ঢাকা ,মঙ্গলবার ২৯ মে ২০১২ , ১৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪১৯ ,পঞ্চম সংখ্যা ।

                              উৎসর্গ   -বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম কে

   
                    
                    "যদিন আমি হারিয়ে যাব,বুঝবে সেদিন বুঝবে,
                      অস্তপারের সন্ধ্যাতারা আমার খবর পুছবে-
                            বুঝবে সেদিন বুঝবে!"


বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম বাঙালি কবি, সঙ্গীতজ্ঞ, দার্শনিক,  বাংলা ভাষার অন্যতম সাহিত্যিক, দেশপ্রেমী এবং বাংলাদেশের জাতীয় কবি পশ্চিমবঙ্গ বাংলাদেশ - তাঁর কবিতায় বিদ্রোহী দৃষ্টিভঙ্গির কারণে তাঁকে বিদ্রোহী কবি বলা হয় তার কবিতার মূল বিষয়বস্তু ছিল মানুষের প্রতি মানুষের অত্যাচার এবং দাসত্বের বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদ একাধারে কবি, সাহিত্যিক, সংগীতজ্ঞ, সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ এবং সৈনিক হিসেবে অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে নজরুল সর্বদাই ছিলেন সোচ্চার তাঁর কবিতা গানে এই মনোভাবই প্রতিফলিত হয়েছে অগ্নিবীণা হাতে তাঁর প্রবেশ, ধূমকেতুর মতো তাঁর প্রকাশ যেমন লেখাতে বিদ্রোহী, তেমনই জীবনে - কাজেই "বিদ্রোহী কবি" আমরা  জানাই তাঁর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা ।






পঞ্চম সংখ্যায় আছে মোট সতেরটি  কবিতা,  লিখেছেন- নীল আলো,আলী ওয়াসিকুজ্জামান অনি,মেঘ অদিতি,সৈয়দ আবু মকসুদ,আরশাদ উল্লাহ,ইন্দ্রানী সরকার,কবি মোস্তফা মিয়া,তামান্না রুবাইয়াত,কাজী আনিসুল হক,আফরিন জাবীন,আদিত্য অনীকনাফিয়া সুলতানা (নিলি) ,বাবুল হোসেইন,লাবণ্য কান্তা,অরিন্দম, স্বপ্ন নীল আকাশ এবং রুখসানা কাঁকন




        বিবাগী 





   -নীল আলো








আমার বিবাগী মন অন্তরীণ যেখানে
যারে ভালবেসে দুর্গম পথ পেরিয়ে
তিমিরে মিলায়ে গেছে বিষণ্ণ অবসাদে
সেখান থেকে যদি কোনো নির্জন সময়ে,
একটি অভিতথ প্রণয় জন্ম হয়
অপার সাক্ষরবিহীন,
যদি তা কন্ঠহীন শুভ্রতা নিয়ে নিবিড় অন্তরালে
নিস্তব্ধতার মত ঐশ্বর্য হয়ে থাকে সে প্রেম
যা শুধুই অবিচ্ছিন্ন দুটি মনের
একটি স্থির বিশ্বাস।।
তা কেবলি ব্যাপ্ত অন্তরাত্মা দিয়ে ঘিরে রাখা যায়
হয়ত বলবে, বিশ্বাস কত সময়ের ?
সমুদ্রের ঢেউয়ের মত গণনা বিহীন,
সময় অপরিসীম অপরিমেয়তায় এর মাপ
যা শুধুই পরম আত্মিক।।
মহুয়ার শালবনে আমলকীর শাঁখে
জোনাকিরা কতবার আলো জ্বেলেছিল
প্রিয়, দেখেছো কি গুণে ?
ছোট ছোট প্রাণের প্রয়াস দিয়ে ভরা,
যা সময়ের হিসাবের অনেক ঊর্ধ্বে......
আমার একক পৃথিবীর মহাসমুদ্রের গভীরে গিয়ে
আমি যে অশেষ সিঁড়ি দেখেছি
তার গন্তব্য ছিল একটাই
দুটি মনের একটি আকাশ।।
চারিদিকে জীবনের কঠিন সময় তারি মাঝে
অনেক মুহূর্ত মিলায়ে অবিকৃত দিনগুলি
বিপন্ন স্মৃতি বয়ে নিয়ে চলে সোনালী আলোর বেলা ।।
তুমি বলো আজ কাল, নয় চিরকাল,
অজানিত এক বিশ্বাস , তোমার মনে গ্রহণ লাগিয়েছে
এই বলে চলে গেলে ; ফিরে পাবে আমায় হয় যদি ...
তোমার স্বর্গীয় ভালবাসা ।।
আমি বলি- সময় থেকে হৃদয়ে এতটুকু সুখ সঞ্চয়
হোক তা করুণার মত, তাই দিয়ে খুঁজে নেব তোমায়,
ধুসর মরুভূমি , বিশাল সাগর , অনন্তের চুম্বনে,
চিহ্নহীন পথে ঘুরে আমার হৃদয়ে যে স্বপ্নসৌধ গড়েছি
তারই ফাঁকে ফাঁকে যে এক অপরূপ হৃদয় দেখেছি
সবার অলক্ষ্যে সে হৃদয় মাঝে দেখেছি-
প্রেমময় প্রীতির এক শোভা ......
যা অনিমেষ অনির্বাণ দীপ্ত ।।


