ঢাকা, মঙ্গলবার, ৪ ডিসেম্বর ২০১২, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪১৯,২৫তম সংখ্যা।


২৫তম সংখ্যা,আছে মোট ১৮ টি কবিতা, লিখেছেন-রোখশানা রফিক,শুভ বাবর,মৌসুমী সেন,কু তু তা ব,ফারহানা খানম,আহমেদ মুনীর,মোহাম্মদ আন্ওয়ারুল কবীর,অর্পিতা,চৌধুরী ফাহাদ,শিমুল সুলতানা,রায়হান সিদ্দীক,তাহমিনা খান, কবি আসাদ,জিনাত জাহান খান,কানিজ ফাতেমা রুমা,ইন্দ্রাণী সরকার,মৌ দাশগুপ্তা এবং অভিলাষা ।

নিষিদ্ধ প্রহর
  রোখশানা রফিক

নিষিদ্ধ ইশতেহারে দুর্বোধ্য ভাষায় ছাপা
বেদনার নিষিদ্ধ প্রহর কুড়ে কুড়ে খায় স্মৃতির ঘুণে
ক্ষয়িত সময়ের ধুলোর প্রলেপ পড়ে
বিবাগী বাউল মনের নিকনো উঠানে
ক্লেদ ক্লিষ্ট পঙ্কিলতা অবিরাম বুনে চলে
বাবুই পাখির বাসা মস্তিষ্কের নিউরনে
হৃদয়ের চো্রাকুঠুরিতে ক্লান্তিভরে জমে
হতাশার পুরু কো্লেষ্টরেল গোপনে
তবু আসে প্রেম, আবার ডুবে যায় চোরাবালির গহীনে,
তবু কারাবাসে রাজবন্দী ভালোবাসা ঝরে যায় আনমনে,
তবু দিন যায়, দিন আসে ফিরে তোমার স্পর্শ বিহনে,
তবু পলি পড়ে চর জেগে ওঠা হৃদয় নদীর প্লাবনে,
তবু ফিরে যাই নিষিদ্ধ প্রহরে তোমার ফেরারি মনের জমিনে।।

আমি আমার নালিশ
শুভ বাবর

আমি নাগরিক তালাবদ্ধ
আগুন সুযোগ পেলে আমাকে পুড়িয়ে মারে,
আমি পোশাক চাষা
সারাদিন শ্রমবাজারে অতীব সস্তা শ্রমের সেলাইমেশিনে নক্সা বুনি
আমি বাংলা মায়ের বেশুমার সন্তান
জীবন সাজাতে গিয়ে জীবন হারিয়ে ফেলেছি
আমি অনির্বাণ মৃত বা জীবিত
আশ্বাসের বাণী উৎসব শুরু জনতার নালিশ উদ্ধারে খামখেয়ালি
আমি কৌঁসুলি প্রেসনোট
নাগরিকদের হত্যার প্ররোচনা অভিযোগে আদালতে গ্রেফতারি পরোয়ানা
আমি অপহৃতের ছেলের পিতা
নিরস্ত্র সমস্ত চোখে আশ্বাসের বাণী জীবিত খুঁজতে ভূ-স্বর্গের সন্ধান
আমি মশাই আমার জীবন একটাই
ইমারত সন্ত্রাসে খুঁটিনাটি সংবাদে ব্যর্থ রাষ্ট্র আসামীরা জামিনে মুক্তি লাভ

