ঢাকা, শনিবার, ২৩ মার্চ ২০১৩, ৯ চৈত্র ১৪১৯,৩০তম সংখ্যা।

প্রয়াত রাস্ট্রপতি মোঃজিল্লুর বহমান এর মৃত্যুতে আমরা গভীর ভাবে শোকাহত,আমরা তার বিদেহী আত্নার মাগফেরাত কামনা করি।

৩০তম সংখ্যায় আছে মোট ২০টি কবিতা,লিখেছেন- নীল আলো,মৌসুমী সেন,শর্মিষ্ঠা ঘোষ,রোখশানা রফিক,ইন্দ্রানী সরকার,সৌমিত্র ঘোষ,জগলুল হায়দার,সাঈদা ফেরদৌসী মিমি,যাযাবর জীবন,জয়তি ভট্রাচার্য্য,রূম্পা শিমুল,জাকিয়া জেসমিন,লাবণ্য কান্তা,মর্তুজা হাসান সৈকত,জুলফিকার শাহাদাৎ,শামীম পারভেজ,
কানিজ ফাতেমা রুমা,আহম্মেদ রফিক,ফেরদৌস হাসান খান এবং মোঃ সরোয়ার জাহান ।

মুক্ত ডানা

নীল আলো


সে আছে দিগন্তে যেখানে গিয়ে মিলেছে মুক্তডানা
সাগর আকাশ যে দিকেই তাকাই সব এক পথ,
বাতাশে নূপূর বাঝায়ে দেখিয়ে দেয় ঠিকানা।।

পাহাড়ের বুকে ঝরনা নামে যেন বেদনার বীন
প্রানের তাপে ভেসে আছে কোথায় অপূর্ব এক সপ্নীল ।।
বিষাদে ডুবিয়া অন্ধাআত্না জানেনা এখন রাত দিন ।।

নীল জ্যোছনায় দিগন্তে মিলি আছি নিথর মায়ায়
খেয়ালের খে্যা পার হয়ে দেখি এক আগুনের নদী,
তবু ছায়া ফেলে যায় নক্ষত্রের পথ মনের আশায় ।।

দৃষ্টির আকুলতা্য খুঁজিব তারে শত যোজন,
কোন পথে পাব প্রকৃতির দূর্নিপাকে জানে কি সে
সপ্নের সুধায় নিষ্ঠুরতায় এ জীবন দিব বিসর্জন ।।


কেউ কথা রাখেনি

মৌসুমী সেন


জীবনানন্দ তোমার সুরঞ্জনা আজ
পথভ্রষ্ট হয়ে তোমায় খুঁজছে;
তোমায় খুঁজতে খুঁজতে তার দেখা হলো
বনলতার সনে, কথা হলো অতি গোপনে ।

তুমি সুরঞ্জনাকে বলেছিলে যেন সে
কথা না বলে অন্য কোনো যুবকের সনে,
কিন্তু জীবন বাবু তুমি তো কথা রাখলে না !
তোমার প্রেমময় কবিতার ভাণ্ডারে দেখো
সুরঞ্জনার ঠাঁই ছিল নিমিত্তের জন্য ।

তোমার আহ্বানে সুরঞ্জনা এসেছে ফিরে বার বার
তোমার বুকেতে ঠাঁই নিবারে—
ধান সিঁড়ির প্রতিটি কূলভাঙা কূল তার সাক্ষী ।

তুমি কত ব্যাকুলতায় সামলে রেখেছো তাকে
বার বার শত প্রশ্নে বিদ্ধ করে;
সুরঞ্জনা কি কথা তাহারি সঙ্গে ?
তুমি যেও না, আর ফিরে চেও না ঐ যুবকের পানে ।

আকাশে বাতাসে তার প্রেমে তুমি ছড়িয়ে দিও না,
দিও না সুরঞ্জনা তুমি মৃত্তিকাসম আজ;
তার কথা ভেবে লুটিয়ে নিও না যেন—
পড়ে থাকা পথের সেই বুনো ঘাস ।