ডুবে যাই অন্ধকারে



  - আলী ওয়াসিকুজ্জামান অনি

 

রোদের পাহাড়ে চড়ে ভেসে বেড়ায় উত্তাপ
স্বেদবিন্দুর ঝর্না ঝরে ঝরে পড়ে,
আকাশ ছোঁয়া মস্ত মস্ত দালানের
ভীতিকর ছায়া ছেয়ে থাকে পথের কোনে কোনে ,
ময়লা ফেলার ভাগাড় গুলোতে
লড়াই ঝগড়ায় মাতে উপোষী কুকুরের পাল
আর ময়লা টোকানো কিশোরের দল ,
পাঁজর বেরুনো রাস্তায় মুচকি হাসে মহাকাল ,
গলির ওই মাথায় দেখি এক সুবেশী কোট টাই ধারীকে
চাকু দেখিয়ে লুটে নিচ্ছে এক তস্করে ,
মনে হয় একটু ভয়ও পাই
ঠিক এমনি সময় পেটের খোঁদলে মোচড় দেয়
ভোরের ছাতা পড়া বাসি বনরুটি আর এক কাপ চা ,
"
কর্ম খালি নাই" লেখা সারী সারী কাচের খোপে খোপে
বসানো শীতাতপনিয়ন্ত্রিত দপ্তরগুলোর দিকে তাকাই ,
পরক্ষণে হাতের খামের ভেতর চুপটি করে ঘুমিয়ে থাকা
উচ্চশিক্ষার সনদের দিকে চোখ যায়,
ডাস্টবিনের পাশে দাড়িয়ে খানিক তাকিয়ে থাকি,
পাশেই লেখা "আমাকে ব্যবহার করুন"
আর ভাবতে হয়না বেশী ,
খামটা ছুড়ে ফেলি এক ঢিলে
তার সাথে ছুড়ে ফেলি শিক্ষা দীক্ষার সবটুকু
পকেটের শেষ বিশটি টাকা দিয়ে ফুটপাতের ধার থেকে
কিনে নেই একটি ভয়াল দর্শন চাকু
তারপর আমিও ঢুকে যাই কোন অন্ধ গলিতে ,
ডুবে যাই অন্ধকারে



   কথাচিহ্ন 


  -মেঘ অদিতি



শ্বাসের শরীর জুড়ে পড়ে থাক 
রাতের নিজস্ব আলো .. ..
আর কোনো চিহ্ন কোথাও নেই
পরিধির এধারে একা এক
এককের বেশে হেঁটে চলি বহু দূরপথ

কি আসে যায়.. ধারণ করি সে মুখ
জবালার যদি আজ নিজেরই মুখে!
কি আসে যায় আর? স্রেফ বালির
ভেতর নিজেকে লুকিয়ে রেখে ক্রম
শিরাগত অবসাদে দেখেছি পাঁজরে
লুকোনো পাতাগুলো শেষে নুয়ে পড়ে
সেই জলের দিকেই বিভাজিত রেখায়
খোলস থেকে খোলসে ক্লান্ত ঘুণের শরীর

যা কিছু উচ্ছল হয়ে ধরে ছিলো এই হাত
ফেলে যাই তা ভয়ংকরের কাছে
যাবার আগে মুছে দিই.. এক এক করে
পড়ে থাকা সমস্ত কথাচিহ্ন..!



