ঢাকা,মঙ্গলবার , ২৪ জুলাই ২০১২, ৯ শ্রাবণ ১৪১৯,১৩ তম সংখ্যা ।

জননন্দিত বরেণ্য লেখক হুমায়ূন আহমেদকে 
স্মরন করি বিনম্র শ্রদ্বায় ও ভালোবাসায়।
আমরা তার আত্নার শান্তি কামনা করি।
১৩ তম সংখ্যায় আছে মোট ১৩টি কবিতা, লিখেছেন-হেনরী ইকবাল,ইন্দ্রানী সরকার,শামীম পারভেজ,সুবীর সরকার,রোকসানা লেইস,তাসমিনা জামান,কবির য়াহমদ,অবিবেচক দেব নাথ,আলী প্রাণ,তন্ময় কর্মকার,শ্রেয়া দলুই,খান রনক এবং আহম্মেদ রফিক 

সৎ
                                                     -হেনরী ইকবাল
 'সৎ'
সত্যে অটল অবিচল
নিরপেক্ষ নিষ্কলঙ্ক
যুক্তিতর্কে সঠিক
চির কল্যাণকামী
ভীষণ মানবিক

'
সৎ'
সত্যিকারের দেশপ্রেমিক
নির্লোভী শান্তিকামী
চিরসবুজ সংশয়হীন
সহমর্মী ত্যাগী

ভ্রান্তিহীন পথে তার বিস্তার
চলার অনেক পথে
সত্যের সুকঠোর বন্ধুর কন্টকময় পথটাই তার

সৎ সত্যের সন্ধানে সব পথ ঘুরে এসে
অসহায় উদ্ধারহীন সুগভীর খাদে তীব্র ব্যাকুলতার শেষে
হেনরী ইকবাল বলে-
অসংখ্য লোভ লিপ্সার ধ্যানে-প্রাণে প্রকৃত সত্তার বিকৃত তান
সৎ সত্যের অসংখ্য নৌকা আজ ভবহ্রদে ভাসমান
সৎ সত্যের সন্ধানে শুধু কতক মনের
নিশ্বাসে-প্রশ্বাসে ইন্দ্রিয়ের কানে কানে ধাবমান
মিথ্যা-অন্ধকার ভণিতার শেকল ছেঁড়ার গান
 
বেদুইন মেয়ে

ইন্দ্রানী সরকার

বেদুইন মেয়ে হেঁটে চলে যায়
নরম পা দুটি পুড়ে বালুকায় |
শুধু খাঁ খাঁ রোদ ধূ ধূ মরুভূমি
ধন্য সে যে আজ নারীর পদ চুমি ||
আলুথালু বেশ, রুখুশুখু চুল
ঘাগরি লুটায়, ঝরে খোঁপার ফুল |
ধ্যাবড়ান টিপ, ধ্যাবড়ান কাজল
রুনুঝুনু বাজে না পায়ের দুটি মল ||
প্রখর রৌদ্রে মুখ তার রাঙা
ঘাড়ের ওপর খোঁপাটি আছে ভাঙা |
কুসুমিত দেহ অনাদরে ম্লান
হেঁটে চলে মেয়ে হাতে নিয়ে প্রাণ ||
দয়িত বুঝি গেছে এই পথে একা
পায়ের চিহ্ন তার বালুপথে আঁকা ||
চলে মেয়ে হেঁটে চিহ্ন আঁকা পথে
চোখের জল ঝরে গভীর বেদনাতে ||
পাবে কি সে খুঁজে মনের বঁধুয়ারে
যে গেছে হারিয়ে বালুকার পাহাড়ে ?
সহসা মেয়ে বালিতে পড়ে লুটায়ে
মরুভূমির বুকের তপ্ত আশ্রয়ে ||

 আলিঙ্গনে

-
শামীম পারভেজ

মাটি আর মেঠো পথের
চুম্বক স্পর্শ চরণ ভেদ করে
ছড়িয়ে দেয় সারা দেহে ,
কি প্রশান্তি এতে !
সবুজ আর সবুজ বাড়ায়
নয়নের দৃষ্টি,
কি এক অপূর্ব সৃষ্টি !
নীল গগনের মায়াবী রুপ ,
রবি আর শুভ্র মেঘের লুকোচুরি খেলা,
কখনো মেঘের অশ্রু ঝরা ,
মন কেড়ে নেয় সাঁরাবেলা
মায়া মমতার গ্রাম,
চায়না ছেড়ে যেতে মনে ,
জড়িয়ে থাকা সেই
সুখ দুঃখের আলিঙ্গনে