অথচ জানো, তুমি হে প্রেমের কবি হারিয়ে দিলে
তোমার সে সুরঞ্জনাকেই !
বনলতার প্রেমে পড়ে প্রেমগাথা কাব্যে
তুমি জড়িয়ে নিলে নিজেকেই ।
সুরঞ্জনারা বড় অভিমানী হয়ে খুঁজে ফেরে—
তোমার বনলতার পুরো রহস্যময়ীর রূপগাথায়,
কষ্টের প্রেমে ভিজে সুরঞ্জনা বুক বাঁধে পাথরে ।।


ফালতু 

শর্মিষ্ঠা ঘোষ


সবার কি আর অলস দুপুর বিলাস জোটে ?
ভাতঘুম আর গল্পগাছার নটেগাছ ?
ফাগুন জুড়ে উড়ুক যতই ধুলোর চিঠি
দুপুর আমার আদরখেকো জল চেনে না

আমার কোন গনগনে রাত অসুখ নেই
নীলনখরে জমিন সেঁচা ভাদ্রমাস
লাভবার্ডের চটক মস্তি ফ্ল্যাশব্যাকে
কান্না রঙের ছাঁচ ভেঙেছে আর্দ্র দিন

কপালপোড়ার প্রেমপিরীতের নাগর নেই
ছদ্মবেশী লোগো ঝোলে এনট্রান্সে
যখন যেমন তখন তেমন দিন সাজাই
ফালতু এসব ভড়ং দেখে লোক হাসে


সন্ধ্যামালতী

রোখশানা রফিক

ফসল মাড়াই হয়ে গেলে ধু-ধু রিক্তমাঠে বিকেলের
অস্তগামী সূর্যের বিষন্নতা। নীলকন্ঠী পাখির
ডাকে আরও বিষণ্ণ চরাচর।
থমথমে মেঘের গম্ভীর বিস্তার, হুতাশনে
বয় হাওয়া। একলা রাখাল ক্লান্তপায়ে
ফিরে যায় দূর গাঁয়ের পানে।

ধোঁয়া ওঠা গরম ভাতের সুবাসে লোভাতুর
ঘ্রাণ শোঁকে রোয়া ওঠা কুকুর। আনমনে
বিড় বিড় বকে রমিজ পাগল, বাতাসের সাথে
কানা কানি তার। মোয়াজ্জীনের আযানের সুললিত
স্বর কেঁপে কেঁপে ছুঁয়ে যায় নদীতীরের বটমূল,
বয়ে যায় প্রার্থনার সময়।

বিষণ্ণ সন্ধ্যার লালিমায়
হৃদয়ের চাপ চাপ কষ্ট
নীরব আকুতি হয়ে ফুটে ওঠে বনপ্রান্তরে
সন্ধ্যামালতীর ঝাড়ে ঝাড়ে।।


তুমি কি আছো ?

ইন্দ্রানী সরকার


তুমি কি আছো ?
ডেকে উঠি আমি
মনের সমান্তরালে
বিভাজিত রেখায়
তোমার স্পর্শ |
আলো আঁধারি
আঁচলের ভাঁজে
লুকিয়ে রাখা
নীল বেদনা আর
তোমার হর্ষ |
ঝর্নার জলে
গা ভিজিয়েছি
অলীক স্বপ্নে
অনেক কেঁদেছি
একশত বর্ষ |
নির্বিকার ঘুমে
আঁচলে জড়িয়ে
উদাসীন মেঘ
আমার ঠোঁটে
হাসি বিমর্ষ ||