বদলে নেবো নতুন পথ



-সৈয়দ আবু মকসুদ










আমি আর যাবোনা ত্রিবেণীদের পাড়ায়-মহল্লায়
খেলবোনা আর রাতের গহীনে ডুবে ক্লান্তির কানামাছি
সোডিয়াম আলোর মতো বদলে নেবোনা
প্রাপ্তির প্রগাঢ় রংয়ের শুভ্র বর্ণ জীবনের কপাল
আগুনে আকণ্ঠ ডুবে থেকে থেকে
বুদ হয়ে কাটাবোনা অষ্টপ্রহর, বেলপাতা পুজো হয়ে
স্বাস্থ্যবতী পূর্ণিমাকে দেবোনা অনিদ্রা-উপবাস
নিঝুম সায়াহ্নের নক্ষত্র মেলা চোখের কোণে গড়াতে গড়াতে
ঘুমিয়ে পড়া জলগুলোকে আর ছোঁয়াবোনা
আজন্ম পোষণ করা ক্লেদের জলখাবার ;

সবুজে বীর্য ঢেলে সর্বস্ব দিয়ে প্রাপ্ত এক দানবের ভালোবাসা ঢাকতে
একটা অন্তত: নিভৃত ঘর চাই
একটা অন্তত: বিজন আশ্রয় পেলে
আত্মহননের আয়োজনে কাটাবোনা আর
অব্যক্ত যন্ত্রণার গোপন জীবন
বিয়োগে-বর্তমানে বদলে নেবো নতুন পথ
প্রশ্নাতীত ভালোবাসার বিরহী বিরাগ বিহার
 

ভালবাসা তোমায়



 -আরশাদ উল্লাহ




ব্যথার ব্যথা-জ্বালায় জ্বলছি আমি

ব্যথার ভালবাসা চাওয়া পাওয়ার
আশা দুরাশার মাঝে আছি আমি!
বুকের ভিতরে আছে তোমার ছবিখানি 
তবু কেন বিরহ যাতনায় মরছি আমি!
শ্রাবন রাতের বরষণে আজ একলা ঘরে
মন আমার নিরবে কাঁদে দূরে সিন্ধু পারে!
বিরহ মনের কোণে - সুপ্ত-বেদনার ধ্বনি
নিশীত অন্ধকারে হৃদয়ের কোলাহলে শুনি 
সেই বাণী – সেই বানী শুন কি তুমি!

সাগর জল ছুয়া নির্মল মলয় এ প্রাণে
তোমার সুরভিটুকু দিয়েছিল আমায় এনে!
সেই থেকে হল যে সন্ধি - নবযুগের সৃষ্টি
তোমার আমার - আখাঙ্খার শ্রাবন বৃষ্টি!

নদীতে আমার কাগজের নৌকা খানি
এই নব-স্রোতে জোছ্‌না রাতে ভাসাব  আমি
এই কথাটি মনে রেখ অন্তরে তুমি!
যদি কোন দিন যাও তুমি নদী-কিনারে
তোমার পদ্ম রং হাতে - তুলে নিও তারে!
কাগজের ভাজ খুলে দেখবে আমার কবিতা
পড়ে নিও তারে সংগোপনে নিবিড় নিরালায়
তোমার পুস্পিত হাতে ধরে জোনাকি সন্ধ্যায়!
যদি কোনদিন আসে শুভদিন নদীর কিনারে
দেখা হয় যদি দু’জনের শরতের কোন ভোরে!
তুমি পড়ে শুনাবে প্রিয়া আমার সে কবিতা
কোন এক রক্তীম সন্ধ্যায় – অনিকামতায়!! 



