়_
বৃষ্টি সেতো আকাশের কান্না, বিশ্বাসের আকুলতা
জমানো কষ্টগুলো ব্যাকুলতায় ঝরে পড়া !

শ্রাবণ বরিষণে বলিতে এলাম আজ তপোবনে,
হে সখী মনে পড়ে কি সেদিনের কথা !
যেথা চলিলাম দু-জনে এক বাহুর কলতানে
বিজলীর আগমনে আবছা সঙ্গোপনে
ব্যাকুলতার ঢেউ ছিল তব মনে
বলিলাম কতো কথা হৃদয়ে হৃদ রেখে
ভালোবাসার বন্ধনে ভুলে গেছো কি তা ?

ভুলে গেছ কি ভোল নাই_
আজ জেনে কাজ নাই
বিরহ অনলে মুক্তির গান গাই
রিমঝিম ধ্বনিতে আমি অবোধ ভুলিতে যে চাই!
সুদূর গগণ হতে রাশি রাশি বরষন
আজি যখন আমাতে দিল দরশন
মনের গভীরে লুকানো যতো ব্যথা
সম্বিত ফিরে ভুলিয়াছি ততো কথা
পুলকিত মন করিল মন্থন স্মৃতিরও দোসর

আজি যদি চলে যায়_
সব কিছু ঘন বরষায়
নিয়ম মেনে হবে কি ব্যর্থ রোমন্থন!
জানালার আরশিতে হাত বাড়িয়ে ধরতে যাই_
কিছু বৃষ্টি ফোটা' মত বন্ধন...
ছিন্নভিন্ন করে দেয় মেঘের গর্জন !

হৃদয় আজ পুলকিত হয় দেখে শ্রাবণধারা
সব কিছু ক্ষোভ, হয়ে নির্লোভ করিতে পাগলপারা
ধরণীতে আজ ফুটিছে কোমল, উচ্ছ্বাসে অলক করবী
নবপল্লবে সাজিছে নিকেতন কষ্ট কমল হেরি
নিয়ে গেল আজ, আছে যতো লাজ, পূর্ণ করিল ধরণী।।

আমার ভালোবাসা আমার অহংকার
 -আব্দুল্লাহ্ আল জামি
ভরা বর্ষা মৌসুমে আমন ধান ক্ষেতে নৌকা ভেসে চলে
ধান গাছে মৃদু বাতাসের আলিঙ্গন
দোলে শাপলা-শালুক-ঢ্যাপের ফুল
ছলাৎ করে শব্দ তুলে জলে
মৎস্য নাকি ছিলো অন্যকিছু?

হৈ হুস, পোলো ঝাঁপিয়ে চলে
মাছ শিকার বিলের জলে
শিং মাছের কাঁটা বেধে হাতে
বিষের জ্বালা ভীষণ বাড়ে

দুরন্ত বখাটে শীর্ণকায় কালো বালকটি যেনো
কৈশোর ছেড়ে যৌবনে আগে বেড়ে যায়
অভিমানী মনটাও সাথে চলে ওর 
অট্টালিকার মাঝে যুবক হেঁটে চলে রাজপথ ধরে

বিছানায় শুয়ে জানালায় চাঁদ দেখে
জানালা ভেঙ্গে জ্যোৎস্না এসে ভর করে মনে
ভালোবাসা পেতে হোঁচট খেয়ে সে পড়ে নর্দমায়
অভিমানী মন শামুকের মতো যে গুটিয়ে যায়
তখন অহংকারী বলে ভ্রম হয়

যুবক তখন শুধু ভাবে –--
শৈশব থেকে দুর্বোধ্য অভিমানী মন যে আমার
অভিমানে অভিমানে কেটেছে জীবন
আমার ভালোবাসা আমার অভিমান
আমার ভালোবাসা আমার অহংকার


আঁধারি আষাঢ়ের আগমন
-খান রনক
আজ আকাশে আষাঢ়-আঁধারের আলিঙ্গন ;
বিরাগী বৃষ্টি বিসর্জন
বর্ষার প্রথম পশলায়,
ভেজা মাটির গন্ধ;
নিঃশ্বাসে ঝড় তুলে
কে আমি,কি আমি,এও যাই ভুলে
সুন্দরী এমন বৃষ্টি বর্ষায়
জং ধরা এই মন বুঝি জুড়ায়
গানের সুরে বৃষ্টির সাঁরাবেলা রিনঝিন;
তবে বর্ষার আগমনী বুঝে নিন
বর্ষার প্রথম এই দিন,
ফুরায় যেন সব খরতার ঋণ
বৃষ্টি,বন্যা,বানের জলে
তুমি বর্ষা কতো কারো মরণ
তবু বছর ঘুরে অপেক্ষায়,
করতে তোমায় বরন
বেহিসেবি আবেগ আর কতো দুঃস্বপ্নের বাস;
মন নামের এই শহুরে গ্রামে
তব কষ্ট, কান্নার, সব কীর্তন উড়াব আজ আষাঢ়ের আগমনে !

