পহেলা মে ২০১২,মহান মে দিবস দীর্ঘজীবী হোক ,শ্রমিকের ন্যায্য পাওনা মিটিয়ে দেওয়া হোক ঘাম শুকানোর আগেই –মে দিবসে এই প্রত্যাশা ।

প্রথম সংখ্যায় আটটি কবিতা, লিখেছেনরেজা রহমান, অনুপম দাশ শর্মা, আলী রেজা, অমিতাভ দাস, ফারহানা খানম, সায়ক চক্রবর্তী , চৌধুরী ফাহাদ এবংশৈলেন্দ্র প্রসাদ চৌধুরী মানিক


একটা বৃষ্টির রাত একটু স্বপ্নদেখা 
 
  [চিঠির বদলে ২৮
   রেজা রহমান


যতই ঝরুক রোদ কাঠফাটা মাথার ওপরে
এতই ভাবনা যদি একটু ভেবে দেখ ভালো ক’রে
পৃথিবীটা আজও কিন্তু তিন চতুর্থাংশই জল
ওঠে সূর্য গড়ে মেঘ
মেঘমালা খুশি তুমি কি যে ঝলমল !
আষাঢ় শ্রাবণ এসে গেল বলে মেঘে মেঘে
নামবেই বৃষ্টির ঢল
ভেজো তুমি যত খুশি কৃষকটা ফলাবে ফসল ।

একলা ভিজেছ তুমি ভেজো একসাথে
দিনে বৃষ্টিতে ভেজো রাতে জ্যোৎস্নাতে ।
রাতে ঘুম স্বপ্ন দেখা সত্যিটা পাশে
সত্যিটা তোমারই তোমাকেই ভালোবাসে ।
সত্যিটাকে ঘুম দিয়ো স্বপ্ন দেখা দিয়ো
সত্যিটার ঘুমে তুমি স্বপ্নই প্রিয় ।
হোক না সে সত্যি তবু স্বপ্ন দেখো তাকে
স্বপ্ন তুমি সাড়া দিয়ো সত্যিটার ডাকে ।

একদা সুন্দর ছিলে আলোর মিছিলে
কালে কালে তাকে দেখি কালবেলা নিলে
তাকে কি সঙ্গ দেবে সান্নিধ্য কি দেবে
ফেরারী সুন্দরকে কি কাছে ডেকে নেবে ?

বেপথু সুন্দর ঘোরে পথ থেকে পথে
পথেই পথটা ভোলে হাঁটে ভবিষ্যতে ।
বৃষ্টিতে ভেজো বৃষ্টি তাকেই পোড়ায়
সে-ই জল ঢেলে যায় পাথরের পায় !

সুন্দর হারিয়ে গেছে সত্যিটা একা
শিবে নেই শুভে নেই তার নাম লেখা
একটু ফটিক জল দেবে মেঘবতী
একটা বৃষ্টির রাত একটু স্বপ্ন দেখা ?

মোহনায় মিশে যাই  

  অনুপম দাশ শর্মা



সকাল হতেই যেই হারালাম চোখে
মধ্য তারায় হীরের ঝলকানি,
ছড়িয়ে বাহু জড়িয়ে চোখের পাতায়
সুখ-যাতনার বিষম তড়পানি।

বুকের ভেতর অসংকোচের দোলা
আকর্ষণে কমলা জোড়া কোয়া,
গুটিয়ে থাকা জিভের নরম শরীর
বোজা চোখে লালার স্বাদে ধোওয়া।

এলিয়ে পড়া আকাশ কালো গায়ে
হারাই যখন মুখ লুকানো সুখে,
স্বর্গ নেহাত তুচ্ছ চোরাবালি
মুগ্ধ খুশী জ্ঞান হারালো বুকে।

রাতের নিঝুম আকাশ যখন চুপ
থমথমে সব ছমছম চারপাশ,
আবছা রেখায় ভুলছি কেন চোখ
স্নায়ু-শিরায় কেনই বা সংশয়?

সময় গুনে আঁধার কাঁদে ঊষায়
নরম আলোয় ফেরায় সেই মুখ,
ফল্গু চোখের নরম ভ্রুকুটিতে-
ফিরিয়ে নজর হাসলো আমার সুখ..!

অবিনাশী ভালবাসা 

  আলী রেজা



অনেক তো খোঁজাখুঁজি হল
বিচূর্ণ বিকেল জুড়ে
অরণ্যের ডাক শুনি
পরিচিত পাখিদের রঙে
শুভ্র জোছনায় জলের কল্লোল মেখে
তুমি এলে পাথরের ডানা
ভাঙ্গা অবলুপ্ত খেয়াঘাটে।
বিচালি প্রজ্বলিত হাসির ছটা
প্রিয়ংবদা তোমার চাঁদ চেরা ঠোঁটের কিনারে
গরল ঘৃণার হাসি!
নীরবতা ভুক ফণীমনসার ডালে
লাস্যময়ী গ্রীবাভঙ্গি কাঁচা রোদ মাখে
রূপের আয়না মেলে
অমনি হাসি খেলে যায়
তার নিয়ন আলোর চোখের ছটায়
পায়ের রুপোর মলে
হননের কারুকাজ
নধর নখরে বিম্বিত ইশারা
আরো দুরে তেপান্তরে
নদীর বনেদি পাড় ছবি
আঁকে শৃঙ্গারের জলরঙে
অবিনাশী ভালবাসা।

"খুব সহজ..আসলেই"

  অমিতাভ দাস

  

"হাতের ওপর হাত রাখা খুব সহজ নয়"
অবুঝ বুঝে সবুজ থাকা সহজ নয়
কিন্তু তবু কষ্টে জলজ চোখ দেখে
অভিমানে না-বুঝ থাকা সহজ নয় !!