 কি আমার পরিচয়





-ইন্দ্রানী সরকার








কে আমি কেন আমি?
প্রশ্নের উত্তর
আমার ' জানা নেই.
কেউ কি জানে ?
বড় কঠিন সমস্যা !
উত্তর খুঁজে পাই না |
যেন আমি কোনো বেদুইন
ঠিকানাবিহীন লক্ষ্যবিহীন,
ক্ষণিকের উন্মত্ততায় দিশেহারা|
অথবা আমি কোনো কস্তূরীমৃগ,
নিজেরই গন্ধে নিজে মাতোযারা|
আমি কি এক পলকের অশ্রুকণা?
ক্ষণিকের বিহ্বলতায় আকুল|
অথবা গোলাপের একটি ছোট্ট পাপড়ি
যার জীবন শুধু কয়েক দিনের|


   




হাত ধরতে দিও প্রেমে








-কবি মোস্তফা মিয়া








হাতখানি তোমার ধরতে দিও প্রিয়
ধরতে দিও প্রেমে
হাতে হাত রেখে মরতে দিও প্রিয়
মরতে দিও প্রেমে

তোমার কাজল চোখে চোখ রেখে প্রিয়
কোনো এক অজানা ভুবনে
হারাতে আমায় দিও
হারাতে দিও প্রেমে

তোমার মেঘলা চুলের সুনিবিড় ছায়ায়
জড়াতে দিও আমায় তুমি
অনেক বেশী মায়ায়
জড়াতে দিও প্রেমে

তোমার মনের বিশাল আকাশের এক কোণে
ওড়াতে দিও আমার ছোট্ট ঘুড়ি
দখিনা হাওয়ার টানে
ওড়াতে দিও প্রেমে

ভালবাসা অনেক বড়, কিন্তু ক্ষুদ্র জীবন
কাটাতে দিও প্রতিটি মুহূর্ত
নয়নে রেখে নয়ন
জীবন কাটাতে দিও প্রেমে


   নিয়তি

 

 -তামান্না  রুবাইয়াত




কতকাল পেরিয়ে গেল
আমার মনটা তোমাকে দিয়ে
তেতো করে রেখেছি
কোনও শেষ বিন্দু পরিমাণ
অংশ অবশিষ্ট রাখ'নি

যতই আমি পবিত্র হতে
তোমাকে বলি ভালোবাসি
ততবারই বিষাদে ভরে উঠে
মন আমার

তোমাতে আর আমাতে দিয়ে
ভুলে ভরা ভালোবাসার শুরু
যার মূল্য সারাজীবন
বয়ে বেড়াতে হবে
 
তোমার বিনিময়ে নয়
আমার মনের বিনিময়ে
এটাই হয়তো বা নিয়তি!


 
লাবণ্যময়ী






 -কাজী আনিসুল হক







 
শত রমণীর মাঝে অনন্য সুন্দর,
লাবণ্যময়ী তোমার ওই চোখ
তোমার দুটি ঠোট স্পর্শ কাতর,
পৃথিবী ভোলান তোমার মুখ

ফুটন্ত গোলাপের কলির মত,
তোমার সবে ফোটা যৌবন
নিষ্পাপ অবুঝ শিশুর মত,
ছটফটে কলঙ্কহীনা চঞ্চল মন

দিঘির জলে চাঁদের দোলা,
তোমার মাঝে প্রেমের খেলা
ভোরের প্রথম সূর্য রাশি,
তোমার মুখে লাগা হাসি

শ্যামা সুন্দরী-তমার টোপরে গাল
সাড়া অঙ্গের প্রতিটি ভাজ_
উন্মাদনায় ক্রমশ করে মাতাল,
কামতা জাগানো স্রষ্টার কারুকাজ

অর্ধ নগ্ন বৈশাখীর মত তুমি,
ঝড় বাতাসে মৃদু বৃষ্টি
ঢেউ তোলা ওই ষোড়শী অঙ্গে,
যাদুর মত ভালবাসা হয় সৃষ্টি



   উষ্ণ রোদের ছায়া








-আফরিন জাবীন






 

আমার সব কিছুতেই রয়েছ তুমি,
তাই তোমার কোন কিছুতেই নেই আমি
তোমাকে আমি আজ আর কোথাও খুঁজি'না
কারণ তুমি তো বাস কর হ্রদয় মণিকোঠায়
উষ্ণ রোদের ছায়া হয়ে ঘিরে থাক আমায়
পরম মমতায় আলিঙ্গনে নাও ভালবেসে
তোমার ভালবাসায় আজ নিজেকে চিন্তে শিখেছি,
জাগ্রত করেছি নিজের হারানো সত্তাকে
সোনা রোদের উষ্ণ ছায়ায় শিউলি ফুলের মত
ছড়িয়ে দিলাম আমার সবটুকু বিশ্বাস তরে
অথচ আমি আজও জানিনা তুমি আমাকে
কতটুকু ভালোবাসো অথবা বিশ্বাস কর !
তবুও বোকার মত আমার সবটুকু নিজস্বতা
সঁপে দিলাম মনের অজান্তে তোমার কাছে  ।