চিত্রকরের সুনিপুণ দ্যুতি
মৌসুমী সেন

আমি আঁধারে দাড়িয়ে যখনি দেখি
সৌরতৃষ্ণার নাক্ষত্রিক দ্যুতি,
অগুনন ব্যাপ্তিতে আবেগের ঝুরিতে তখনও
যেন ঘটেনা তার বিচ্যুতি;
আমি নক্ষত্রের দ্যুতির মাঝে করি নির্ণয়
চিতার আগুন সমেত জ্বল জ্বলে অধ্যায়,
তুমি অপরাগে কাঁদো, ডাকো আমায় পারমিতা
আমি কাব্যের সম্ভারে আঁকি পৃথিবী
লেখনীর ভাজে লিখি অংকিত চিত্রল সংহিতা
তুমি আমায় মিছেমিছি ভেবেই বসো কবি
স্পর্শ করো আমার আবেগের ঘর,
কামনার আগুন ঝরাও তবু নিষ্কামে ছুঁয়ে যাও-
পবিত্র প্রাসাদ সম লৌহ মানব স্বয়ম্বর;
আসক্তি তোমার তুমি রও বিসর্জনের দরজায়
বিচ্ছেদের বিষ পান করে প্রতিমা'রে ভাসিয়ে ভেলায়
উচ্ছ্বাসের জানালায় জ্বলন্ত সম্ভারে বলো আমায়-
কবিতার ঝংকারে মানবী নও তুমি কবি কবিতায়,
উন্মোচনের অন্তঃগহন পথে আরাধ্য দেবী মহাকবি;
রণক্ষেত্রে বীর বীরাঙ্গনাদের ভিড়ে সু-ললিত ধ্যানে-
আহবানে দাও অধিকারের বার্তার কলাম,
কলঙ্কিত ইতিহাসে জাগ্রত নারীর রক্ত নদীর এনাম
আমায় আঁকো সুনিপুণ চেতনার গভীরে
কল্পনার বারিধারায় দেখো যুদ্ধক্ষেত্র অবলোকনে,
বীরযোদ্ধার্নবতী নেতৃত্বাধীনে উন্নত মম শিরে
আরাধনার সমূলে অবতীর্ণ বেহাগ সুরের নাটকীয়তায়-
কলম অস্ত্র রাখি মুখোশ বীজ পত্র বিলীনতায়।।

রাতের কাব্য
কু তু তা

ঘুমহীন মাঝরাতে
নিশ্চিন্তপুর পুড়ে গায়েবী অনলে,
বীভৎস চিৎকারে বুকে তোলপাড়
সরু গলিতে আটকে যায় দমকল,
ভাবনারা ছুটাছুটি এদিক ওদিক
ঘন ধোঁয়ায় হারায় চিন্তার শক্তি,
দাউদাউ আগুনে পথ খুঁজে মরিয়া,
সপ্তম তলা থেকে লাফিয়ে মরে
বাঁচার প্রত্যাশায়
জীবন যেন এক ব্যস্ত মিডিয়া সেন্টার,
তাক করা অসংখ্য ক্যামেরা,
স্যাটারের ক্লিক ক্লিক আওয়াজ,
চোখ আঁধার করা ফ্ল্যাশের আলোয়
বিষিয়ে উঠে সময়
রাত কি তবে কষ্টের নাম ?
আমি নিশ্চিন্তপুরে একটা শান্তির ঘুম চেয়েছিলাম,
প্রাণের উচ্ছ্বাসে সোনামাখা সকালটাকে স্বাগত জানাতে
আমি চেয়েছিলাম খুব সাদামাটা স্বপ্ন শেষে
আড়মোড়া দিয়ে জেগে উঠতে
আমার ঘুমই আসেনা-
আমার আবার স্বপ্ন আর জেগে উঠা !

জল জ্যোৎস্নার অলীক স্বপ্ন
ফারহানা খানম

একটা ঘাসফড়িঙ রাতে মাথা কুটছিল
আমার জানালায় শীতে জড়সড়
শার্শিটা খুলে দিতেই উড়ে এলো বুকেতে,
তাকে খুব যতনে কুসুম উষ্ণতা দিলাম
শোনালাম ঘুমপাড়ানির গান
অথচ সে বিক্ষত করলো আঁচড়ে আঁচড়ে
পেলব আঙ্গুল
রক্তাক্ত করলো কোমল হৃদয়
এভাবেই শুরু হয় ভাঙ্গন, ভুল সুরে গান গাওয়া
জল জ্যোৎস্নায় অলীক স্বপ্ন বোনা;
হিম হিম কুয়াশায় ঢাকা পড়ে উষ্ণতা
তোমার আস্তিনে গোটানো ভালবাসা যেন শ্যাওলা প্রলেপ
আমার তো আঁচলের গেড়োই বজ্রআঁটুনি ...

