ঢাকা, মঙ্গলবার,২৯ জানুয়ারি ২০১৩,১৬ মাঘ ১৪১৯, ২৮তম সংখ্যা।

কবি কাশীনাথ গুঁই খুব অসুস্থ, কিডনির অসুখে মোটামুটি শয্যাশায়ী,আসুন আমরা তার জন্য বিধাতার কাছে প্রর্থনা করি ,তিনি যেন সুস্থ হয়ে উঠেন ।মুক্তডানা পরিবার এই ২৮তম সংখ্যা               
 কবি কাশীনাথ গুঁই  কে উৎসর্গ করলো।

২৮তম সংখ্যায় আছে মোট ১৬টি কবিতা, লিখেছেন-কাশীনাথ গুঁই,অত্রি ভট্টাচার্য্য,ফারহানা খানম,নীল আলো,অনুপ দত্ত,মৌ দাশগুপ্তা,ইন্দ্রাণী সরকার, শামীম পারভেজ,কানিজ ফাতেমা রুমা,আহমেদ মুনীর, আফরিন জাবীন,আলী আফজাল খান,আব্দুল্লাহ জামিল,মধুসূদন রায়,ইমেল নাঈম এবং আহম্মেদ রফিক

 
কৈফিয়ৎ
কাশীনাথ গুঁই

আমি সেদিন তো আসিনি এখানে শুধু সময়টুকু রাঙাতে।
এসেছিলেম ভালবাসতে-পাই না পাই তবু শুধুই ভালবাসতে।
মনের কাছাকাছি পৌঁছানোর মোহ ছিল-মন জানাজানিরও ভীষন আগ্রহ।
হাত বাড়াতেই পেয়ে গেলামও এমন সব নানা সম্পর্ক-
কামনাহীন ভালবাসার এসব সম্পর্কেই ছিল যে আমার আগ্রহ।
বেশ ভালই কাটালাম সেই সবুজ আর ভালোলাগা দিনগুলো-
ভীষণ দূরে ভাগলো দিনযাপন আর প্রাণধারণের গ্লানিগুলো।
ধীর পদক্ষেপে কেউ কেউ মনের বেশ কিছুটা কাছে এলো-
জন্মালো অধিকারবোধের ব্যাধিটাও-যেন এটাই ছিল ভবিতব্য।
সময়ের মূল্যে বিচ্ছেদও এলো- ঘটনাটা ছিলই হয়তো অনিবার্য।
এমনি করেই ইতি আমার ভাললাগার-
সুখ যা পেলাম তার দ্বিগুণ কষ্টভোগ আবার।
সারাজীবন আমার এই ছিল ললাট লিখন বিধাতার-
আজও কোন বদল হয়নি সে লেখাটার।
তাইতো সময় এলো বিদায় নেওয়ার-
এখন সময় হৃদয়ের বিশ্রামে ক্ষত শুকাবার।
আসি বন্ধু-ভাল হোক তোমা সবাকার-
তোমাদের দেখেই তো খুশী কিনবো এবার।
মনে হয়েছিল কৈফিয়ৎটা দেওয়া আছে দরকার-
আসলে হলমনকে চোখ ঠারা’-আমার।

দুই একে তিন
অত্রি ভট্টাচার্য্য

কোনও কোনও গল্প আজও রিসিভারের মুখের কাছে
দুলছে, যেন সদ্য ফোঁটা দুর্লভ ফুল - বিরলতমা
পাপড়ি পাপড়ি বসার ঘরের পিয়ানোময় সাজিয়ে রেখো।
অব্যক্ত সবকিছুর পাশেই অপেক্ষা করছে রঙ্গমা
প্রেমের কথা লিখতে গেলেই যে শব্দেরা আপোষ রে,
তাদের কি ঠিক বুর্জোয়াস্বর আজ এখনও যাচ্ছে বলা?
আমরা তো দল-মিছিল-মিটিং সুকৌশলেই এড়িয়ে গিয়ে
নিভৃত আশ্রয় করেছি ব্যালকনিবৎ চাঁদের কলা
তোমার দেওয়া একটি কলম ল্যাজ ঝুলিয়ে বসছে তারে,
বসছেকারণ এক্ষুনি তার পাখনাদুটি পড়িয়ে দিলাম !
পিঠের উপর একটি-দুটি আপত্তিকর লাইন লিখে--
জানলা দিয়ে উড়িয়ে দিচ্ছি সরল গদ্য, কটুক্তি, নাম !
এসব এবং আরো আরো অনেকরকম জ্যোৎস্নাপুকুর
পতনবিমুখ আকাশ নিয়ে দুদিন থমকে আছে
পানপাতাটি টুকরো হয়ে রাঙাচ্ছে কেরানীর চোয়াল
ভালোবাসার অজন্তাফল চাক বেঁধেছে আইনগাছে !

