
“হে নূতন, দেখা দিক আরবার জন্মের প্রথম শুভক্ষণ। তোমার প্রকাশ হোক কুহেলিকা করি উদঘাটন সূর্যের মতন। রিক্ততার বক্ষ ভেদি আপনারে করো উন্মোচন। উদয়দিগন্তে ওই শুভ্র শঙ্খ বাজে। মোর চিত্ত মাঝে চির-নূতনেরে দিল ডাক পঁচিশে বৈশাখ।”
‘পূরবী’ কাব্যগ্রন্থের ‘পঁচিশে বৈশাখ’ কবিতায় এভাবেই নিজের জন্মদিনে নিজেকে খুঁজে ফিরেছেন বাংলা সাহিত্য-সংস্কৃতির ধীমান পুরুষ স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
'চিঠি'
-সৌমিত্র ঘোষ
একদিন ছিলে প্রতিশ্রুতির চেতনা বোধে-
অন্য রঙের পৃথিবীতে ।
আকাশটা ছিল পেঁজা তুলোয় মোড়ানো,
স্বপ্ন রঙিন প্রেমের দেশের ।
বয়ে যাওয়া উষ্ণ বাতাস, দিয়ে যেত তোমার গন্ধ ।
দিনের শেষে, প্রথম রাতে-
স্বপন দিয়ে পেতাম পরশখানি।
হটাৎ কোন বাদলা হাওয়ায়-
আমার আকাশ ছাইল ঘনঘটায়,
হারিয়ে গেলে কালো মেঘের মাঝে ।
আজও খুঁজি তোমায় আমি-
প্রথম রাতের নয়নে ।
অশ্রু হয়ে জানাও শুধু-
নয় গো তুমি আমার,
স্বপ্ন ছিলে শুধু ।
আকাশটা ছিল পেঁজা তুলোয় মোড়ানো,
স্বপ্ন রঙিন প্রেমের দেশের ।
বয়ে যাওয়া উষ্ণ বাতাস, দিয়ে যেত তোমার গন্ধ ।
দিনের শেষে, প্রথম রাতে-
স্বপন দিয়ে পেতাম পরশখানি।
হটাৎ কোন বাদলা হাওয়ায়-
আমার আকাশ ছাইল ঘনঘটায়,
হারিয়ে গেলে কালো মেঘের মাঝে ।
আজও খুঁজি তোমায় আমি-
প্রথম রাতের নয়নে ।
অশ্রু হয়ে জানাও শুধু-
নয় গো তুমি আমার,
স্বপ্ন ছিলে শুধু ।
দৃশ্যতঃ
-শাকিলা তুবা
আজ তোমাকে সাগর দেখাতে নিয়ে যাব
বাড়ীর পাশে যেমন দেখছ তেমন নয় মোটেও
সিগারেটে আচমকা হাত লেগে যাওয়া অনুভূতির মত
তোমার চোখেও ভয় জাগবে
এ জন্যেই গুরুজনেরা বলেন, সাগর দেখে খুশি হবার কিছু নেই
ও তো এক লহমায় উড়িয়ে নেবেই সব
কেবল ডুববে তুমি---
বাড়ীর পাশে যেমন দেখছ তেমন নয় মোটেও
সিগারেটে আচমকা হাত লেগে যাওয়া অনুভূতির মত
তোমার চোখেও ভয় জাগবে
এ জন্যেই গুরুজনেরা বলেন, সাগর দেখে খুশি হবার কিছু নেই
ও তো এক লহমায় উড়িয়ে নেবেই সব
কেবল ডুববে তুমি---
না হয় চলো তোমাকে পাখির পালকে লুকানো পোকা দেখাই
একটু একটু করে কেমন কেটে দেয় শক্ত মায়া
তুমি যেমনটা ভাবো, এ কিন্তু তেমন নয় মোটেও
যে কোন পোকাতেই রেশম হয় না
রঙের ঝিলিক দেখতে চাইলে কূল ছাপানো বন্যা দেখাই ভাল
কীটের যোগ্য শাস্তি কীটকুলেই আছে
তুমি পাখির পালকে লেপটে থেকে দুঃখ ভুলে যাও।
চাইলে তোমাকে দেখাতে পারি আকাশের শূন্যতা
রঙধনুর বিবর্ণ আলো আর বুনো মহিষের মাতাল দৌরাত্ন্য