অসমান্তরাল

সৌমিত্র ঘোষ

বলেছিলাম হাঁটব, সমান্তরালে গন্তব্যহীন পথে ।
খুঁজেছিলে গন্তব্য, আমি অনন্তে ।
পথ হেঁটেছি, পাথর সাজানো বন্ধুর পথে,
পথ হেঁটেছি, কণ্টক সজ্জিত গহন অরণ্যে ।
অক্লান্ত পদব্রজে রক্ত ঝরা পায়ে অবাস্তবে ।
পথ যে অসীম ! আবর্তিত গোলকধাঁধা,
গন্তব্যহীন পথে ছিলাম সমান্তরাল ।
কোথায় যেন ছিল ঠিকানা তোমার,
বিশ্রামের ঠিকানা ক্লান্তির শেষে ।
হাতে নেই হাত, সম্বিতে আমি শুধু সরলরেখা,
ফিরে যাই পশ্চাতে, তোমার পায়ের ছাপ গুনে গুনে ।
বলেছিলাম হাঁটব, সমান্তরালে গন্তব্যহীন পথে,
হাঁটছি একাকী, গন্তব্যে সরলরেখায় ।
ক্লান্ত, তৃষ্ণার্ত খুঁজি বিশ্রামের কোনো গন্তব্য ।


সঞ্চারপথ

জগলুল হায়দার

আমি জ্যামিতি পড়ে জেনেছি
দুইটি নির্দিষ্ট বিন্দু থেকে সমদূরবর্তী কোনো বিন্দুর সঞ্চারপথ
উক্ত বিন্দুদ্বয়ের সংযোজক রেখাংশের সমদ্বিখণ্ডক ।

আমি ভাবলাম বিন্দুটি তবে কে?
তুমি বললে- ঈশ্বর অথবা অস্তিত্ব
আবার বললে ইতিহাস কিম্বা সভ্যতা
যার মাঝখানে আমি তুমি
আমরা সবাই সমদ্বিখণ্ডিত
লম্বমান রেখার দু'পাশে;

মানে রেখাটা আর স্রেফ রেখা নয়
ওটা এখন অলঙ্ঘনীয় প্রাচীর
তোমার আমার- আমাদের মধ্যিখানে;
এরকম একটা অনুসিদ্ধান্ত যখন প্রায় নিয়েই ফেলেছি
তখন গোটা প্রসঙ্গের মোড় ঘুরিয়ে তুমি বললে-
এই আমি তুমি
অথবা আমার তোমার
এসব শব্দ-ধ্বনির মৌলিক তাৎপর্য কী?

আমি বললাম কি আজিব!
ইউক্লিডের পৃথিবীতে তুমি ব্রুনো কিম্বা কোপার্নিকাসকে প্রতিপাদ্য মানছো?
বারনারড শ'য়ের সংশয় মোচনে
পিথাগোরাসের তত্ত্বের করণীয় তুমি ঝালিয়ে দেখতে চাও?
অথচ নিতশেকে সাইডে ফেলে আমি তো বেশ আগেই
ইমানুয়েল কান্টের সংজ্ঞায় হাজীর হয়েছি,
তারপরও জানি, সবাই সমদূরবর্তী বিন্দুর সঞ্চারপথে
সমদ্বিখণ্ডিত হয়ে আছি বারবার,
বিভাজিত হয়ে আছি আমার মধ্যে আমিত্বে
খোদ নিজের মধ্যেই দুটি বিন্দুতে।

আধুনিকতার দু' দুটো মেটানেরেটিভের শেষোক্ত
গুরু হেগেলের দান্দিকতার ভাবে,
মাথা তোলে শিষ্য মার্ক্সের আরাধ্য বস্তু
অর্ধাংশ হেগেল অর্ধাংশ মার্ক্স
তবু আধুনিকতার ঠোঁটে দু দুটো বিশ্বযুদ্ধের
রক্তচুম্বনের পষ্ট ছাপ!
নাগাসাকি- হিরোশিমার আণবিক আহাজারিতে
ভেসে যায় রোমান্টিসিজমের শিল্প- প্রকরণ।

আর অই সঞ্চারপথেই ফিরে আসে সম্বিত
আমকেও ভাবায় গ্রাটা গ্রামস্কি
একবাল আহমেদ, রবার্ট ফিস্ক, নোয়াম চামস্কি
উস্কে যায় এডওয়ার্ড সাইদের প্রাচ্য ভাবনা;
হাতে ওঠে আসে ইতিহাসের নয়া ব্যাখ্যা ' ওরিয়েন্টাল'।
প্রাচীর টপকে পৌঁছে যাই ত্রয়োদশ শতকের খোরাসানে
পোঁছে যাই রুমির প্রেমের বাগানে।
আমার রিডিং টেবিলে চামস্কির 'গণমাধ্যমের চরিত্র' এর পাশেই
যত্নে পুষে রাখি প্রেমের প্রসূন দু' খণ্ড মসনবি
আর রুমির মতোই আউরে যাই-
'I am a child of love
I have come only to speak of love.'