রাত্রি 

ফারহানা খানম

জানতো! আঁধারেরও রঙ বদলায়
গাঢ় থেকে ধূসর সফেদ হয় কৃষ্ণবর্ণ।
তারই বলয়ে বসে আমি
দেখি নৈশলীলা।
অপরূপ সব রূপকথা
ভীষণ একাকী উপবনে কাঁদে এক পরী
অসহায় লীলাবতী! দাঁড়িয়ে রাস্তার মোড়ে।
তিলোত্তমা শহরের কিছু সুসজ্জিত ফ্ল্যাটে
আলো জ্বলে, আনন্দ অজস্র।
তার দিকে তাকিয়ে শীতবুড়ি
আগুনের আঁচে খোঁজে শীতার্ত মানুষের ওম।
কোথাও অন্তহীন কষ্ট নিয়ে
জমাট আঁধারে গোরস্থানের পথে
শবযাত্রা। পরক্ষনেই
বাতাসের বুক চিরে শুনি সদ্যজাত
কোন শিশুর চিৎকার।
আরও কত কি!
তবে নিমগ্নেরও অবসান হয়।
শিল্পিত সমাপ্তি চতুর্থ প্রহরে। দেখি
সকালের বুকে নীরব রাত্রির দ্বিধাহীন সমর্পণ।


নিরেট ভালবাসা
নীল আলো

অভিমানের অশ্রু মিশে গেল বর্ষায়
অসম্ভব এক অবুঝ মায়ায়...
ঝড়ো হাওয়ায় শুকনো পাতা যেমন
উড়ে যায় অজানা ঠিকানায় ...।।
তেমনি চলছি কোন অচেনা পথে
আদি অন্ত না বুঝে বৃথাই...
অনন্ত শূন্যে আপন স্বপ্নে বিভোর আমি,
জনম ভরিয়া তারে খুঁজি তাই ।।
ক্ষিপ্র-স্রোত ভেঙ্গে দেয় কত মায়া ঘর
ভেসে যায় কত যে আশা...
তবু তরঙ্গের ভাজে জড়িয়ে থাকে অবিরল
গোপন এক নিরেট ভালবাসা...।।
তার বিরহে উদাস হওয়াতে
ফাগুনে অঝোর বৃষ্টি হলো ।।
মেঘ হৃদয় চাহে বিরহের দেনা
শোধ করেও বাসিতে তারে ভালো ..।।
পাতাটি ঝরে পরতে দেখে
মনে হলো অনেক হারালাম,
আঘাত লাগেনি কোন
তবু নিঃশব্দে চূর্ণ হলাম ।।


তোমায় অনেকদিন পর দেখা
অনুপ দত্ত

তোমায় অনেকদিন পর দেখা
চোখের নীচে লেগে আছে সমস্ত উদাস পৃথিবী
তাকিয়ে আছে তোমার পরিবেশে নিঃসঙ্গতা দুঃখ
তোমায় অনেকদিন পর দেখা
শেষ দেখা আমরা নিকটে, সেই রাতে
দূরে এক গ্রামীণ নিশুতি রাতের কাছে বসে
রাতের ভাল লাগা অন্ধকারে কি সংকেত,
কি দেখা--না দেখা ইশারার অপেক্ষা করে
সারা রাত ঘেমে নেয়ে আমাদের মন
ড্যাইকিন ফ্রিজের দরজায় আটকে থাকে
কিছু নিশুতি সংকেত গ্রামীণ নিশুতি রাতে নজর কাড়ে না
তোমায় অনেকদিন পর দেখা
অনেকবার ভেবেছি ….
জীবনে প্রেমিক নায়ক হয় কিছু বিষণ্ণ মানুষ অমায়িক
চোখে তার প্রেম
মুখে তার নিঃশব্দ কথা
হৃদয়ে তার ভাঙ্গে কালো পাহাড়ের রঙ্গিন পাথর
হাঁফরে তার ওঠা নামা করে নিঃসরণ দুঃখ
লোকে ভাবে…..ব্যাটা বড় নির্ভেজাল সেয়ানা
সব দ্যাখেসব রহস্য উপভোগ করে
মুখে কিছু কথা বলে না ৷৷
কিন্তু কেউ জানে নাআকছার
কান্না আসে বলেই….
তার মনে শ্রাবণ ঘনায় বার বার ৷৷