কিছুই দেখানো হয় না---সব ভুলে তুমি যাও সাগরের দিকে
আমি চেয়ে চেয়ে দেখি লোনা ফেনায় গলে যাওয়া ঐ শূন্য অবয়ব।
একটু একটু করে কেমন কেটে দেয় শক্ত মায়া
তুমি যেমনটা ভাবো, এ কিন্তু তেমন নয় মোটেও
যে কোন পোকাতেই রেশম হয় না
রঙের ঝিলিক দেখতে চাইলে কূল ছাপানো বন্যা দেখাই ভাল
কীটের যোগ্য শাস্তি কীটকুলেই আছে
তুমি পাখির পালকে লেপটে থেকে দুঃখ ভুলে যাও।
চাইলে তোমাকে দেখাতে পারি আকাশের শূন্যতা
রঙধনুর বিবর্ণ আলো আর বুনো মহিষের মাতাল দৌরাত্ন্য
কিছুই দেখানো হয় না---সব ভুলে তুমি যাও সাগরের দিকে
আমি চেয়ে চেয়ে দেখি লোনা ফেনায় গলে যাওয়া ঐ শূন্য অবয়ব।
এবার বল
-শর্মিষ্ঠা ঘোষ
তোমায় চিনি ? হে , রঙ্গিণী ? আমার ছায়ায় , আরশি কাঁচে ?
তুমি ই কি সেই ? উদোম চাওয়া সন্ধ্যে বেলার ? আর বোলো না -
আমিও কি আর নিয়ম মাফিক , চাল চলনে তাসের দেশ এক ?
ডাইনে বাঁয়ে সুযোগ মত অবিশ্বাসে হেলছি দেখ । চিনতে পারো ?
ওড়না যত উড়িয়ে দিলাম সংস্কারের, বেখাপ্পা আর আব্রু শিলা ,
এবার দেখ , চোখের তারায় সে কার ছায়া ? অনন্তরের পলক হারা
যতই তুমি সরতে থাক , সর কাটে কই জলের ওপর বন্দী মনের ?
কি করবে আর ? অবরোধের খিল খুলে দাও সেই উদাসীন ভ্রমের বেলা,
এবার বল, চিনতে পারো ? এই আমি সেই আমি কিনা ?
দেহাতি আসরে
-সরদার ফারুক
ভবঘুরে পাঠের তাড়না
অন্তরালে জমে থাকা ভোজপুরি নাচ
টেনে আনে দেহাতি আসরে
যতবার বিভঙ্গের কাছে এসে ক্রোধ নতজানু
যতবার সরে যায় শিথিল বসন -
শিখে নেই যোগের মহিমা
- ডোম্বির সাথেই আজ কাহ্নপার খেলা।
বদলে দেবার দিনে
-মৌসুমী সেন
বড় অসময়ে এলে তুমি বদলে দেবার দিনে,
পারবে তো পরিপূর্ণতার মাঝে বদলে দিতে আমায় ?
তবে চলো ফের শুরু করি, সেই শুরু থেকে –
নতুন করে আধো ভোলা শব্দ ভাণ্ডার উচ্চারণে
আমি বড় বেশি বেখেয়ালি –
আওড়াতে চাই যতবার ভুলে যাই
তুমি বার বার মনে করিয়ে দিও আমায়,
বলো বাবু, এভাবে নয় ওভাবে ।
চলো ফের শুরু করি বর্ণমালার স্বরবর্ণ ব্যাঞ্জন বর্ণ থেকে
বর্ণের সংখ্যায় ণ থেকে ন, কোথায় র, ড় এর ব্যবহার শেখাও আমায়।।
খেলতে খেলতে শিখে ফেলি গুণনে সেই নামতা।
আর কলাগাছের ভেলা চড়ে হাঁটু জলে শিখে ফেলি
সাঁতার কাটার বিদ্যেটুকু ...।
জানো শরীরটা ও ইদানীং ভালো যাচ্ছেনা
খাওয়ায়ও নেই তেমন রুচি
বলোতো তুমি, মানদাকে বলে দেই,
আমার জন্য সব সবজী মিশিয়ে একটু নরম খিচুড়ি বা যাউ ভাত করে দিতে,