ফালগুনবাক্য

সাঈদা ফেরদৌসী মিমি


এখন মঞ্জরি ফুটছে,
অচেনা সৌরভের সাথে
নিমফুল;
পবিত্র প্রশাখা গ'লে
রোগমুক্তির বাতাস ।
ফাল্গুনের কিছু নিজস্ব বাক্য থাকে,
যেমন: 'আমি তোমাকে ভালোবাসি'
কিংবা 'আমরা আধেক থেকে সম্পূর্ণ ।

# ছিঁড়ে ফেলি

ছিঁড়ে ফেলি কিছু কিছু ছবি,
ছিঁড়ে যায় কিছু কিছু সুর,
কখনো গুমরে কাঁদে একলা সেতার ।
কিছু ঋণ শোধ করে হাঁটি,
গিলে খাই কিছু ভুল, পাপ !
আমার নীরব কথা, তোমার বিস্তার ।
কিছু পণ ভাঙ্গি, অতঃপর
কিছু পণ করি সেজদায়,
প্রভু জানে? বাসনার দাহ্য প্লাবন ?
 
# স্বর্গনহর

প্লাবনের শেষ : নোঙরের
দড়াদড়ি, নূহের অলৌকিক
সাম্পান| গোপনের অন্তরাল,
খসে পড়ে হীরের চাঁদোয়া |
রুপারোদ, জিভ ছোঁয়া জন্মমুল,
উৎসব, অধীরতা,
ঢালের গভীরে জাগে স্বর্গনহর|


ওপর ওয়ালার আরাধনা

যাযাবর জীবন


মসজিদে আযানের ধ্বনি
অজুহাত হয়ে রয় শুধু একটু পানি
ওজু ছাড়া নামাজ হয় কিভাবে?

মন্দিরে পূজারী অপেক্ষার প্রহর গোনে
ভক্তের দেখা নেই দূর দূর পানে
প্রাসাদ গড়ায় ভগবানের থালায়।

গির্জার ঘণ্টি ঢং ঢং বাজে
আজ ছুটির দিন, বেড়াতে যে যাবে
পরের সপ্তাহটা না হয় চার্চের জন্য থাকলো।
মনুষ্য সমাজের বড্ড সুখের সময় কাটছে আজকাল
আল্লাহ্, ঈশ্বর কিংবা ভগবান
এখনই কি প্রয়োজন তাঁকে করার স্মরণ
মরার এখনো ঢের বাকি আছে
যাক না আরো কটা দিন
বুড়ো-কালে একবারে শুধিয়া নিব তাঁর ঋণ
তাঁর পায়ে মাথা ঠুকে;
ওপর ওয়ালা দূর থেকে দেখে
তাঁর সৃষ্টির লীলা মুচকি হেসে।

সময় ঘড়ি বিগড়ে যায় হঠাৎই
সুস্থির জীবনে বিপর্যয় নানামুখী
অস্থির সময়, অস্থির মানুষ, অন্ধকার অনির্বাণ
হে আল্লাহ্ , ও ঈশ্বর, হায় ভগবান
মাথা ঠুকি তোর পায়ে তোকেই প্রণাম
দয়া কর প্রভু মোরে এবারের মত
ক্ষম হে অপরাধ করেছি যত
কর আমায় উদ্ধার অন্ধকার হতে
ধর্মের চর্চায় রই মোরা মেতে
ওপর ওয়ালা দূর থেকে দেখে
মুচকি হাসির করুণাধারায়
ভক্তের দুর্দিন দূর হয়ে যায়।