প্রতীক্ষা
আহমেদ মুনীর

সেই তোমার জন্যই সারাক্ষণ বসে থাকি
সেই প্রথম দিন থেকেই অপেক্ষার অস্থির প্রহর
তোমাকে বুঝবার আশায় অনন্ত ব্যাকুলতায়
সেই প্রথম দিন থেকেই তোমাকে খুঁজছি
ঈশ্বর কণার গলিত লাভায়
সকাল থেকে সন্ধ্যা সন্ধ্যা থেকে ভোর অবধি
তোমার আশায়
তোমার ধ্যানে তোমার জ্ঞানে
রৌদের রঙ আর রাত্রির অন্ধকারে
দিবসের ক্লান্তি অস্থির আলোয়
বিশ্রামে ঘর্মাক্ত দেহে
দিগন্তের সীমানায় সুদূর আকাশে মহাকাশে
চলমান বুদবুদ কালে মহাকালে
তোমার মেঘের চাদর সরিয়ে
আমি দেখতে চাই তোমার অবয়ব
তোমার জগত সাগর মহাসাগর
পাহাড় পর্বত সবুজ প্রান্তর মরুভূমি
তোমার শব্দ তোমার তাপ
উত্তাপ তোমার অদৃশ্য জল অদৃশ্য আকাশ
তোমার স্রোতধারায় আমি ছুটে চলি
তোমারই খুঁজে
তোমার পুষ্পিত করতল
নরম স্পর্শ ভালবাসার আশায়
তোমার জন্য আমার সুদীর্ঘ প্রতীক্ষা ।।

আমলনামা
মোহাম্মদ আন্ওয়ারুল কবীর

স্মৃতি হয়ে সহসাই একদিন আমি
বেশী কি দেরী !
চৌকাঠ পেরুলেই প্রস্তুত গাড়ি
থোড়াই কেয়ার ইচ্ছে অনিচ্ছে
যাব কোথায়? আদৌ কি যাব?
শুধুই শাস্ত্র বচন অন্য জীবন
সত্য জানে ধ্রুবতারা
শূন্যে বিলীন একদিন এই আমি
ছি: শ্রেয়সী কাদঁছো কেন !
প্রেম কসম আমার -
অম্লান ঝরাও জোছনা
দিন শেষ আলাপন - খোশমনে আল বিদা
আমার আমলনামা হোক চাঁদমুখ

এভাবেই টিকে থাকা
অর্পিতা

ক্লান্ত পা টেনে টেনে
এভাবেই টিকে থাকা
হিরণ্ময় সময় ছুঁয়ে
ধার করা রক্তিম আবেগ
নিরবিছিন্ন স্বপ্নের ভেতর
একা রাজত্ব করে
হিম কুয়াশায়
অজান্তে সন্ধ্যা নামে
জীবনের ঘোলাটে জলছবি
এভাবেই টিকে থাকে
যতেক মাধুকরী তপস্যায় !