বেহালাবাদক
 
সুবীর সরকার


সেফটিপিন কুড়িয়ে আনছেন বেহালাবাদক
পুরনো গন্ধের নিজস্বতায়
ওভারব্রিজ
ভূমিকা বলতে ছিটকে ওঠা জলের কথা
হলঘর,উপপাদ্য পেরিয়ে চলে যাচ্ছেন
বেহালাবাদক

স্মৃতি ক্যানভাস

-রোকসানা লেইস

মনে পড়ে ?
একদিন আকাশ আঁধার হয়ে তুমুল ঝড় উঠেছিল?
আমাদের ঘিরে উড়তে থাকা প্রজাপতি আর
ছুটে বেড়ানো কাঠবিড়ালি হুটোপুটি লুকিয়ে পরল মেঘগর্জনে
বিদ্যুতের সোনালি ঝালর-চমক আকাশ জুড়ে
নীল জল ধূসর বরণ রূপালী ঝিলিকে উচ্চাঙ্গ নৃত্যের ছন্দ তুলেছিল।
শুধু আমরা দুজন সবুজ ঘাসে বাতাসের ঝাপটায় বসে
ডুবে যাচ্ছিলাম চেরীফুলের সাদা গোলাপি পাপড়িতে,
দেখছিলাম অপরূপ সুন্দরের ক্যাম্পাস আর ধুয়ে যাচ্ছিলাম বৃষ্টিধারায়।
আমাদের একবারো উঠে যেতে ইচ্ছা করেনি
আমরা ভিজেছিলাম বিকেল জুড়ে সবুজ ঘাসের গালিচা বনে।
রক্তরাগ সূর্য সন্ধ্যা ভেলায় সরোদ আর ভায়োলিনের কম্পোজ
ইথার কাঁপনে...জেগেছিল রংধনু
মনে আছে?
একদিন লং ড্রাইভে হারিয়ে যেতে যেতে
বৃষ্টি মাথায় থেমেছিলাম দূর গায়ের এক কফিশপে
কাঁচ ঘেরা কোনার ছোট্ট টেবিলে বসে সবুজের স্নান দেখে
আনমনা আমরা বসে ছিলাম গালে গাল ঠেকিয়ে
বয়সের ভারে নুয়ে যাওয়া বৃদ্ধা থমকে
দেখছিল আমাদের মুগ্ধ দৃষ্টিতে আর বলেছিল,
সো সুইট.. নাইস ক্যানভাস
শিল্পীর আঁকা এক ছবি হয়েছিলাম আমরা।
প্রকৃতিই পারে এমন রঙের উপর রঙ ছড়াতে
ক্যানভাসের ভিতর ক্যানভাস আঁকতে মূর্ত শিল্প
হৃদয়ের জানালা খুলে দিতে।

যদি পারো 
-তাসমিনা জামান
দু চারটা প্রেমের কথা
কতোগুলো ভালবাসার মুহূর্ত
কি হবে , কিইবা করব,
দিতে যদি চাও কিছু আমায়
তবে পাশাপাশি চলার নিশ্চয়তা দাও
কাছাকাছি থাকার নিশ্চয়তা দাও
সুখ দুঃখ ভাগ করে নিতে দিও
আর নিজেও ভাগ করে নিও

হটাকরে মনে হল
আমি যেন অরক্ষিত
কেন মনে হল জানিনা,
মনে হল আমি যেন তোমার
জীবনে সৃতি হয়ে যাচ্ছি
আমার ভালবাসা কি শক্তিহীন-
আমি তো এমন না, তবুও কেন
এই অনিশ্চয়তা আমাকে কুরে কুরে খাচ্ছে,
তাহলে কি আমি দুর্বল হয়ে যাচ্ছি,
জানিনা ,তবে আমি চাই তুমি যদি পারো -
দিয়ো- চোখে চোখ রেখে হারিয়ে যেতে
যদি পারো দিয়ো চুপচাপ পাশাপাশি
কোন কথা না বলেও সব বলে যাওয়া
সেই শেষ হয়ে যাওয়া দিনের গোধূলি লগ্ন।