কর্পোরেট ভূগোল 






 -আদিত্য অনীক









সারা গায়ে এলো চুলের গন্ধ বুকে উর্মিমালার ঝড়
ছিলা ছেঁড়া ধনুক মেয়ের নিয়তি কেঁপে উঠে থরথর
আপন শরীরে মেয়ে আপনা বৈরী
বাবা নাম মুছে গেছে বহুদিন আগে অভাবের সংসারে
মাও চলে গেল দিন গে বুকের ক্যান্সারে
মতিঝিলে কর্পোরেট ফ্লোরে ফ্লোরে ঘুরে মেয়ে সবখানে
কোথায় যে একটা চাকরি মিলবে কে জানে ?
পালিশ পিতলে লেখা নাম, চেয়ারম্যান ওমর মুরসালিন
ভিক্ষার মত করে মেয়ে বলে প্লিজ, একটা চাকরি দিন
চাকরি কি গাছের পাতা ? লেখাপড়া জান কিছু ? কি পাশ ?
ন্যাশনাল ভার্সিটি থেকে বি অনার্স ইসলামের ইতিহাস
ইতিহাস-ফিতিহাসে হবে না ? ভূগোলটা কাজে লাগাও
সন্ধ্যার পরে এসো৷ অফিসে বিরক্ত করো না, এখন যাও
গভীর রাতে কাতর মেয়ে বলল স্যার, হবে তো আমার ?
হবে৷ তবে বোর্ডে আমি ছাড়াও ডাইরেক্টর আছেন পাঁচ জন,
চাকরি পেতে হলে তাদেরও সুপারিশ পাওয়া খুব প্রয়োজন
মেয়ে দাতে দাঁত চেপে একে একে সবার কাছে গেল,
তারা কেউ ইতিহাস জানে না, ভূগোলটা বুঝে ভাল৷
ইন্টারভিউ বোর্ডে তারা ভূগোলে নেই শুধু ইতিহাস জানে
পাল্লা দিয়ে বিদ্ধ করে মেয়েকে একে একে কঠিন প্রশ্নবাণে
সাত খোপ কবুতরখোর মানুষগুলো বোর্ডে বিড়াল নিষ্ঠাবান
ভূগোল কাহিনী বাকিরা জেনে যাবে ভেবে সবাই সাবধান৷
পরদিন চেয়ারম্যান ওমর মুরসালিন ম্লানমুখে বললেন,
বোর্ডে সবাই তো মুখ বুজে থাকলেন
হলো না তোমার৷ আমার একার পক্ষে কিছু ছিল না করার
পাথর স্তব্ধ মেয়ে৷ মাথা তুলে চেয়ারম্যান বললেন আবার,
এক কাজ কর আমার বন্ধু চেয়ারম্যান মোতালেব সরকার
তার কোম্পানি আরো বড়৷ অনেক চাকরি হাতে আছে তার
ফোনে বলে দিচ্ছি৷ তার কাছে যাও৷ হয়ে যাবে আমার বিশ্বাস
কালো হয়ে এলো দিনের আলো৷ ঘন হয়ে গেল মেয়ের নিশ্বাস
ভারী বাতাস বুকে টেনে নেবার চেষ্টা করতে করতে প্রাণপণ
আর্ত কণ্ঠে বলল মেয়ে, কোম্পানিতে ডাইরেক্টর কয়জন ?







চন্দ্রের সাথে মনের গ্রহণ 

 নাফিয়া সুলতানা (নিলি)       


গ্রহণের আড়ালে লুকায় যে চাঁদ ,
তারও যে কষ্ট লুকিয়ে রয়েছে তার খোঁজ কেউ রাখেনা
চাঁদ তার কষ্টকে আড়াল করে নিতেই,
গ্রহণের কাছে নিজেকে সমর্পণ করে
মনের মাঝে যে সত্তার বসবাস ,
সেও যে ক্ষয় হতে থাকে চন্দ্রের মতোই
চন্দ্রের গ্রহণ সকলেই দেখে ,
মনের গ্রহণ কেউ দেখেনা
মনের দেখা মনে মিললে যেমন পূর্ণ হয়,
অদেখার আড়ালে তেমনই ক্ষয় হয়