বনলতা প্রেম
মৌ দাশগুপ্তা

হৃদয় সৈকত শুধু জানে ব্যর্থ প্রেম কিভাবে ধু ধু বালিয়াড়ি হয়,
বার বার তোমার ভাবনাকে শুধু আলতো হাতে ছুঁয়ে যাই-
কতবার মনেমনে প্রতিজ্ঞা করি, আর ভাববো না তোমার কথা,
তবু বুকভাঙ্গা দীর্ঘশ্বাসে ভরে আসে তোমার দেহের ঘ্রাণ,
চুলের মিষ্টি সুবাস,
তোমার জন্য জমিয়ে রাখা আমার সমস্ত ভালোলাগা,ভালোবাসা,
উজাড় করে দিই তপ্ত নিশ্বাসে।
আমার পৌষালী মেয়েবেলা একলাই ঢলে পড়ে
অলস দুপুর থেকে অকালসন্ধ্যায়।।
আমি যে তোমার বনলতা,
আমায় চেনা যায় অসমাপ্ত শ্যামলিমার আভাষে,
আমার অন্ধকার চুল থেকে জমে ওঠা
ভালোবাসার পরগাছারা দিনরাত ছায়া ফেলে তোমার নয়ন সরসীতে।
তোমার মন জুড়ে বেড়ে ওঠে অবুঝ বাহানার ক্যাকটাস।
যার বিষাক্ত কাঁটা যদি একবার তোমার মনে গেঁথে যায়,
তবে তোমার মনে আমার মৃত্যুকামনাটাই শুধু অবাধে শিকড় ছড়াবে।
হয়ত অনেক বসন্ত আসবে যাবে, পৃথিবী বদলাবে,
ক্ষইতে থাকবে পৃথিবীর আয়ু
বদলাবো আমি, বদলাবে তুমিও।
উদ্ভিন্ন যৌবনগাঁথায় আটপৌরে সম্পর্কের ছলে
বদলে নেবে নামভূমিকার নায়িকা।
প্রেয়সীর রাতের প্রেমমাখা ওমে ঢাকা আদরে
উত্তেজিত হবে তোমার প্রেমিক স্নায়ু!
দুহাতের তালুতে চোখের জলমাখা অভিমান মুছে আমি একাই
রাতের অন্ধকার লেফাফায় গোপনে জমিয়ে রাখবো আমার বনলতা প্রেম,
কাদম্বিনীর মত আমিও মরে গিয়ে প্রমাণ করবো, যে,
ভালোবাসাতেও মিথ্যা আছে।।


ভুলে গেছি
ইন্দ্রাণী সরকার

ভুলে গেছি সেদিনের সেই সব সুখ দুঃখের কথা ---
যেদিন পশ্চিমের আকাশটা লাল আবীর মেখে সেজেছিলো ,
কালবৈশাখী সন্ধ্যা আকাশটা কালো চাদরে ঢেকে দিয়েছিলো ,
সেঁজুতি ফুলের গন্ধে ক্রমশঃ ডুবে যেতে থাকা উপলব্ধিগুলো
মহাসমুদ্রের প্রবল ঢেউয়ের মতো জেগে উঠেছিলো নতুন করে |
এখন আমার ফুলের তীব্র গন্ধে আমার মাথা ধরে যায়..
পশ্চিমের আগুন রাঙা আকাশটার দিকে তাকাতে ভুলে যাই |
কালো আকাশটা যেন মুখোশ পড়া দুঃস্বপ্নের মত তাকিয়ে থাকে |
নৈশব্দের পথ ধরে কারা যেন সন্তর্পণে হেঁটে চলে যায় অজানা দেশে |
বিবর্ণ স্মৃতির পাতা উল্টে দেখতে থাকি সেই চেনা নামটির মলিন প্রতিচ্ছবি ||