যদি পার দিয়ো ,না পারলেও বুঝতে দিয়োনা
পারবে দিতে এই ভেবে যেন পার হয়ে যায় জীবন
ধুলো জমতে দিয়োনা কখনো আমাদের ভালবাসায়
রাগ অনুরাগে ভরিয়ে রেখ জীবনের পাতায় পাতায়।।

গোরস্থানের ভাষা

কবির য়াহমদ

গোরস্থানে শুয়ে আছে জ্ঞাতিগোষ্ঠী
তারা নৃ-তাত্ত্বিকতা ভেদে সংজ্ঞায়িত হয় কালে কালে
যদিও কভু শেখেনি নৃ-বিজ্ঞানের ছলাকলা।
একটা ভোগবাদী চামচ উঠে আসে ধীরে
অধর ছুঁয়ে যায় হিম হাতে; কালো সে হাত
দিঘল কালো ঠিক ঠিক মজা পুকুরের মতো পানায় পানায় পূর্ণ,
একটা নক্ষত্র হেলে পড়ে ধীরে জ্যোতির্বিদদের ঘুম হারাম করে
তাদের মাথার ঘিলুতে মোচড় দিয়ে উঠে আমাদের একান্নবর্তী সময়ে
গোরস্থানে ঘাস গজায়। একটা গরু দৌড় দেয় প্রাণপণে
বেকুব গরু, মানুষ সমাজে থেকে থেকেও এতদিনে ভাষা শেখেনি মানুষের
দৌড়ায়, দৌড়ক্ষনে পিছন দেখেনা। স্বভাব সময়ে অভুক্ত থাকে বেলা
গোরস্থানে বেড়ে উঠা ঘাস আরো দীঘল হয় রমণীর কালো কেশের সাথে
ঘাস বাড়ে, কেশ বাড়ে, দৌড়ায় বেকুব গরু, গোরবাসীরা বুড়ো হতে থাকে
গোরস্থানের আলগা দরজায় টোকা মারেনা কেউ এমনকি নিজেরাও
গোরবাসী ভুলে যায় তাদের অতীত, গোরে শুয়ে শুয়ে গোরকল্পনা
ভুলে যায় একদিন তারাও মানুষ ছিলো আর মানুষ শেখেনি কভু গোরস্থানের ভাষা।

পৃথিবীর পাপ প্রায়শ্চিত্ত

অবিবেচক দেব নাথ

আশ্রিত আমরা নরলোকে!
নোংরা নখ চিবুই,
বিশেষণে মিলাই ডানা
পালক পবন ভিবুই।

গদ্যশৈলীর শৃঙ্খল ভাঙ্গে
কাব্য কর্কশ প্রহসনে,
ঘন-সবুজ পল্লববিহার
পাংশু মেঘের আবরণে।

চিরাচরিত অপাদান রীতি
ভাঙ্গছে সকল নটে!
মৌনমিছিল দলে-দলে
অস্তিত্ব রক্ষার তটে।

দীঘলকালো চুলের মূলে
পড়ছে স্বপ্ন খাঁজ
উলঙ্গ নর-নারীর
মিলছে বুকের ভাঁজ!

একূল ওকূল দুকূল গেলে
কলঙ্ক থাকে কি?
বৈরী ঝড়ে ডাঙ্গা ভাসে
সূর্যালোক মেকি।

প্রহসন তাই দিকে-দিকে
মরি লাজ-লজ্জায়!
লজ্জা আজ নষ্ট-গহ্বরে
গড়ায় সাজ-সজ্জা।

সব দেখেছি, সব ভেবেছি
জেনেছি সবের ইতিবৃত্ত
এই হলো বিশোধনে
পৃথিবীর পাপ প্রায়শ্চিত্ত।

গৃহ ত্যাগী 
-আলী প্রাণ
ঘরের ছাউনি খেয়েছে শীত-তাপ-ঝড়-বৃষ্টি
ভাগাভাগি করের , কাঠ খেয়েছে ঘুণে,
মাকড়সা জাল বুনেছে ঘর জুড়ে, ভিটা নিলো
পিপীলিকার দল ,ইঁদুর-ছানা সর্বনাশী বানে

মানুষ গুলো দগ্ধ হল দাহে ,কিংবা মনের
সঙ্গোপনে জমে থাকা কোন জ্বালায়,
ওরা দেশত্যাগী হল ,পড়শির পীড়ায়
কিংবা নিঃস্ব বলে অথবা স্বজনের অবহেলায়