   পাহাড়ের কাছে গেলেই



   -বাবুল হোসেইন









পাহাড়ের কাছে গেলেই নতজানু হতে হতে মাটি

নিজেকে পাহাড় ভেবে আবার ঠিক দাঁড়িয়ে উঠি

পাহাড়ে গেলেই ভাবি একবার উঁচুতে উঁচুতে হাঁটি

কিন্তু কি আশ্চর্য; পাহাড়ে গেলেই আমি নতজানু হতে হতে মাটি

পাহাড়ের তৃষ্ণা নিয়ে বেঁচে আছি বহুকাল

একদিন মিশে যাবো চূড়ার নিঝুম দ্বীপে নিঃসঙ্গ একলা পথিক





 


জ্যামিতিক প্রমাণ



 -লাবণ্য কান্তা




জীবন যখন যেখানে যেমন, চলবেই নিজের গতিতে
গাণিতিক হিসেবে বড় কাঁচা ...... যেভাবেই হিসেব
মিলাতে চেষ্টা করি শুধুই গরমিল ; তবুও হিসেব না
করেই মিলাতে চেয়েছি বার বার সূত্র বিহীন উৎপাদক
মান নির্ণয় করেছি অনেক পাতার পর পাতা ব্যর্থ
চেষ্টাই মাত্র মিলাতে পারিনি কোন উৎপাদক......
উল্টো সমীকরণ এসে সূত্রে- সূত্রে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ
ঘটায় _________ ডেটল তুলোর মুছোমুছিতে কঠিন
দাগ পড়ে গহীনে, আর এসব সূত্র বিহীন গণিত চর্চা
নয় ---- তাই জ্যামিতিক আঁকা আঁকিতে মিথ্যে
ব্যস্ততা বৃত্তের ভেতরেই কেন্দ্র, ব্যাস, ব্যাসার্ধ, জ্যা,
বৃত্তচাপ, পরিধি আঁকতেআঁকতে কম্পাসের ডগায়
ক্ষত- বিক্ষত করি নিজেকে কত কিছু করে ফেলি ____
সাধারণ নির্বচন, বিশেষ নির্বচন, অঙ্কন, প্রমাণ
অঙ্কনের বিবরণ লিখি দিনরাত ; তবুও বিবরণ ভুল
কত কঠিন কঠিন উপপাদ্যের প্রমাণ মিলাতে চেষ্টা
করি, কখনো কখনো বিকল্প সূত্রের প্রয়োগ করি
কিন্তু সবকিছুতেই ভুলের মাত্রাই অধিক......
অঙ্কন কোন না কোন উপায়ে রপ্ত হলেও প্রমাণ
ডিঙিয়ে দশে দশ কখনোই পাওয়া হবে না
আমার ব্যর্থ প্রয়াস, খুব দেরিতে প্রমাণ হয়তো
মিলবে, নয়তো নয় _______ যখন মিলবে তখন এসব
জ্যামিতিক অঙ্কন প্রমাণের কোন মূল্যই থাকবে না







      'ইচ্ছা'



      -অরিন্দম










নাহ! তোমাকে আর অপেক্ষা করতে হবে না
ইশারায় সেদিন তাকে ডাকতে গিয়ে ভুল করেছি
সে কে ? এই প্রশ্নের উত্তর আমাকে এখনও তাড়িয়ে বেড়ায়
কত রঙের রংবাহারি খেলা যে খেলেছি জীবনে!
আরও কত খেলতে খেলতে বাকি জীবনটাও যাবে,
আস্তাবলের ঘোড়াগুলোর মতো
নির্দিষ্ট একটা দিকেই দৃষ্টি স্থির করি, ঠুলি পরে,
তারপর কোনও এক অবাঞ্ছিত তিথিতে
নিজেকেই তিরস্কার করি... ধমক।।,
হয়ত বা উস্কে দিই...
নিভু নিভু সলতেটা ঝরে পড়বার আগে
একবার অন্তত মশালের মতো জ্বলুক
তোমাকে ভরব বলেছি দুটো মলাটের ফাঁকে
এখনও, নিজেকে জ্বালিয়ে নেবার পরও
বলছি শেষবার অন্তত আমার ইচ্ছাকে মর্যাদা দিও
না-না কোনও দাবি নয়... একটা জ্বলন্ত ইচ্ছে বলতে পারো