বৃষ্টি রিমিঝিমি রিমঝিম 
 -হেনরী ইকবাল
জ্যৈষ্ঠের প্রচণ্ড প্রখর তাপদাহও পালিয়েছিল তোমাদের ভেজা বাতাসে
বৃষ্টি তুমি নামবে বলে
সবুজ প্রাণে নামবে প্রাণের ঝর্ণাধারা
বৃষ্টি!তুমি কোন পাহাড়ের মেয়ে
বর্ষা,মেঘলা,কাজলা বালিকা
কোথায় থাকো তুমি?

দুপুররাতে ভর বর্ষণে চিলেকোঠার ঘরে বৃষ্টি ঝরে যাবে
অবিরাম 
ছন্দ ছন্দে

এক দিন বিকেলে বৃষ্টিতে
সাতটি রঙ্গে খুঁজে বেড়াব
আরো একটা অলস ময়ূর বৃষ্টির হাত
টিপ টিপ বৃষ্টি পড়বে বাইরে, আর মেঘের দল গর্জাবে
বৃষ্টির বেগ বাড়বে

অতঃপর------------
মুষলধারে বৃষ্টি নাবে....মুখরতা লয়ে
ভেজা মধ্যরাত পেরিয়ে চাঁদ দুলে যাচ্ছে ...
বৃষ্টি মেঘ, রিচুয়াল আর হলুদ কদমের
একফোঁটা বৃষ্টির জল আলতো ছোঁয়ায় মুগ্ধতা ভরছে
অপেক্ষায়

বৃষ্টি ঝরে..ঝরে...টুপটাপ..রিমঝিম
মনজুড়ে বৃষ্টি এলো,বৃষ্টি এলো
নির্মল আঁধারে ঢাকা কামনার বৃষ্টি
ছিটেফোঁটা বেদনার কৌটা পোরা টুপটাপ বৃষ্টি
বরষা দিনের প্রথম কদমের গন্ধ ছুঁয়ে
দুরন্ত এক বালক ...বৃষ্টি বিলাসী

আমার বৃষ্টি-দিন.
বৃষ্টি ভেজা সেই দিনগুলি মনে পড়ে
এক বৃষ্টি ভেজা সন্ধ্যায় এক গুচ্ছ কদম ফুল
সোনালি কদমের বৃষ্টি ভেজা চাহনি
মনতুলে

বাইরে ঝুম বৃষ্টি
অলস বাদলাদিনে মনে পরে ছেলেবেলার গান
বৃষ্টি হবে এমন ..
মতিচ্ছন্ন কবিতায়
বাদল দিনে মাধবীলতা, বেলি আর কদম ফুলে
কদম, কেয়া, করবী আর কেতকীতলে
অবিরাম ঝরলো ঝরঝর বৃষ্টি
বৃষ্টিতে ভিজে হলদে পাতারা
শিহরায়

বৃষ্টির ফোটা ঝরে,ভেজা কদমের পাতা শুদ্ধস্নানে
বৃষ্টি এলে মাঠগুলো জলে ভরে
থামে না মধুর বৃষ্টি
বয় অবিরল বৃষ্টি বারিধারা প্রহরজুড়ে

একদল মেঘ আকাশে উড়ে উড়ে হঠাৎ বৃষ্টি হয়ে ...
আবারো নাবে অনন্ত তৃষ্ণা লয়ে
অসম্ভব ইচ্ছে করে অঝোর ধারায় বৃষ্টিতে নামি ...
নামবো হয়তো...লিখছি বৃষ্টি নিয়ে

এইসব বর্ষণমুখর দিনে
বিষণ্ণ ঘরেও অন্যরকম বর্ষা নামে- উষ্ণ আর নোনা
চঞ্চলতায় প্রকৃতিরে মেনে

যেকোনো সময় আষাঢ়ে বৃষ্টি একপশলা ঝরে
মুষলধারে

বৃষ্টি ঝরে টুপটাপ
রিমিঝিমি রিমিঝিমি
রিমঝিম রিমঝিম
 
সেইসব গূঢ় কথা 
 –আলী রেজা
তর্জনী তুলে শাসিয়ে গেছে
জিভ কেটে নিবে
যদি পুনরায়
লিখি সেইসব গূঢ় কথা;
আমার সবকটি আঙুল
একেকটি ব্রেন-গান
মুহূর্তে উড়িয়ে দিতে পারে
ঈর্ষার সবুজ চাষবাস,
আমি শব্দ দিয়ে পাল্টে দেবো
বিবসনা শস্যের দিগন্ত
ব্রাশ ফায়ারে ঝাঁঝরা করে দেবো
কোলাহলের কুহকে ঢাকা
নিষ্ঠুর শহর,
ডুগডুগি বাজাব যানজটের
নরম নিতম্বে,
নিতম্বের অলৌকিক খাঁদে
ফোঁটা ফোঁটা স্বেদবিন্দু জমে
আছে গণিকার আয়েসি আলিঙ্গনে