আত্ম-দর্পণ 
তন্ময় কর্মকার
.
স্নেহদৌর্বল্যে অঙ্গীকারবদ্ধ থাকতে
ব্যতিক্রমী মন ইচ্ছাদ্রোহী হোল কই!
যে সূক্ষ্ম নৈসর্গিক সুখাবেশ অক্লেশে উজাড় করো
তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ, ধর্ম করেছি।
.
আসলে বিনিময় প্রথা উঠে গেছে, না আছে
ভাবতে ভাবতে সকাল থেকে বিকেল যায়,
রাত্রির কথা, না বলাই ভালো, ফুরসত নেই--
দিনের দিনগত পাপক্ষয় পর্যালোচনাতে
ক্লান্ত আত্ম চিন্তামুক্তির পথ খোঁজে,
.
মশগুল চোখ, স্বাচ্ছন্দ্যের অগ্রগতির নেশায়।
আর সময় ঠিক আঙ্গুল ধরে নিয়ে চলেছে
সেই আদিম পশুত্বের রাজত্বে। দাম তো নেবেই
একপেশে সম্ভোগ, কাল সেজেছে কাল।
 
অবচেতনে

শ্রেয়া দলুই

স্বপ্নে ভেজা ঢেউ ছেড়ে উঠে আসে
শান্তি সাম্পান...আমি তুমি ভেসে যাই
মুখোশের ক্লেশ মেখে রোদ্দুর হতে
জীবন ছেড়ে যায় হাত বারবার
সে তো অন্ধকার ভালবেসেছিল!!!
সরীসৃপ চেতনায় শুধু দংশনের আকর্ষণ
রক্তের শীতলতায় বিষের উন্মাদনা
সেই নেশা ছেড়ে মৃত্যুমুখী সুখপরি
আমি শুয়ে সিক্ত বালু তটে ...একা !!!
 
 উপোসী ভালবাসা

-খান রনক
 রোমীয় জুলিয়েটের রুমানশে হে প্রেম, তুমি আজো সিক্ত নও....
কষ্টই কি এ ভালবাসার এক মাত্র ভূজ....
ভালবাসার উপোস ঘরে,
অনুভূতিগুলো সব মাথা-ঠুক্‌রে মরে...
অঘুম রাতের শেষে যেখানে অস্থিরতার দীর্ঘ-শ্বাস....
সেখানেই তোর বসবাস....
উপোসী ভালবাসার পিয়াসী এ মন....
হাজার ত্যাগের বিনিময়ে করবে তরে আপন-জন...
তাই ভিখারী ভালবাসার শেষ প্রার্থনায়...
এক-টিবার ভালবাসিস...
যাদুর ঐ হাতে দুসশপ্ন-গুলো মুছেদিস...
অপেক্ষায় এখনো ভুর..
জানি কাটবেনা এ ভালবাসার ঘুর...
তাই উপোসী ভালবাসা,
উপোসীই থাক্‌....!

প্রশ্ন করলাম

-আহম্মেদ রফিক

প্রশ্ন করলাম চাঁদ কে
প্রশ্ন করলাম ফুলের সুবাস কে
প্রশ্ন করলাম বিকশিত মেধা কে

পূর্ণিমা দিনে চাঁদ আমাকে বলে দিল
দেখো না আমি কেমন শীর্ণকায় ছিলাম
আবার একদিন খেজুরের বাঁকা ডালের মত
শুকিয়ে যাব

ফুলের সুবাস জবাব দিল
আমি তোমার বুকে জড়িয়ে যেতে পারি
যদি- তুমিও ফুলের মত হও আর
বিশ্বাসে কাটা না পড়ে যাও

বিকশিত মেধা আমাকে জানিয়ে দিল
আমি মানুষের মাথায়
হয় স্বর্গ নয়তো নরকের বীজ বুনি __
তুমি কি জানো নি ?

চাঁদ জানিয়ে দিল
ভরা পূর্ণিমা হয়ে থাকার বাসনা থাকলেও
আমি পারি না ...........

ফুলের সুবাস জানিয়ে দিল
দেখ সুবাসিত মানুষ কারা ?

আর বিকশিত মেধা আমাকে জানিয়ে দিল
তুমি চোখ বন্ধ করে জড় বস্তুর নেশায়
নিজেকে অপমানিত করো না