জীবন হেঁটে যায় কার্নিশ ধরে
চৌধুরী ফাহাদ

জীবন হেঁটে যায় কার্নিশ ধরে প্রান্তে,
ঢলে পড়া সূর্যের ঢালে বেজে উঠে দামামা
তবুও পাদুকার তলা কুণ্ঠিত ভূমির চুম্বনে
কেননা এখানে ইতি নেই, হয়েও হয় না!
বায়স্কোপ এর বারান্দায় ঝুলপর্দা দুলে যায় থেমে,
বারংবার মৃত্যুর আবহেরও রয়ে যায়
পুনর্বার মৃত্যুর ক্ষুধা
অহর্নিশ ইতি'রা এখানে গীতিকার নব নামান্তর
নিয়ন্ত্রণহীন নিয়ন্ত্রণে বন্দী পৃথিবী,
ঘোর লেগে রয় তবু এক তবলচীর তালে

স্বপ্ন
শিমুল সুলতানা

রাসের উৎসবে মেতেছিল স্বপ্ন বন্দি রাত
পৃথিবী জানে না সে উন্মাদ রাতের কথা !
সন্তর্পণে ছুঁয়ে ছিল মন তারার আকাশ-বাগান বিলাস-
নদীর ঢেউ-রুদ্ধ আবেগ-শিল্পীর ক্যানভাস !
আমাদের এক যুগল রাতের কথা
কেউ জানে না --
বৃষ্টি ছিল না সে রাতে
কাঙ্ক্ষিত ফুলেল শয্যা নয়
তবু প্রাণের উচ্ছ্বাস ছিল রাত ভর
কাঁপন তোলা দীর্ঘশ্বাস কে পালতোলা নৌকার সাথে
ভাসিয়ে ছিলাম উন্মাদনার জলে-
সবার বুকেই কি কোনও হাহাকার থাকে
লুকানো থাকে যা না পাওয়ার ভাঁজে ভাঁজে?
স্বপ্ন- বন্দি রাত !
তুমি দীর্ঘ হলে না কেন?

লোভের আগুনে মিনি-মাগনা জীবনগুলো
রায়হান সিদ্দীক
০১.
যণ্ত্রণাবিদ্ধ শিরা-উপশিরাগুলোর অদ্ভুত ছটফটানি,
বড্ড দিশেহারা আজ আমি,
বড় অসময়ে বন্ধু;
এই অবেলাতেই,
আবার মেঘাচ্ছন্ন হল আমার স্বপ্নের আকাশ
নতুন করে স্বপ্ন হয়তো আবারো দেখবো,
কিন্তু সেই স্বপ্ন বুননের কাণ্ডারিকে কই পাবো!!!!
চারপাশে শূন্যতার বলয়;
দীর্ঘ থেকে তা শুধু দীর্ঘতরই হচ্ছে,
প্রলয় নিনাদে......
এত মৃত্যুর ভাঁড় দেশ কিভাবে নিবে!!!!!
হায়রে জননী আমার; আমার বাংলাদেশ,
তোমারেই শুধাই,
আমরা যারা আজও মরে যাইনি,
মৃত্যুর সম্ভাব্য সব ফাঁদ দেখে শঙ্কিত
০২.
অন্ধকারের পথ মনে হয় এভাবেই দীর্ঘায়িত হয়, , ,
রক্ত হয়ত প্রতিদিনই ঝরে, কিন্তু অন্যায়ের;
কোনভাবেই তা সুশাসন প্রতিষ্ঠার নয় বন্ধু
তথাকথিত আমাদের এই সভ্য সমাজ ব্যবস্থার কাছে
মূল্যহীন ওই জীবন গুলোর মৃত্যুর মহড়া বেড়েই চলছে,
প্রতিনিয়ত; নানাকৌশলে ওত পেতে থাকা মৃত্যুফাঁদে
তবু নিশ্চুপ আমি;
এই সমাজ, এই ব্যবস্থা যে আমার হাতেই গড়া
অতঃপর,,,,,,,,,,
দীর্ঘায়িত.........গভীর অন্ধকার চারপাশে
০৩.
মহাকালের অনন্ত পথের প্রতিটি পবিত্র আত্মায়
আজ শোর উঠেছে
অসহায় অশরীরী আত্মাগুলোর
বুকচেরা ফরিয়াদ; মোদেরই বলছে-
হয়ত, করুণা করেই বলছে,
এখনই সময়; তোমাদের রাজপথে যাওয়ার,
এইতো সময়; রঞ্জিত রাজপথে শহীদ হওয়ার,
ঘুণে ধরা এই সভ্যতার বিনির্মাণে
না হয়!!!!!!!! অন্ধকার,
আরও গভীর থেকে গভীরতরই হবে