আঙুল ছুঁয়ে গেছে নওল নক্ষত্র-
কাশবনে লোফালুফি করি নক্ষত্রের
কোমলতাগুলো নিয়ে;
আমার আঙুলের ছোঁয়ায়
তোমার চোখের পাতার কাঁপুনি
ঠোঁটের বিস্ফার
ছায়াভরা চুলের নিস্তরঙ্গ বিস্তার
সবকিছু চুপি চুপি শব্দ হয়ে যাবে

লিখে যাব সেইসব গূঢ় কথা
 
নৈর্ব্যক্তিক
  - সায়ক চক্রবর্তী
আমিত্ব ঘোচে না মগজ ধোলাই দিলেও,
পাতা কাটাকাটি - কলম পাল্টেও আমি এসে যায়
আমিকে সরাই কীভাবে যখন আমিই আমি !
আমার স্নায়ুতন্ত্রের মাথায় ক্রিমির মত সুড়সুড়ি -
আমিতেই এসে পড়ি অজান্তে তোমাদের সাথে
থেকেও সবাই হতে বাকী - কীভাবে হওয়া যায় ;
যখন সবার ঘরে আমাকে পাই না ! আমাকে
সরাই যখন - আমি আর আমাতে থাকি না
ঘুম ঘুম শান্ত - তুমিও টেনেছ কাছে চুপি চুপি
আমাকে - পাওনি আমাকে খুঁজে ; পেয়েছ
অতীত পচা রন্ধ্রে রন্ধ্রে - ভেবেছ এটাই আমি
আসলে আমিও হই সবার মতন - যেদিন
তোমার চোখে আমার জন্য দেখি ;অভিকর্ষ ভীষণ
অলিন্দ বরাবর - সবাই বলে ; ভালো আছো তো ?

কি করে আমাকে ছোঁবে
 -এলিজা আজাদ
হিংস্র হায়েনার মতো অন্ধকার এলো বিভীষিকার পিঠে চড়ে!
পশ্চিমের জ্বলন্ত আকাশ সদ্য ফোটা লাল গোলাপের রঙে
ছেয়ে গেলো!
মুহূর্তেই সে অন্ধকার মাটিতে আনল জংলী বেলি ফুলের গন্ধ!
রাতের ক্লান্ত স্বপ্ন এঁকে দিলো আমার চোখে!
যেমন অন্ধকার জ্বেলে দেয় কামনার কম্পিত শিখা কুমারীর দেহে!
বেলি ফুলের গন্ধে মাতাল দুরন্ত যুবক, এসো না কাছে এসো না
গাঢ় এই অন্ধকারে কি করে আমাকে ছোঁবে?
উঁচু পাহাড়ের ধূসর স্তব্ধতায় শান্ত আমি
সুদূর নির্জন দ্বীপের মতোই নিঃসঙ্গ , রাতের বুকে হারানো সূর্যের
মতোই, আমি মুক্তি চাই

কথোপকথন ! 

- সৌভিক দা'

  
: নতুন চাকরী কেমন লাগছে?
- একটা নিম্ন মধ্যবিত্ত ঘরের অপদার্থ সন্তানের কাছে
জীবনটা যেমন লাগা উচিত, নতুন চাকরীটা তেমনই লাগছে !

: আচ্ছা ! জীবনটাকে এমন জটিল করে দেখো কেন তুমি?
- জীবনটা বাস্তবিক পক্ষে এমনই বর্ষা !

যখন ১৩ নাম্বার বাসে ঝুলতে ঝুলতে
অফিস ফেরা লোকের ঘাম চিটচিটে শার্ট
               সাপটে থাকে বুকের ওপর,
যখন গন্তব্যে নেমে পাড়ি দিতে হয় আরো দূর গন্তব্যের খোঁজে,
আট আনা দামের সিগারেট ফুকে বাতাসে ওড়াতে হয় হতাশার ধোয়া
আর মিথ্যের অংকটা বাড়িয়ে বলতে হয় বেতনের দাম
এবং এতদসত্বেও যখন বলতে হয় ভাল আছি, দিব্যি বেঁচে আছি সুন্দর !
তখন জীবনটা এমনই !

জীবনটা এমনই যখন
বর্ষা তুমি বৃষ্টি হয়ে ঝরে যাবে অন্য কোন ফসলের মাঠে
যখন চকচকে কোন যন্ত্র-প্রকৌশলীর কাছে সম্প্রদান কারকে বিভক্ত হবে
                                              তোমার সুযোগ-সন্ধানী পিতা !

                                 - তখন জীবনটা কেমন হওয়া উচিত বর্ষা?
 কী হোল ! চুপ করে আছো কেন?
কথা বলো !!