সময় গড়ায়
সময় গড়ায়
আবার সুদিন ফিরে আসে ধরায়
সময় ঘড়ির কাঁটা সুখে বয়ে যায়
ওপর ওয়ালা ভক্তের দিকে চায়
মুচকি হেসে।

ভক্ত-গন অজুহাতের ধ্বজা তোলে
আজ নয় কাল, আবার সময় হলে
দেখা হবে নিশ্চিত ঐ ওপর ওয়ালার সাথে
আবার কখনো দুর্দিন এলে......
ক্রমশ......
চলতেই থাকে
ওপর ওয়ালা দূর কোথাও বসে মুচকি হাসে
তার সৃষ্টির সেরা জীবের পানে চেয়ে।


কথাগুলো ঘুমিয়ে থাকে

জয়তি ভট্রাচার্য্য


আমার মনের গহন কোণে,
গভীর অবচেতন কোণে
লুকিয়ে থাকা, ঘুমিয়ে থাকা
সুখের কথা,কাঁটা হয়ে বিঁধে
থাকা, ব্যথায় ভেজা দুখের
কথা,চুপকথা হয়ে আনমনা
সব সুর ভাঁজে। ললিত সুরে,
বেহাগ সুরে,কালের কোলে
ঘুমিয়ে পড়া দীপক সুরে সুর
ভাঁজে,তাও কয়না কথা,
শব্দমুখর হয়না তারা,ঘুমিয়ে
থাকে শান্ত হয়ে,মাঝেমাঝে
পাশ ফিরে শোয়,নড়েচড়ে,
ফিসফিসিয়ে কি যে বলে,
যায়না শোনা,ঘুমিয়ে পড়ে,
কখন যেন ঘুমিয়ে পড়ে,
আমার বুকেই বাস করে,
তাও কয়না কথা আমার
সাথে,মাঝেমাঝে পাশ ফিরে
শোয়,আবার কখন ঘুমিয়ে পড়ে ।।


অনির্বাণ

রূম্পা শিমুল


আম্র কাননে কঙ্খ বসিয়া
ডাকিতেছে অনির্বাণ
কি-বা শুভ কি-বা অশুভ
বুঝি না এই ক্ষণ ।

সমীরণ বহে মনের আমেজে
কৃষ্ণ চুড়া পাতা করে শন শন
গহীনে যেন ডেকে উঠে জেগে
হৃদয়ের গুঞ্জন ।

শুধায় তারে ওহে কঙ্খ
ডাকিস কেন বারে বারে
কেমন বার্তা বহন করে আনলি
জীবন পারাবারে ।


“স্বপ্নে দেখা, স্বপ্ন বোনা ‘তুই’, এখন আমার”

জাকিয়া জেসমিন

ত্রিশটি বসন্ত কোকিলের গুঞ্জনে সুর মিলিয়ে তুলেছি সুর...
“বন্ধু একদিন আসবি”, এই কন্ঠসুধায় নিমজ্জিত হতে তুই!
বসন্ত-বৈশাখে শাড়ি জড়িয়ে এই তনু কায়ায় দূরের অজানা তোকে
খুঁজে ফিরেছি হাজারও তরুণের মাঝে, “কবে বল্ আসবি তুই?”
একরাশ এলোচুলে খোপায় মালা পরাতে, জড়িয়ে আমায় প্রেম ডোরে!
কত রাত একা ঐ দূর নীলিমায় চেয়ে চেয়ে ডেকেছি,
“কোথায় আছিস প্রিয় আমায় ছেড়ে? একটু আয় না এখন, ঠিক এইখানেতে!”
জ্যোৎস্নায় প্লাবিত অন্ধকার ঘরের খোলা জানালায় প্রেমময় শয্যায়
শুয়ে একা আমি কত, জাল বুনেছি তোর-আমার স্বপ্ন-বাসরের!
কত শীতার্ত গভীর বরফ শীতল ঠাণ্ডায় একা পথে জমে যেতে যেতে ভেবেছি,
“এই মুহূর্তে তোকে যে খুব প্রয়োজন! আয় না রে বোকা, একটু উষ্ণতা ছড়াতে!”
ঝিরিঝিরি বৃষ্টি অথবা তুমুল বর্ষণে, একা আমি এক কোণে ঠায় দাঁড়িয়ে__
স্বপ্ন দেখেছি ‘একদিন ঠিকই আসবে সেই দিন, নতুন এক বর্ষায় তোর পাশাপাশি’
শুষে নেব প্রতি বিন্দু বিন্দু প্রেম, যুগল বন্দী ভালোবাসার অনুভবে।
এক ঝলক বৃষ্টির প্রেমে আজ আমার আজন্ম পিয়াসী কাব্যময়তার উচ্ছ্বাস!
উথলে উথলে উঠে; স্বপ্নে দেখা, স্বপ্ন বোনা সেই কাঙ্ক্ষিত, একজন তুই’ আবির্ভাবে!