আমার ষড়ঋতু
তাহমিনা খান

তুমি রাগ করলে
আমার গ্রীষ্ম আসে
তুমি কান্না করলে
আমার বর্ষা আসে
তুমি ছুঁয়ে দিলে
আমার শরৎ আসে
তুমি কথা বললে
আমার হেমন্ত আসে
তুমি চুপ থাকলে
আমার শীত আসে
তুমি হেসে দিলে
আমার বসন্ত আসে
তাই তুমি !
আমার ষড়ঋতু

অলৌকিক বিভা
কবি আসাদ

সেই অলৌকিক বিভা কোথায় গেল
রক্ত মাংসের মানুষ গুলো
রাগ হিংসা চিবিয়ে খেয়ে
হয়ে উঠে সত্যের সন্ধানী
আলর উৎস !
অথচ
আমায় এখন রাগ হিংসা
প্রতি নিয়ত ধ্বংস করে
এর মাঝে তোমার অবস্থান
ক্ষুদ্র থেকে অতি ক্ষুদ্র !

জেনেছি সবই
জিনাত জাহান খান

মিনিট ঘণ্টার অন্তরালে
বিরামহীন জপে বেদনা নামে
চেতন ইঞ্জিন গর্জে চলে
মিলিয়ে তাল অতল বন্যায়
জ্বলে ফুলকি চোখ চুম্বক
মোম হয়ে গলে করতলে
সরে যায় ত্যক্ত তটরেখা
অতীতের লুপ্ত প্রচ্ছদ
চলে যাবার দিন কেন
যায় পুড়ে শুকনো ঠোঁট , চক্ষু , গলা
শরীরের সরল সম্পদ ছিল যতটুকু
কুঁড়ে খায় এখন ক্ষমাহীন হৃদয়

অভিশাপ
কানিজ ফাতেমা রুমা

জলের রূপে ফিরলে তখন
ঘটবে অঘটন
নাক হয়ে যে মুখের পথে
হবে বর্ষণ!
জলে ডোবা হয়রানিতে
নাসিকা কুঞ্চিত
নাকের জল আর চোখের জলে
সুখ হবে লুণ্ঠিত!
ভয় পাই জলের পরি
না দাও অভিশাপ
তার মরণে আরেক মরণ
করোনা এই পাপ!
তপ্ত লোহায় চিহ্ন দেয়া
জীর্ণ সংস্কার
সেই সীমাতে বাধা সে যে
নাই অপরাধ তার
নাও ফিরিয়ে জলের পরী
তোমার অভিশাপ
"
ভালো থাকুক বন্ধু, আমার -
পুণ্য আমার পাপ।।"

প্রতীক্ষা
ইন্দ্রাণী সরকার

একা একা আমি বসে রই ঘরে
সঘন গহন রাতি,
স্তব্ধ আকাশ সুপ্ত ধরণী
তারারা হয়েছে সাথী||
তৃষিত আঁখি চেয়ে রয় মোর
বাহিরে দুয়ার পানে.
মিলন পিয়াসী এই হিয়া মম
বারণ নাহি যে মানে ||
নয়নের জল করে ছলছল
কখন আসিবে তুমি,
অপেক্ষারত অসহায় আমি
সময়ের কাঁটা গুনি ||
রজনী পোহায় পূবের আকাশে
উঠিল আলোর রেখা,
আজি অপেক্ষা বৃথা গেল মোর
নাহি পেনু তব দেখা ||