পরিশেষে চলো আমায় নিয়ে খোলা ঐ মাঠে –
যেখানে বন্ধুদের ভিড়ে আমায় ছেড়ে দিয়ে পাতা গাছের বাহারি পাতার ভাঁজে
লুকিয়ে থেকে দেখে নিও আমি হোঁচট খেয়ে পড়ে গেছি কিনা।
খেলা অবসানে বাড়ী ফিরতে আমায় পরিচয় করিয়ে দিও খোলা আকাশের সাথে,
যেখানে চন্দ্র গ্রহণ-সূর্য গ্রহণ মেঘ মালাদের ভিড় ও তারার মিছিলে অজানা জানা তত্ত্বকথা
সহপাঠীদের যেন আমি বড়াই করে বলতে পারি,
গল্প শেষে যখন আমি হাত তালিতে নড়ে উঠবো তুমি তখন হাসবে
মনে মনে ভেবে নেবে কিছুটা হলেও তো পেরেছি।
অবশেষে নতুন করে আমায় ফুল-ফল বৃক্ষ নিয়ে রচনা লিখতে শেখাবে,
প্রকৃতি প্রেমের কথা বলতে গিয়ে একদিন ফিসফিস করে আমায় বলে ফেলবে
আমি তোমায় ভালবাসি...।
আর তেমন ভালবেসে আমূল বদলে ফেলো আমায় –
তোমার ভালবাসার উপরে ভর করে শুধরে ফেলি আমার ফেলে আসা দিনের ভুলগুলি ।।
চল জ্বলে উঠি
-কুতুব আফতাব
কেমন এক উদ্ভট হিম শীতলতায়
ঝিময় তাবৎ অগ্নি-সন্তানেরা !
এরা কি ধুয়ে ফেলেছে গর্ভ আর ঔরসের অহংকার?
যারা বুকের সাহস কামানের গোলা করে
ছুড়তো শত্রুর শিবিরে,
বারুদ ছাড়াই জ্বালাতে পারত আগুন ,
তাদের সন্তান আজ ঝিময় ; এ কোন লজ্জাহীনতা?
কোন কালা যাদু চড়েছে আজ প্রজন্মের গায় ?
এরা কি করে নিশ্চুপ চেয়ে দেখে
বনেদী বসতী নিশ্চিহ্ন হবার নির্মম দৃশ্য ?
উদোম হয়ে যায় স্বজনের সম্ভ্রম ,
নিজের হাঁটুর ভাঁজে দুহাত গুটিয়ে রেখে
শূন্যতায় প্রকাশ করে আনুগত্য ,
অসহায়ত্বের ধোঁয়া তুলে করে নির্লজ্জ অনুশোচনা ।
নিজের অস্তিত্ব নিলামে তুলে এরা
কোন জান্নাতুল ফেরদাউসের টিকিট কিনে ?
জন্মের দাবী পূরণে অক্ষম যে সক্ষম সন্তান
তার জন্য হা করে আছে কেবলই হাবিয়া দোজখ ।
নিথর পাথর হয়ে-
ক্ষয়ে ক্ষয়ে যাওয়াকে কি জীবনবোধ বলে ?
আমরা কি কোন কালে জ্বলে উঠেছিলাম ?
যদি জ্বলে উঠে থাকি সে কালের কসম ,
চল জ্বলে উঠি আরো একবার ।
আমার খুব বেঁচে থাকার নেশা
–সাবরিনা সিরাজী তিতির
বুনো রাজহাঁসের পিঠে স্বপ্ন না বুনেও
আমি একবার বাঁচতে চাই ,
আমার ঘুড়িগুলো সব নাটাই ছিঁড়ে পালালেও
ওদের ধাওয়া করিনি আমি
বাতাসের গায়ে সওয়ার হতে চাইবার দুঃসাহস নেই আমার
শুধু বেঁচে থাকার চেষ্টায়
একদিন ভালোবাসার সব সুতো ছেড়ে দিয়েছিলাম জলে ,
সেগুলো আজকাল আমাকে আর বাঁধে না
ওদের এখন অনেক ব্যস্ততা !
আমি একটু বেঁচে থাকবার জন্য
বারবার মরণ দেখেছি খুব কাছ থেকে
মৃত্যু ছুঁয়েছি বারকয়েক বড্ড শীতল সে !
ঠিক তোমাদের তথাকথিত ভালোবাসার মতো !