সেইখানেই তো যাবার কথা

লাবণ্য কান্তা


যেতে চাই সেইখানে যেখানে আঁকা আছে মায়ের সবুজ আঁচল।
অগ্নিঝরা দিনগাঁথা ফাগুনের রক্ত-পিয়াস
বর্ণমালা আমার মা মাটির মায়া।
আমার বোনের দুঃখ আর অগণিত ধর্ষিতার চিৎকার
যে বাতাসে লুটোপুটি খাচ্ছে।
যেখানে ঝুলছে আসাদের রক্তমাখা শার্ট
যে মায়েরা দাঁড়িয়ে আছে এখনো
বুক চেপে দু'হাতে বিলাপে বিলাপে।
যেখানে জনতা জাগ্রত উদ্দামে
প্রাণের মিলনমেলায় ... সেইখানে রাত্রি যাপনে
ব্যস্ত আমার- তোমার-আমাদের প্রিয়
অগ্রপথিক; যাকে আমরা ক্রান্তিকালে
পাই হৃদয়ের মাঝে হাসিমাখা মুখে কাণ্ডারি।
সেইখানেই তো আমার যাবার কথা!
আলপনায় ঢাকা বিরাট ভূমি আমার কালো পথ,
রঙের বর্ণচ্ছটায় দেখি বীরাঙ্গনার খোলা চুলে
পোকা-মাকড়ের বসবাস ।
কতোগুলো উচ্ছল-প্রাণ বাজি রাখে সকল আনন্দ-গান
জীবনপ্রদীপ নিবে যায় যদি যাক...
হাটবোনা তবু পিছুপানে।
সেখানেই তো যাবার কথা ... যৌবন দীপ্ত পায়ে ।


নারীর নিভৃত নীড়ে

মর্তুজা হাসান সৈকত

অর্ষা-, রুপালী মানবী আমার
আমায় টেনে নিলে-
তাঁর মধুময় চাকের কাছে
গোলাপি অধরের সতৃষ্ণ তৃষ্ণায়
কেঁপে ওঠে স্নিগ্ধ মনোভূমি ।

উষ্ণ স্তনযুগলে কিঞ্চিৎ-
ভালোবাসা আঁকার সুতীব্র বাসনায়
হৃদ স্পন্দন এতটাই বেড়ে যায়
যেন চিরকালীন অস্তসূর্যে
সমস্ত পৃথিবী তখন নিথর হলেও
বিবসনা সৌন্দর্যের বৈভবে
বোধহয় পাবোনা কিছুই টের !

লিপস্টিক রাঙ্গানো ওষ্ঠাধরে ওষ্ঠাধর রেখে
লালসার ক্রুর অনামিকা স্তব্ধ বিছানায়
ভ্রমণ করে এলে নাভিমূলে-
আদুরে স্তনদ্বয়ে খেলে যায়
রৌদ্র-জোছনার লুকোচুরি ।
শরীরী আহবানে ঝড়ে রিরংসার ঝাড়বাতি-
যেন উন্মাতাল ঢেউ হয়ে প্রকাশিত হতে চায় ।

যোনিতে তখন তাঁর ঝড়ে স্বর্গীয় নির্যাস
কেঁপে ওঠে একটু ছুঁলেই,
শরীরী বিকানোর কামজ অভিপ্রায়ে-
যেন অক্ষরবিহীন কবিতার সৌন্দর্য তখন
ভালোবাসা রোপণের ভাঁজে ভাঁজে !