এক সাঁঝবেলার ঋণ
মৌ দাশগুপ্তা

মধু বসন্তের উৎসব শেষ হতে না হতেই
রোদ্দুরে ডানা মেললো সূর্য উদ্ধত শ্বেত পারাবত
সবুজ পাতার আড়ে উঁকি মেরে সাবালক হয়ে উঠলো গোটা একটা দিন,
আবার চোখের পলক ফেলতে না ফেলতেই
পেঁয়াজ খোসার মতো নানারঙের আবরণে সেজে দেখা দিল গোধূলি,
আকাশ ছোঁয়া সবুজ মাঠের প্রান্তে আড়মোড়া ভাঙল নৈশজাতক চাঁদ,
ইচ্ছার উজানে মনমাঝি গুনগুনিয়ে ধরলো ভাটিয়ালির সুর,
দিনরাতের এই মায়াবী পটভূমিকায় নিতান্ত বেরসিকের মত বললে,
তোমার একটি সাঁঝবেলা দাও আমায়! শুধু একটি-,
তোমকে অদেয় কি- বা আছে বলো?
হাতের তালুবন্দি, পাখীর বুকের মত পেলব,ফুলের মত কোমল,
এক অনাঘ্রাত সাঁঝবেলা তুলে দিলাম তোমার আতপ্ত ঠোঁটে
বিপন্ন যৌবনবোধে বিস্ময়ে শিউরে উঠলো আসন্ন সময়,
আদিমতমা মানবীর গন্ধ নিয়ে জেগে উঠলো পাললিক গুহার অন্ধকার,
ওই আঁধার ঠেলেই মুখ বাড়ালো ধোঁয়াশার মায়াজাল প্রকৃতি
যেন দূর নীলিমায় হঠাৎ বিজলি রেখা,চোখ সরাতেই দৃশ্যান্তর,
নজরে এলো ছুটে যাওয়া মেঠো রং নদী,ফুল রঙা আকাশ,
পাতা ঝরা বন,ঘরমুখো পরিযায়ী পাখি,মায়াবতী মেঘ
আবার মুখ ফেরাতেই, তোমার চোখে কামাগ্নির ক্ষুধিত দাহ,
কেঁপে উঠল আমার গোটা সাঁঝবেলা, সেই নাছোড়বান্দা শারীরিক স্পর্শে
এক চুমুকে পান করে নিলে লাজুক সাঁঝের কুমারী সৌন্দর্য,
অবলীলায় তাকে বন্দী করে নিলে বাসনার অন্তঃপুরে
চিনচিনে ভালোবাসার সুখ বুকের গভীরে লিখে দিয়ে-
এক সাঁঝবেলার ঋণে আমাকেই ভিখারি করে গেলে।।

বর্ষা : হর্ষ বিষাদ
অভিলাষা

সারা দুপুর,
টাপুর টুপুর,
ঝরঝর ঝরে বৃষ্টি
ভরল পুকুর,
ঝামুর ঝুমুর,
আর চলে না দৃষ্টি
মকমকি শুনি
দাদুড়ের বানী,
মন লাগে না কাজে
আবছা আলো,
আকাশ কালো,
সকালে কিংবা সাঁঝে
কদম ফুল
দোদুল দুল
শাখায় শাখায় দোলে
হাসনুহানা
সুবাসধন্যা
হাসে পাতার কোলে
মত্ত দামিনী,
সঙ্গী অশনি,
হু হু বেগে বায়ু বয়
গরজায় মেঘ,
রুখবে কে বেগ,
দেখে লাগে মনে ভয়
দরদর ধারা,
নদী দিশাহারা,
বানভাসি হল কূল
প্রলয় নাচনে-
মত্ত প্লাবনে,
এলোমেলো জীবকুল
শুধু হা হুতাশ
অকাল দীর্ঘশ্বাস!!
তবু আছে এর প্রয়োজন
পুরাতন শেষে
নতুনের বেশে
জীবনের আবাহন