 
আমার বাড়ি সবুজ রঙের
 
শামীম পারভেজ

আমার বাড়ি সবুজ রঙের
মাঝখানেতে লাল -
তারই মাঝে উপর থেকে
ছড়ায় রবি আলো
সেই আলোতে দূর হয়ে যায়
সকল আঁধার কালো
আমার বাড়ি সবুজ রঙের
মাঝখানেতে লাল -
তারই উপর নীল আকাশে
ভাসছে মেঘের ভেলা
রবি মামা দিচ্ছে উঁকি
করছে কতো খেলা
আমার বাড়ি সবুজ রঙের
মাঝখানেতে লাল -
তারই মাঝে বহে নদী
নদ নালা খাল
নদীর মাঝে নৌকা চলে
তুলে রঙ্গিন পাল
আমার বাড়ি সবুজ রঙের
মাঝখানেতে লাল -
তারই মাঝে তুলে সুর
কত কত গানে
কিচির মিচির কুহুকুহু
পাখির কলতানে
আমার বাড়ি সবুজ রঙের
মাঝখানেতে লাল -
তারই মাঝে ফলের মেলা
হরেক রকম ফল
এত ফল দেখলে তবে
জিভে আসে জল
আমার বাড়ি সবুজ রঙের
মাঝখানেতে লাল -
তারই মাঝে হাওয়ায় দুলে
হলদে সরষে ফুল
দৃশ্য দেখতে তোমরা
যেন করোনা ভুল
আমার বাড়ি সবুজ রঙের
মাঝখানেতে লাল -
তারই মাঝে ফুলে ফুলে
প্রজাপতি করে খেলা
মৌমাছিরা মধু খেয়ে
কাটিয়ে দেয় বেলা
আমার বাড়ি সবুজ রঙের
মাঝখানেতে লাল
তারই মাঝে নারীরা সব
পিঠা বানায় কতো
সবাই মিলে স্বাদ নেয়
যতো পারে ততো
আমার বাড়ি সবুজ রঙের
মাঝখানেতে লাল -
তারই মাঝে পলি ভরা
ফসল ফলে কতো
ফসলেই ক্ষুধা মিটায়
খায় ইচ্ছে মতো

অবোধ
কানিজ ফাতেমা রুমা

যার আহ্বানে দিয়াছিলাম সাড়া বুঝিনি তার অভিনয়
এমন অবোধ তুমি হয়না যখন তোমার অসময় ,
সময় বুজবে তখনি তুমি হয়েছে তোমার তরে ,
আসিছে কেউ তোমারে নিতে আপনার করে লয়ে ,"~~~
রক্তে আমার লেগেছে আবার সর্বনাশের নেশা
নহে কবির কাঁদন ওগো নিঠুর মর্ম ব্যথা
আকাশ পাতাল দেয় হুঙ্কার- ছিঃ ছিঃ অসত্য তুমি
মিথ্যার আচলে জড়িয়ে কে আমায়,সে কেবলি আমি জানি~~~
যে আমারে কাল দিয়াছিল পথ, করিয়াছে পূজা নিতি
তাহারি ঘাতে অস্থিমজ্জায় ব্যথায় আজ তার সৃতি
দেখি শুধু কাঁদা, শুঁকিয়াছে জল, সত্যের বাঁধ ভাঙ্গা
কোথায় সে দীঘির উজ্জ্বল জল, কোথা সে কন্যা রাঙ্গা~~!!
ভুল পথিকের হাত ধরিয়া, সাথি ভেবেছিল যারে
সেই যে পথিক অন্ধকারে, ছাড়িয়া গেলো তারে
এমন করিয়া জীবনে আর নাই চাই কোন প্রীতি
সত্য সেকি হবে উদয়, অবোধ আজ পাইবে গতি
 