অথচ,এই কামজ বাসনাটুকু পার হলে,
বিষ ঝরানোর সুখটুকু বিস্মৃত হলে
আমার ছায়াটুকুও পর্যন্ত আর মাড়ায় না !


শাস্ত্রীয় সংগীত

জুলফিকার শাহাদাৎ


দেশ যেন নয়,লুটরাজত্ব, হালাকু খান ফেল
খুনির জন্য ময়ূর আসন,সাধুর জন্য জেল
ডাকাতরা পান জামাই আদর, নিরীহজন ফাঁন্দে-
দেশের এমন অবস্থাতে আমজনতা কান্দে।

বিচার এখন ভোদার ভেতর, সাক্ষীরা খায় চাক
ময়না,শালিক পালিয়ে বেড়ায়।মঞ্চে নাচে কাক-
সুশীলজনের মাথায় হঠাৎ গজিয়ে উঠে টাক ।

মানবতার ফেরিওয়ালা মিজান আছে চাঙ্গে
সরকারী প্রেসনোটের মত তার নীতিজ্ঞান ভাঙ্গে
আইন শালিসে জুয়ার আসর,খবর আসে কানে
সিপিডি কী বলবে এখন? ফাইল আছে আসমানে ।

দেশের খুঁটি টলছে যখন, কাঁপছে পুরো ভিত-
আমরা তখন সুর ধরেছি শাস্ত্রীয় সংগীত।


জীবন চক্র

শামীম পারভেজ

শিশু কালে আঙ্গুল ধরে
পা পা করে হাটে
কতো কতো ধরে বায়না
শিশু কালটা কাটে ।

কিশোর কালে লাফ ঝাপে
কাটিয়ে রাত দিন
আঙ্গুল ধরা ছাড়াই তারা
হতে চায় স্বাধীন ।

বয়সটা যখন হয়ে যায়
চৌদ্দ থেকে আঠারো
রক্ত গরম জেদটা বাড়ে
শুনেনা কথা কারো ।

যৌবন কাল এলে পড়ে
কত রঙ্গিন স্বপ্ন দেখে
প্রেম ভালোবাসা কারে কয়
তখন তারা শেখে ।

বৃদ্ধ কালে শিশু হয়
চলে কাঁধে ভর করে
সারাক্ষণই ভাবতে থাকে
কবে যাবে মরে ।

রহস্য

কানিজ ফাতেমা রুমা

তুচ্ছতার দৃষ্টির ওপারে দাঁড়িয়ে
নিজেকেই কতবার ধিক্কার দিয়েছি
সংকীর্ণ মনে যাচ্ছেতাই ভাবো তুমি!


ভীষণ কান্না হয়ে শ্রাবণের মেঘ যেন
রাগে, ক্ষোভে শরীরে ভুকম্পনের সৃষ্টি করে
একটা চড় মারতে ইচ্ছে করে নিজের গালে
মেরেছি ও তাই, নিজেকে নিজে কষ্ট দিয়ে
কষ্ট কে জয় করার দুর্বোধ্য সাহস রেখেছি।
এখন কি মন ধিক্কার দিয়ে বলবে
এও আমার নিজের সাথে যাচ্ছে তাই আচরণ?


