ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ অক্টোবর ২০১২, ২৪ আশ্বিন ১৪১৯,২১ তম সংখ্যা ।


আজ প্রকাশিত হলো পাক্ষীক  মুক্তডানা-কবিতার -পত্রিকার ২১ তম সংখ্যা,আছে মোট ১০টি কবিতা ।আজকের সংখ্যায় লিখেছেন -শাকিলা তুবা,সৌভিক দা' , শামীম পারভেজ ,ফারহানা খানম,শুভ বাবর,তামান্না রুবাইয়াত,যাযাবর জীবন,হান্নান হামিদ লিখন, এবং মোঃ সরোয়ার জাহান

 
মুখ মুখোশ
শাকিলা তুবা

মুখোশ ভরে গুপ্তব্যাধি কি করে জায়গা করে নাও?
জানি দাঁড়াবার জায়গা নেই
এক ঘড়া মোহর মেখে মুঠো মুঠো শীত-কুয়াশায়
পেঙ্গুইনের কোমর ঢাকা চাকা চাকা বরফে
ব্যাধি কি বেঁচে থাকার পরিপূরক কিছু?

হত্যা করোনা ফুল, ঝরাতে দাও পাপড়িগুলো
দীঘল মেঘের আয়ু ক্ষণস্থায়ী বলে
দারুচিনির বাকলকে উপেক্ষা করা যায়না
হনন করা যায়না সৃষ্টিতত্বের গুপ্তইচ্ছা
একজন মুজতবা আলী,
লেবু উপহার দিতে পারেন, পেমাস্পদ শবনমকে

আহা পরবর্তী স্টপেজ যে ভরে উঠল বিদেশী শব্দে
স্মৃতির খাতা খুলতে গেলে বিষম লাগে
জীবনের মোড়ক খুলে দামী সাবানের বাসনাই
জিভের আগায় কিছুটা কটু অনুভূতি; হেঁচকি তুলে ব্যাধিও আসে
সৃষ্টি রহস্যের মূল ভিত্তিতে একটু শুধু আলোড়ন ওঠে
 
এসব কিছুই আমার জন্য না
সৌভিক দা
 
এসব কিছুই আমার জন্য না
শুধু ঘেরা থাকে কাঁচের দেয়ালে জাদুঘর,
প্রত্নত্বাত্তিক সভ্যতা আর বাদশাহী মুদ্রা।
তোমাকে শুধু দেখে যেতে হবে এইসব।
দর্শকমত।
আর খুউব ইচ্ছে হলে কখনও,
খাবারের ঘ্রান নেয়া যেতে পারে বড়জোর।

ঠান্ডা-ঘরে শীত-কণার মত ঝরে আনন্দ-উৎসব,
কান্ট্রি-লাউঞ্জ ভেদ করে থ্র্যাস-মেটাল
আর ব্ল্যাক লেভেলের চিৎকার :
রাস্তা থেকে এইসব - দেখা যায়।
আর রুফ-টপ রেস্টুরেন্ট কী হয় -
তাতো দেখাই যায়না।
কেননা, ওসব তোমার জন্য নয়।

তোমাকে শুধু ফাঁকে দাঁড়িয়ে কাঠগোলাপ আর
ক্রিসেনথিমামের ব্যস্ততা দেখতে হবে শাহবাগে,
চটপটির দোকানে।
হয়ত মুহুর্তে চটপটিও তোমার চোখে দূর্লভ
ডমিনাস পিজা : যা কিনতে হলে
পকেটে থাকতে হবে অন্ততঃ ২০ টাকা...


কিন্তু উর্বর জমির খুব অভাব

 
শামীম পারভেজ

একটা
উর্বর জমি চাই
যেখানে বার বার বীজ পুততে পারি,
জল ঔষধ সার প্রদানে বীজ হয়ে উঠবে
সুস্থ সবল আর প্রদান করবে
দৃষ্ট নন্দন ফসল
ফসলই হয়ে থাকবে সারা জীবনে বেঁচে থাকার ভরসা ,
মনকে আলোকিত করার পণ্য,
বাস্তবায়িত করবে স্বপ্নকে