প্রেম বিলাসী অর্জুনের অই গাণ্ডীবে
খামখেয়ালি দ্রৌপদী আর কান দেবে?
অস্থিরতা অবিশ্বাসের তাণ্ডবে
স্বচ্ছ নদীর ব্যকুল বওয়া সহজ নয় !!

রাগলে পরে রেড হট্ হট্ দুর্যোধন
মন্ত্র ভুলে রাজ্য করি দুঃশাসন !!
এও দেখিনা থেঁতলিয়ে দি নরম মন
না-কান্না দের সামাল দেওয়া সহজ নয় !!

আমার বুকের সেই চরেতে যাও পাখি
নির্ভরতার প্রশস্ত মাঠ ডাকছে কি?
সবুজ অবুঝ ঘাস গুলিতে মুখ রাখি
দেখবে তুমি দিনগুলি আর জলজ নয়!!


প্রয়োজন

  ফারহানা খানম



খুবই কি প্রয়োজন ছিল
ঝড়ের হাওয়ার সঙ্গী হওয়ার
কি এত ক্ষতি হতো বলো ?
না হয় ভেসেই যেতাম বেনো জলে ,
মেঘের সিঁড়িতে পা রেখে দিতাম পাড়ি
ওই দূর আকাশে
যেখানে তারায় তারায় আঁকা আছে
আমারই স্বপ্নগুলো

এই ফুল যদি নাই ফুটতো সেদিন
কি এমন ক্ষতি ছিল ?
কোন এক দিন অগণন ফুলের ভিড়ে
বুনো ফুল হয়ে যদি ফুটি
চিনে নেবে কি সৌরভে আমায়?


নিস্তরঙ্গ এই জীবনে ভীষণ
আলোড়ন আজ
অধরা সেই সুখ খুঁজি নক্ষত্রের
আলোর আলোয়
এই অবেলায় অনুরাগে
কথারা নির্বাক।

আমার শব্দেরা তাই ত্রস্ত ব্যাকুলতায়
ছন্দ হারায় ।।

বেআক্কেলে প্রশ্ন 

  সায়ক চক্রবর্তী



নিয়ত চোরাবালির হাতছানি - এই বাইশে ।
বাট্টা, দোলনার ছোঁয়া নেই এই রণক্ষেত্রে -
আছে হালখাতা - শেষ হবার নয় ।
ভাতের গন্ধ শোঁকে দুইবেলা নিশ্চিন্তে - এটাই
উপকথা ; জেনেছি । পায়ে পায়ে ফুটবল অথবা
আধুনিক জালে মাছধরা দেখে স্তম্ভিত।
আমিও কি মাছ হব গৃহস্থের ; নাকি উড়ে যাব
আকাশে উড়ুক্কু ? দিনমান তাই রোমন্থন ; হয়না
শুধু উদরস্থ । পাচন পরের ভাগ - আগে হোক
খাদ্য-প্রদর্শনী - নিশ্চিন্ত হই জেনে -জানলাম ; এখনো
খাবার আছে মৌলিক অধিকারের তালিকায় !

আগামী গ্রীষ্মে এসো

  চৌধুরী ফাহাদ



যদি এই বসন্তে সময় না হয়
তবে সামনের গ্রীষ্মে এসো,
বিচ্যুত ব্যথার খণ্ডিত দহনে,
এসো কালবৈশাখী মনের অশান্ত শাসনে।
আগামী গ্রীষ্মে এসো তুমি
খরা মিছিলে, তৃষ্ণার আকুলে,
আশ্বিন চোখের চিকচিক প্রহসনে।
এসো বন্ধনহীন বাঁধনের বিমোহনে।

আমি রোদ্দুর আকাশ ছেয়ে দেবো
বর্ষার সমর্পণ শিহরণে,
তপ্ত কপোলের আঘ্রাণ অন্বেষণ
মেখে দেবো কামনা সিক্ত চপল।
যদি এই বসন্তে না পাও সময়
তবে আগামী গ্রীষ্মে এসো
অনটনে,
আমি ভরে দেবো হৃদয়
বিমলিন বারতার অনুরণনে।

"ফেরী "

শৈলেন্দ্র প্রসাদ চৌধুরী মানিক



প্রতি দিন সন্ধ্যা নামে হয় রাত
আবার সকাল হয় ।
প্রতিদিন আমি ফেরী করি আমার
চেতনা ।
যতটা ভেবে ছিলাম ঠিক
ততটা ফেরী হয় না ।
চিত্কার ক'রে করে ফেরী করি
হরেক রকম জিনিস ।
আমি আমার মা কে ফেরী করি
বলি এই আমার মা
যাঁর
কাছে থেকে কথা বলতে শিখেছি ।
আমি আমার বাবাকে ফেরী করি
বলি এই আমার বাবা
যাঁর কাছ থেকে মানুষ
হতে শিখেছি ।
আমি আমার আমিকে ফেরি করি
বলি এই আমার চেতনা
যে পৃথিবীর সকলের মুখে হাসি চায়।

ফেরি করে করে আজ আমি ক্লান্ত
তোমরা কি আমার
সাথে ফেরী করবে?

এসো পৃথিবীর মানুষ
এসো মেহনতি মানুষ !
আমার কাছে আর একটি জিনিস আছে
আছে কাস্তে হাতুরী খচিত লাল
পতাকা
তোমরা নাও, একটি শোষণ মুক্ত
পৃথিবী গড়ি !
সে দিন আর আমাদের
ফেরী করতে হবে না !