সাহসী সব শব্দের অন্তরালে লুকিয়ে রাখা
রাগ, ক্ষোভ মায়া কত ভাবে নিয়ে এসেছি
নিজের অজান্তে।
পরিশেষে উপেক্ষার সব কথোপকথনে
তর্কের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় উৎসাহের সব
নিঃস্ব, রিক্ত, উদম্য করে আকাঙ্ক্ষা
অজ্ঞাতসারেই বন্দী করেছি সবার অলক্ষ্যে।


এবার মন বলছে এসো জয় শিরোপা নাও
সুন্দর নারী মুখ তুমি, সাদা ক্যানভাস
সৌন্দর্য্যের শুদ্ধ শিল্পকলা,
সম্যক ভাস্কর্য গড় নিজের
যার শুদ্ধতা ব্যর্থতা শুধু একা তোমার,
ইতিহাস প্রসিদ্ধ হোক না হোক- কিছুজন বলবে
সযত্ন পরিচর্চায় নিরাময় হয়েছে ক্ষত,
উদ্যানের সবচেয়ে নির্জন ফুল
মন হু হু করা বিষণ্ণতায় কি করে সাজায়
তার স্বপ্নের সীমাহীন জগৎ।


আরেকবার এসে দেখে নাও
ভাস্কর্যের বুকে রাখা এক প্রেম
এক খানি বিশাল গ্রন্থ
রহস্যে ঘেরা পৃথিবীর সর্বশেষ সন্ধ্যার ছায়া
মায়াবিনী
কি এই চার অক্ষরের মানে
কি এই রহস্য?

এরা স্বাধীন
আহম্মেদ রফিক
কেউ কেউ অস্বীকার করে না সরাসরি
অন্ধ হয় বসে
বুঝতে পারে না আগ্রাসন নিজের
কখন ছাড়িয়ে গেছে নিজেকে

কেউ কেউ বিদিশা নিজের রূপে
নজরের রস মেখে আঙুল চুষে
শ্লোগান একটাই
বিধাতাকে ডেকো'না, এসো নিজের রসে ভিজে

কেউ কেউ চলে বিধাতাকে বাদ দিয়ে
ভালোবাসার ধারণা কেবল স্পর্শ সময়ের
কখন চলে, যায় গড়িয়ে
কভু নির্ধারণ করোনা প্রথা কারও নিরিখে

এরা স্বাধীন, স্বাধিকার বলে-
কুড়ায় আড়চোখ নজরকারা
উচ্ছিষ্ট সাজে পথে কারও চোখে
বিধানের কথায় যখন বিদ্রোহ করে বসে


নৈঃশব্দের কথামালা

ফেরদৌস হাসান খান


আমি নৈঃশব্দে ছড়িয়ে দিয়েছি কথামালা
রাতের আকাশে ওড়া ফানুশের মতো
সুনিপুণ কষ্টের বর্ণমালা নোনা জল হয়ে
আঙ্গুল স্পর্শ করে তোমার আবেগ ছোঁয়া ভালোবাসায়।।

হাতের মুঠোয় নিয়েছি আজ যৌবনদীপ্ত জীবন
স্বপ্ন দুয়ারে বসে আঁকি প্রেম জয়ের তাজমহল
বিনিদ্র রজনী কাটে সুখের সঙ্গমে
তোমার শরীরে আমার ঘ্রাণ লেগে অনুভবে মাতাল করে।।

জেনেছি আমি ভালোবেসে কিভাবে পাঁজরের দুঃখ ভোলা যায়,
জনারণ্যে নিজেকে হারিয়ে তোমার চোখে প্রতিবিম্ব হওয়া যায়
খন্ড খন্ড সুখের স্বপ্ন ডায়রীর পাতা জুড়ে
মহাকাব্য রচিত হয় ভালোবাসার ছলে।।


প্রিয় স্বদেশ 

মোঃ সরোয়ার জাহান


মুহূর্তের অনন্ত রূপান্তরে
বন্ধ চোখে খেলব কানামাছি
ধরে ফেলব দলিত লুন্ঠিত স্বাধীনতা ।

শুধু তোমার জন্য যুদ্ধে যাব
হে প্রিয় স্বদেশ
তুমি সাড়া দিলে ছুঁয়ে দিব স্বাধীনতার শরীর ।

 অজানা ব্যথায় হৃদয় করে টনটন
রুদ্র বুকের ভেতরে জ্বলে অগ্নিকান্ড
স্নায়ুর ভেতরে সমগ্র বাংলাদেশ ।


৩১ তম সংখ্যা প্রকাশিত আগামী ৬ এপ্রিল ২০১৩ শনিবার।