প্রিয়তমা বন্দনা
আহমেদ মুনীর
হে অপরূপা সুন্দরী রমণীয় প্রিয়তমা
তোমার মোহাচ্ছন্ন অপরূপ রূপ সৌন্দর্যে
আমি হত বিহ্বল আচ্ছন্ন অভিভূত-
মহান আল্লাহ তালার কী অপরূপ
অসাধারণ নির্মিত সৃষ্টি তুমি,
একটি প্রশান্তি নির্ভার আশ্রয়
তুষার শুভ্র স্নিগ্ধতা
চমকে দেওয়া আলোকিত
একটি বিশাল দিগন্ত আকাশ অন্তরীক্ষ
প্রথম অবলোকনেই কী বিস্ময়কর প্রেম
এক ফালি মিষ্টি রোদ
কিংবা জ্যোৎস্নামাখা রাত্রির নরম
আধান শরীর চিত্রিত চিত্রিণী
শঙ্খিনী পদ্মিনী
একখণ্ড শুক্ল শুভ্র চিত্রাঙ্গদা
ভাসমান মেঘ
হৃদয় ছোঁয়া ধারাসম্পাত বৃষ্টি
রবীন্দ্র সঙ্গীত
জীবনানন্দের কাব্যকলা
নজরুলের প্রেমাঙ্ক উদ্দীপ্ত যৌবন
ফজল শাহাবুদ্দীনের শরীরী
প্রেম উন্মাদনা প্রিয়তমা
নির্মলেন্দু গুণের প্রেমাংশু রক্তজবা গান
বৃক্ষশ্রেণী বুকের বিবিক্ষা খোলা বাঁধন ।।
ক্ষমা করো প্রিয়তমা
যদি মনে করো অতি কথন,
তুমি ছাড়া কিছু নাই
কিছু জানি না কিছু বুঝি না
সর্ব দিগন্তে তোমাকেই একান্তে পাই
দয়া করো গ্রহণ করো আমার
সঙ্গীত অভিবাদন ।।
সৃষ্টিকর্তার প্রতিভূ তুমি
হৃদয়ে ধারণ করো
আমার জন্ম মৃত্যু জীবন যৌবন অস্তিত্ব
নিশ্চিত করো শৃঙ্খলা শান্তি
অবিমিশ্র ধারা ।।


দূর দ্বীপবাসিনী
আফরিন জাবীন

এভাবে তোমাকে আমি চাইনি কখনো
দূর নক্ষত্রের মত।
ভালবাসার আলোয় আলোকিত করে
আমার আকাশে ছিলে তুমি ধ্রুবতারা হয়ে
আজ নিজের আকাশের নক্ষত্রটিকে পেয়ে আলোকিত
ভুলে গেছ দূর নক্ষত্রটির কথা।
সে আজও প্রতিটি রাত জ্বলে তোমার ভালবাসায়
নিঃসীম অন্ধকারের ওপারে
আমি আজ তোমাতে আবদ্ধ নেই
তুমি দিয়েছ আমাকে মুক্তির স্বাদ।
উপহার দিয়েছ গারল ভরা অনন্ত রাত্রি
সে রাত্রির যাত্রী আজো জেগে থাকে
একাকী গভীর রাতে তোমারি প্রতীক্ষায়।


একজন ক্রীতদাস
আলী আফজাল খান
একটা মাংসপিণ্ড হয়ে রেলের সমান্তরাল স্লিপারে পড়ে আছি, সমস্ত শরীর জড়িয়ে ধাতব শিকল, চতুঃপার্শ্বের আঁধারে অদৃশ্য দৃশ্য দ্রুত চলাচল শুরু করেছে, কোন এক মহা আয়োজনে মগ্ন সব আমাকে কেন্দ্র করে, প্রান্ত থেকে ধাবমান মহানগর মেইল - নিশির নিরেট শরীর চিঁড়ে বিকট জিহ্বায় ছুটে আসছে তিন হাজার বছরের ক্ষুধা নিয়ে, কুমারী যোনী ধর্ষণে গুমরে উঠছে বায়ুকণা, সার্চ লাইটের সাপের তরঙ্গ করোটি বিবরে শাখা-প্রশাখায় ফেনিয়ে কিলবিল করছে, ঝমঝম ধ্বনি-প্রতিধ্বনি গজারির পিঠ থেকে পাঁক খেয়ে ফিরছে সূচালো রেখায়, লৌহ নৃত্যে কাঁপছে সমস্ত বিন্যাস............
হৃৎপিণ্ড চৌচির করে তীব্র- তীক্ষ্ণ একটা শব্দদলা শরীরের ভিতর রগড়াতে রগড়াতে নিথর হয়ে মুখ দিয়ে নেমে গেল শীতল অম্বরে......
আঠালো তরল গায়ে জবজব করছে, নাভির রশি দিয়ে পাতালে মুর্দার হাত, লাশের ঢেঁকি দেহের খণ্ডাংশ কুটে, দলার ঘর্ষণে জ্বলে স্ফুলিঙ্গ, কড় কড় করে ভাঙ্গছে পাঁজর - হাড়...........
করোটির ভিতর তখন ভয়ংকর একটা ঘূর্ণি উঠে রক্তের প্লাবনে আর স্বেদ নীলাক্ত হয়ে তীব্র তাপে আমার ঘুম ভেঙ্গে যায় প্রায় রাতেই...........