জমির কি অভাব আছে !
হাত বাড়ালে অর্থ দিলেই পাওয়া যায়
কিন্তু উর্বর জমির খুব অভাব

স্মৃতি
ফারহানা খানম

হিমেল পৌষের শীতে
ফিরছিলাম দারুচিনি দ্বীপ থেকে
নৌকোয় আমরা কজনা আর সে
কুয়াশার চাদরে জড়ানো কৃষ্ণপক্ষের আঁধারে
ভুল তাল সুরের মূর্ছনায় মাতাল রাত
লয়েও ছিল প্রলয় ...
আনমনে ছিল চকিত ভাবনার দোল
ফিরিয়ে দিলাম তাকেই আরাধ্য
ছিল সে মনেই
অজানা আবেশে জড়ানো দুজনা
.
কখনো হারাই গানে কখনোবা
অবগাহন স্মৃতিতে
অদ্ভুত আঁধার আর দুরন্ত আবেগ

সাগর মোহনায় পরিপূর্ণ মিলনের
আনন্দ সঞ্চার! মন মোহনায় আসন্ন গোধূলি
মন ছুটে যায় ফেলে আসা প্রবাল দ্বীপে
যেখানে বালুতটে এঁকেছিলাম পদ চিহ্ন
সেখানেই ফেলে এসেছি অমিত মুহূর্ত

বিষাদ ছুঁয়েছে আজ ,
আকাশ ভরা নক্ষত্রের মায়াবী মাদকতায়
সৈকতে তোমার চোখেই প্রথম সাগর দেখা
সে তটরেখায়
ভাসিয়ে দিয়েছি আজ সবটুকু ভালোলাগা
ছিলনা যে গ্রহণের কোন অধিকার !!

শৈল্পিক পাথরের ক্রীতদাস
শুভ বাবর

আমার শরীর জুড়ে শৈল্পিক পাথর তুমি ভাস্কর্য করবে এসো
আমি নির্বাক হতে চাই পর্যটকের চোখে ,
শিল্পী তুমি হাতুড়ি ভাঙো ,ক্ষুরধার ছেনী চালাও
মুগ্ধ দ্বীপ নির্ভয়ে নিঃসঙ্কোচে
রক্তের শিরায় শিরায় লোলুপ নীল নক্সা মূর্তি গড়ো
তোমার জাদু স্পর্শে শকুনির ধারালো ঠোঁট
বধ্যভূমিতে মাতৃক্রোড়ে শিশুর হৃদপিণ্ড খোঁজো ,
মহামূল্যবান তৈজস শস্যক্ষেত্রে চাষাবাদ করো সহস্রাব্দের নিষ্ঠুরতা
শিরদাঁড়াটা সোজা করে দাঁড়াও ,মুখে শেকল ভাঙ্গার পট্টি বাঁধো

আমার ভিতর বপন করো পাক পবিত্র বীজ ,
তুমি শিল্পীর আঁচড়ে অন্ধদৃষ্টি তুলে দাও
আমার দুটো শ্রান্ত আঁখি তন্দ্রাচ্ছন্ন বীভৎস স্বপ্ন দেখে
আমি ঘুমুতে পারি না কত ক্ষত চোখের রাত
আমাকে অনুক্ষণ ক্ষত-বিক্ষত করে তোমার কবিতা
ভাস্কর্যের প্রথাগত নিয়ম-নীতি ভেঙ্গে
আমাকে সুদীপ্ত কণ্ঠ দাও ,আমি তোমার প্রেমের কবিতা হবোনা

সেই রাতের নষ্টদের চিৎকারে দলিত তীব্র ঘৃণার প্রতিবাদ করতে চাই
আমাকে দৃষ্টি হীনতার আত্মকথনের চোখে
করুণ দৃষ্টির বাক স্বাধীনতা করে দাও
আমাকে অনাকাঙ্ক্ষিত শ্রেষ্ঠ গল্প বলতেই হবে ,এই যুদ্ধের ময়দানে
আমায় একা দাঁড়িয়ে থাকতে দাও
আমাকে অহেতুক কৃষ্ণবর্ণের বীর্য দিয়ে ক্রীতদাস করোনা

আমাকে অপলক দেখতে দাও শিল্পীর অনবদ্য সেই সৃষ্টি
আমি নিস্পলক অভিবাদন জানায় নির্বাক পাথরের চোখে
সাদাকালো নিসর্গ অস্তিত্বের অস্ফুট মোহময় ঐতিহ্যমুখীন কান্না
তোমার সেই প্রাচীন নগরের দুই পথের ফাঁকে ফাঁকে ঘন জঙ্গল
আমাকে আদিম গুহাবাসীদের কোনো ভাস্কর্য মনে করে
অনাদর অবহেলায় কোন জরাজীর্ণ পথের মোড়ে দাড়িয়ে রেখোনা