রুদ্ধ স্বপ্ন






 -স্বপ্ন নীল আকাশ








তোমার জন্য
পৃথিবী নিয়ে দাঁড়িয়েছি ,
তোমার হিম চোখের
থেকে কয়েক হাত দূরে ,
পার যদি ছুঁয়ে দাও
আমার পদ্মপাতা মুখ .. .
নিয়ে নাও প্লটগুলো ভাগ রেকর্ড করে
বুক খোলা শার্টে
তারার বোতাম
আর কটা খুলে দাও
অরণ্যের প্রেম
সাথে ককটেল শীৎকার পার যদি ,তুলে নাও !
আমাকে নেবে কি
প্লাস্টিকের ফুলে
থিতান আতর করে ,
আমাকে নেবে কি ,
শার্শির ফাঁকে জবরদস্তি
ঢুকে পরা কাক ভোরে ?
যদি চাও
একমুখ ভালোবাসা দেব ,
রাত জেগে কথা কব ,
যদি চাও
তোমার বুকের চন্দ্রহারে আর পাঁচ ছয়টা
পরকীয়া প্রেম গুজে দেব ,
সময় পেলে ফোন
করে নেবে,
নির্জন লাশ ঘরে ,
যেখানে ধুলোর গন্ধে
ক্যাম্বিস স্বপ্ন ওড়ে ,
আমার সাদা জামা ভাসে
নীলাকাশে ,
মেঘ নেবে কি একপাত ,
থালা ভরা
আঁগুরের রাত ?
তবে ,
লাশ ঘরে নির্জনতা খুঁজে নাও ,
আমার উত্তপ্ত চামড়ায়
তোমার শরীর
মিশিয়ে দাও ,
ছায়াপথে ..
অথবা , আঁধার খোঁজ
আঁচড়ে আঁচড়ে ক্ষতবিক্ষত করে দাও বুক , স্তন , মাটি নদী, খুঁজে নাও আস্তানা
স্যাঁতস্যাঁতে মৃত্যু গহ্বরে ,
শহরের প্রান্তে
...
ইঁদুরের গর্তে



সত্যি কবিতা






 -রুখসানা কাঁকন








আজ বড় মন উচাটন
ভাবছি জম্পেশ একটা প্রেমের কবিতা লিখব
আসলে তুমি আমার কবিতা ছন্দ, মৌলিকতা,
আমার বিষাদের ছন্দ ,
অনাবশ্যক হাসির ছল,
কান্নার শিকড়ে ভিজিয়ে ঔদ্ধত্য ,
এসবের সাথে এত বেশী পরিচিত
তোমার কাছে আমি এখন পুরোটাই কবিতা
আমি আমদের বিশেষ দিন গুলি কে পূঁজি করে আর কবিতা লিখি না
বয়সের এক মেরুতে আসলে সব জলাঞ্জলি
এক ঝিকমিক কবিতা
ছাদের বাতাসে আঙ্গুলে গিট্টু পেঁচিয়ে
প্রেম প্রেম চোখ নেই,
তবে অলস বিহঙ্গ দুপুরে
তোমার হাতের ভাঁজ আর তোমার ঠোঁট মিশ্রিত সুখে
আমি আর একবার ভাবি
আহা প্রেম কবিতা ......তোমার জন্যেই শুধু
কবিতা তোমাকে নিয়ে লিখেছি
প্রতি সেকেন্ডের ঘোরে
অসামান্য বৃষ্টিতে গাউছিয়ার ভিড় ঠেলতে ঠেলতে
বা বসুন্ধরার সেই কাপের শেয়ার
লোনা রাত পেরিয়ে তুমি আসো
টেনেরিফার কোন আজন্ম বীচে
অসম্ভব দেবতার অসামান্য রূপ ভাবতে ভাবতে
হাত ভাঁজ করে পকেট থেকে বের করি দোনলা কলম
আমাদের একাত্মতা, আমাদের শব্দ বচন,
ভাল থাকা, আমাদের শক্তি আর জীবন বোধ
এই কবিতা
তোমার আমার চিরয়মান প্রেমের কবিতা ।।