স্তব্ধতা
আব্দুল্লাহ জামিল

অস্থিরতা, স্থবিরতা, নিঃসঙ্গতা শুধু
স্তব্ধ জনপদ।
হৃদয়ে ধারালো চাপাতির আঘাত, রক্তক্ষরণ
মূর্তিমান রক্ষাকারী দল
বড় গলায় সাফাই গান কর্তাব্যক্তি
আঙ্গুল, হাত, পা শরীরের অংশ নয়
হয়তবা ছিলো কোনো কালে
এখানে কোনো হত্যার বিচার মেলে না


অযান্ত্রিক
মধুসূদন রায়

বছরের প্রতিটি বৃষ্টি আমার কাছে
যত্নহীন মায়ের সন্তান
#
তারপর নক্ষত্র নিভে গেলে জ্বলে ওঠে মোমবাতি,লাল নীল মোমবাতি
ফুটো হওয়া ছাতায় অকারণ পথ চলে
কাকভেজা প্রশ্ন করি আমি -
#
সোঁদা গন্ধ পেয়ে উঠে বসি
বাসি পাউরুটির গায়ে ভাইরাস ছত্রাক
গুন গুন করে ওঠে অণুবীক্ষণ যন্ত্রে -

 
কফিন আমরা কজন
ইমেল নাঈম

আমরা এখানে কজন দাঁড়িয়ে কাল কাপড়ে মোড়ানো কফিনের সামনে,
অনুসন্ধিৎসু মন বারবার জানতে চায় কে আছে শুয়ে ওখানে...
প্রথমে এগিয়ে কফিন খুলে দেখি এক বীভৎস চেহারা,
পরের জন খুলে দেখে বলল রক্তাক্ত মানবতাহীন এক মুখচ্ছবি
তার পরের জন দেখে বলল এক কাম লোলুপের বিকৃত ছবি এটা।
সবার শেষে এগিয়ে গেলেন আমাদের মাঝে সবচেয়ে প্রবীণ জন
উনি কফিনের মুখ খুলতেই স্নিগ্ধ হাসিতে ভরে গেল তার মুখ
আমরা তার মুখের দিকে তাকাতেই দেখি
লাল সবুজ পতাকা আর মানচিত্রের ছবি।
তিনি ফিরে এসে আমাদের বললেন জয় বাংলা , রাজাকার নিপাত যাক
সবার মুখ থেকে ফুটে উঠলো এক চিলতে প্রশান্তির হাসি
কিন্তু সেদিনও ঘৃণাতে ভরে ছিল আমাদের মন।


সম্ভবত:
আহম্মেদ রফিক
সম্ভবত: অশ্রাব্য বলে কিছু নেই কবিদের মাঝে
কেউ কেউ বিখ্যাত হতে গিয়ে পিছলে পড়ে,
ভালোবাসা কুড়াতে যায় এখানে সেখানে
খুব ভালবেসে জয়ের ধ্বনি মাখে গায়ে

সম্ববতঃ আরও অনেক গল্প ছিল আড়ালে
যেন বধির কেউ, আর কেউ খুনে রাঙা হাতটা দেখেনি তখনো;
কেউ কেউ এতো ভালোবেসে নিঃস্ব হয়ে আছে !
খুব করে ডাকলেও রুক্ষস্বরে বলে .....

সম্ভবত: কবিতার মানুষ আর রূপের মাঝে ভেদ আছে
ভিতর আর বাহিরের মত আরও স্পষ্ট করে দেখতে গেলে
মানুষ বটেই-- খুব খুন হয়ে যায়,
ডুবে যায় কঠিন তরল আর বায়বীয় সঙ্গমে

সম্ভবত: শিকল ছেড়ার আয়োজনে কিছু পথ থাকে
জৌলুসের চেয়ে বেশি ছন্নছাড়া, ধনের চেয়ে বেশি হাভাতে !
কবিদের সদ্ভাবে হয়তো আরও আছে ..... অনেক অংক,
নিপীড়ন আর ব্যাকফুটে যাওয়া স্ন্যাপ

সম্ভবত: মন ভরে না বলেই সে নুপংশক !
তেজী ভাবের ঘোড়া চেনায় অন্ধকারের সারেং,
শব্দের জোয়ারে যতকিছু চেনা সব ভাসে,
সব ছাপিয়ে যায় নিজেকে পেরোনোর দৌড়