হাতের রেখা
তামান্না রুবাইয়াত
 
হাতের রেখায় চেয়ে দেখ
এত আঁকা ঝোঁকা
কিসের যে এত বাঁধা বিপত্তি

জীবনের জটিলতা দেখি
আর হাতের রেখার সাথে
মিলিয়ে শান্ত করি নিজেকে
জীবনের জটিলতা থেকেও
হাতের রেখা গুলো বড্ড জটিল

কোন জটিলটাই গ্রহণযোগ্য নয়
তাও বয়ে বেড়াতে হয়
হাতের রেখায় থাকা দুঃখও কষ্ট
মুছবার জন্য কোন সুখ
তৈরি হয় নি আজ অবধি
হবেও না,তাই তো
মাঝে মাঝে হাতের রেখাকে বলি
তুই এত জটিল না হলে
আমার জীবনটা কত্ত সুন্দর হত
নাকি জীবনটা আঁকা ঝোঁকার
বাইরেও অনেক সুন্দর

গায়ের গন্ধে মৃত্যুর ঘ্রাণ
যাযাবর জীবন

আমায় দেখো না তুমি আমার আত্মাকে দেখ
মৃতপ্রায়, মড়া শেকড়ের মত শুকিয়ে রয়েছে
স্মৃতির খাতাটাকে উল্টেপাল্টে দেখো ভালো করে
কোন এক পাতায় এখনো আমার নাম লেখা আছে
ভালো করে ঘসা কাঁচের আয়নায় মুখ চেয়ে দেখ
সেখানে আজো আমার প্রতিচ্ছবি কোথায় যেন ভাসে
এখনো সময় আছে কিছু, আছে অবকাশ চিন্তার
হয়তো আবার নতুন করে দুজনার কিছু ভাবনার
স্বপ্নগুলো দেখেছিলেম আমরা দুজনে মিলে
একটি টোকায় ঝরিয়ে দিলে ঝুরঝুর করে
বড় ভঙ্গুর ওই কাঁচের দেয়াল কিংবা স্বপ্নগুলো
টোকাতেই ভেঙ্গে খানখান হয়ে যায় মরে

এখনো দূর থেকে তোমার ডাক শুনি
তাইতো এখনো প্রতীক্ষার প্রহর গুনি
দুঃখের আকাশে কেন যে এসে আজো জ্যোৎস্না জ্বালো
মনের গভীরে অথৈ অন্ধকার এখানে নেই কোন আলো
আমার গায়ের গন্ধ শুকে তুমি কি মৃত্যুর ঘ্রাণ পাও
ভালো করে আমায় দেখ আজ , মৃত্যুকে চিনে নাও

পথের পান্থ
হান্নান হামিদ লিখন

পথের মোড়ে বাক নিয়েছি,
অন্য পথে যাবো !
পথের মানুষ, শুদ্ধ স্বরের
পথিক হয়ে 'বো !

দেখার ছলে তাকিয়ে থাকি
পথের বাকে পা !
কোথা পৌছলে হঠাৎ পাবো
সোনার শিরোপা !

বালির বুকে পায়ের কালি
পথের বুকে মুখ
পথে আছে সাথের সাথী
অবাক স্বপ্ন সুখ !

কার্যকরণ হেটে চলা ,শুধু
মানুষ দেখে দিন
কত মুখে, পিছে সম্মুখে
মনের রিনঝিন !

পথিক নাকি পথের পান্থ..
গ্রন্থ বিশাল এক !
হাঁটলে তবে শিখবে কিছু
নচেৎ না-লায়েক !

ইমেল নাঈম
ত্রিভুজ

অপরূপা
, তুমি কেমন আছ?
কতদিন দেখা হয় না তোমার সাথে?
সেই যে গেলে একটু খবরও নিলে না
পিছে ফিরে তাকিয়ে দেখলে না
প্রেমিক পুরুষটি কেমন আছে?

মাঝে মাঝে মনের মাঝে বিভ্রম হয়
এই বুঝি তুমি এলে...দরজায় কড়া
নড়লেই মনে হয় তুমি এসে পড়েছ...
আনমনে বসার ঘরে যখন বসে থাকি
তখন মনে হয় তুমি আমার পাশেই
বসে আছো মাতাল সমীরণ যখন
নাড়িয়ে দিয়ে যায় কেশ, তখন মনে হয়
করতল দিয়ে বিলি কাটছো চুলে,আর
আমি শুয়ে আছি ঘাসের জামদানীতে..