আমি বেঁচে থাকতে চাই কোন নিঃশ্বাসের উষ্ণতায়
তীব্র উত্তাপে না হোক ,
সামান্য মোম আলোয় আমি একবার বাঁচতে চাই ।
হয়তো আমার সে সুযোগ আসবে না
তোমাদের হাসি খেলায় আমার আর ভাসা হবে না
তবু কোন সূর্যোদয়ে বা অমাবস্যায় আমাকে মনে করো
তোমাদের প্রয়োজনীয় ব্যস্ততার ভিড়ে মনে রেখো
কেউ একজন ছিল যে খুব বেঁচে থাকতে চেয়েছিল !
কাপুরুষের ভালবাসা
-ইস্পা খান
বলেছিলে
কি আছে ওই গাঢ় কালো চোখে
যেখানে ছিল না কোন ছলনা
ছিল গভীর ভালোবাসা।।
আরো বলেছিলে
তুমি আমার
বিধাতা তোমায় পাঠিয়েছিল
আমার ভালবাসার জন্যে।।
ভালোবাসার শপথ নিয়ে
কত না নিগুঢ় ভালোবাসায়
কথা দিয়েছিলে আমায়
আমি শুধু তোমার জন্য।।
হায়রে অবুঝ মন
এতটুকু না বুঝে
তোমার মিষ্টি কথায়
গ্রহণ করেছিলাম তোমায়।।
চোখে ছিল ঘর বাধার স্বপ্ন
হয়েছিলাম মগ্ন
সবটুকু ভালবাসা দিয়েছিলাম উজাড় করে
তোমারই জন্য।
একি ছলনার খেলায় মত্ত তুমি
নিজেকে করেছ নষ্ট
ভালবাসাকে করেছ অপমান
হয়েছ পথভ্রষ্ট।।
কাপুরুষের ভালবাসা
সে তো ভালবাসা নয়
ঘৃণার চাদরে আবৃত তুমি
যার জন্য শুধু ঘৃণাই রয়।।।
দহন করে ফেল আমাকে
-এলিজা আজাদ
নির্জন একাকীত্বের সাথী হয়ে ছিলাম---
এসেছিলে নিভৃতে হাতে নিয়ে
একমুঠো মেঘের পালক!
আমার কোঁচড় ভরা ছিল প্রেম-তৃষ্ণার জল---
তোমার ও‘চোখে তখন প্রেমাতুর কামুক আবেগ;
মেঘের পালক দিয়ে ঢেকে দিলে তৃষিত শরীর।
সুদীর্ঘ রাতের রমণে শরীরে এখন
রতি পূর্ণতার ক্লান্তির আবেশ।
জানালার কার্নিশ ঠিকরে উঁকি দিচ্ছিল পূর্ণিমার চাঁদ!
দু’চোখ ঘুমে ঢুলুঢুলু, যাচ্ছি ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে;
পূর্ণিমার চাঁদ গো,
ঐ আলোতে দহন করে ফেল আমাকে।
জানা সম্বোধন
-মোহাম্মদ তমিজ
আমি, তুমি এবং সে . . .
আমরা পৃথিবীকে এমন করে জানি,
বার বার ঘুরে ফিরে এসে স্বার্থকতা আদায় করে যায়,
দৃষ্টান্ত স্থাপন করে প্রকাশ্য সম্বোধন।
কিছু সম্বোধন ছন্দের আড়ালে ছদ্মবেশ ধারণ করে,
হয়ত লুকাতে চায়।
কিছু শব্দ আধা পোড়া মাটির মত দুর্গন্ধ ও ছড়ায়!
একরার ভাবলাম আমি ও সম্বোধন গুলো অমাবস্যার চাঁদের মত উল্টিয়ে দিতে পারি-
আলো জ্বালাতে জ্বালাতে হারিয়ে যাবে আঁধারে।
কিছু সম্বোধন দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চায়;
বহমান নদী যেমন করে অজানাতে ছুটে।
তবে জল কি তার শেষ দেখা পায়?
আমার ভয় হয়- নদী কখনো কখনো তার গতি পথ ছেড়ে মানুষকে কাঁদায়,
আবার পথ হারিয়ে চর ও জাগায়।
আমি,
তুমি,
সে-আসলে আমরা কি এমন করে জানি?