যতদূর জানি তুমি অন্য কারো বুকে
মাথা রেখে সুখ খুঁজেছিলে কিছু দিন
তুমি হয়তো জানতে না, তোমার
ওই সুখ আমার বুকে শিল্প পোড়ায়
কত নির্মম ভাবে
শারদীয় উৎসবের কিছুদিন আগে
পারিজাত ফুল অনামিকায় জড়িয়ে,
লাল জামদানী অঙ্গে পেঁচিয়ে,
চলে গেছো অন্য কাউকে ফেলে-
নতুন কোন কোকিলের সুমধুর গান শুনে

জানি না কার চোখে চোখে রেখে
তুমি হয়েছো আজ নিঃস্ব, নাকি কোকিলের
বুকে মাথা রেখে আজও ভেবে চলেছো
আমাকে নয়তো অন্য কাউকে
কি অদ্ভুত এই ত্রিভুজ! একদিকে আমি
আর অন্যদিকে বাকি দুজন দাঁড়িয়ে ভিন্ন
দুটি বিন্দুতে, আর ত্রিভুজের মাঝে তুমি
এখানে সবাই তোমাকে ভালবাসে,
তুমি কাকে ভালোবাসো তার খবর কে জানে!
অপরূপা শুনে রেখো, সিগারেটের নিকোটিন
শুধু হৃদয়কে পোড়ায়, প্রেমকে নয়
যদি প্রেমকে পোড়াতো তবে কত আগে
সিগারেটকে সঙ্গী করে হৃদয়কে জ্বালিয়ে
প্রেমকে পুড়িয়ে ছারখার করে দিতাম

জ্বলে ওঠে দীপশিখা
মোঃ সরোয়ার জাহান

হে নারী ,
রোদ বৃষ্টি এঁকে নাও শরীরে
দূরন্ত ওষ্ঠের লাবণ্য স্পর্শে বানাও কামময় ক্ষণ
যেন নদীর ঢেউ গুলো হয়ে ওঠে উড়ন্ত আঁচল তোমার!

কোমর জড়িয়ে ধরে গন্ধ নেবে এক খন্ড মেঘ শরীরের তোমার
যে মেঘ চেয়েছিল সূর্যাস্ত অথচ ভুলে যাবে সে গতজন্মের সব চাওয়া
নীলিমার পারাপারে থাকবে না শতাব্দীর ইতিহাস কোন আর,
থাকবে না নৈরাজ্য থাকবে না ছন্নছাড়া অশ্রু বিন্দু
থাকবে না অন্ধকার থাকবে না অনিবার্য অবক্ষয় কোনো !

অনন্ত একত্বে তোমার আত্নার সাথে একাত্ন আত্নায়
জেগে আছি জেগে থাকবো-রে মন পাগলী
আমি জেগে থাকবো আজীবন আধো ঘুমের আবেশে ঢুলে ঢুলে

হয়তো কমলার রস নিষ্কাসন দেখবে তোমার সহিষ্ণু দুচোখ অনন্ত কাল
আসলে এতে থাকবে না কোনো সত্যিকার প্রেম আনন্দ আলো
থাকবে না শান্তি থাকবে না বিপদে আশ্রয় !
তবু প্রণয়মুগ্ধ শরীর ডুব দেবে তোমার ঝর্ণার জলে অবিরত
ভালোবাসার তরে হৃদয় উজাড় ভালোবাসার !

রবে কুল কুল বয়ে যাওয়া ঝর্ণাধারা ঘৃণা কখনো বিষ মিলিয়ে
যা কিছুই গত হয় মেলে না পূনর্বার জানি, জানি সে কথা,
ভালোবাসা চূর্ণ হলে ঝড়জলে ভেসে যেতে যেতে
সমাজ থাকুক নিজের, নিজেরই মনে,আমি নতুন আরোহণে
বৃত্তাকারে উড়ে উড়ে আবার বৃত্ত ভেঙ্গে ছড়িয়ে পড়বো
সন্ধেবেলার বিদায়ী আলোর ঝিলিক খেলছে যেখানে
মেনে নেব সীমানা কোন জন্ম মৃত্যুর !
আজীবন ঘুমহীন জেগে থাকবো
শুধু তোমার ফিরে আসা দেখবো বলে, হে নারী !
অজানাসমুদ্র তীরে অস্ত যাবে হয়তো তখনও কোথাও !

আমি ঘাপটি মেরে বসে থাকবো তবু,
যদি কঠিন প্রস্তর মাঝেও জ্বলে ওঠে দীপশিখা কোনো কালে !