দশম সংখ্যায় আছে মোট
সতেরটি কবিতা, লিখেছেন-ডা.সুরাইয়া হেলেন,শর্মিষ্ঠা ঘোষ,
নীল আলো,এম,আর ফারজানা,মৌ
দাশগুপ্তা,সাবরিনা সিরাজী তিতির,রাজর্ষি ঘোষ,শৈলেন্দ্র
প্রসাদ চৌধুরী মানিক,অর্পিতা,কুতুব আফতাব,সৌমিত্র
ঘোষ,অনুপম দাশ শর্মা,সৌমিত্র চক্রবর্ত্তী,চৌধুরী ফাহাদ,ফেরদৌস হাসান খান এবং অন্য দিন ।
আষাঢ়ের বৃষ্টি
-ডা.সুরাইয়া হেলেন
আবার এসেছে ফিরে আষাঢ়
কালো মেঘে ঢেকেছে আকাশ,
মুহূর্তেই ঝরাবে অশ্রু বৃষ্টির,
নর্তকী মেঘ নেচে নেচে,জীবনের
শ্রেষ্ঠ মুদ্রায় নিজেকে সমর্পণ করবে
নিঃশেষে,
পিপাসার্ত ধরণীকে ভালোবেসে !
আমিও বসে আছি,নিঃসঙ্গতায়
ডুবে,
ধূ ধূ মরুর তৃষ্না
হৃদয়ে ধারণ করে,
মুখ-বুক-চোখে চাতকের
দৃষ্টি,
আমার আগুন নেভাতে,হৃদয়ে
নামুক আষাঢ়ের অঝোর বৃষ্টি
!
দায়
-শর্মিষ্ঠা ঘোষ
যে যার মতন তৈরি করছে ভাষ্য
আমরা ডুবছি আমরা ভাসছি হরদম
এই তুলে দিল মই হীন মগডালে
ওই ছুঁড়ে দিল অকারণে রসাতল
যে যার মতন দৃষ্টিসীমানা মাপছে
আমরা বুঝিবা বেওয়ারিশ লাশ জড়বৎ
ঠিক ভুল সব তারি ইচ্ছেতে ঘটছে
ক্রীড়নক যত নরকের পোকা বেশুমার
যে যার মতন রঙের পিরিচ ওলটায়
ছুপাতে চাইছে গিরগিটি যত স্বদলে
আমরা নাচছি উদ্বাহু প্রেমে উন্মাদ
যৌন কবিতা লালা ঝরা জিভ চেটে খায়
তবু মাঝে মাঝে কণ্ঠপ্রদেশে চুলকায়
চক্ষুলজ্জা ছাড়তে পারিনা বিলকুল
আঙুল নিয়েছে দায়ভার তার স্বেচ্ছায়
প্রগলভ ক্ষণে রক্তঝরাতে মশগুল ...!
মুক্তডানা
-নীল আলো
সে আছে দিগন্তে যেখানে গিয়ে মিলেছে মুক্তডানা
সাগর আকাশ যে দিকে তাকাই সে পথতো নেই জানা,
বাতাসে নূপুর বাজায়ে দেখিয়ে দেয় অজানা ঠিকানা।।
পাহাড়ের বুকে ঝরনা নামে যেন বেদনার বীণ
প্রাণের তাপে ভেসে আছে কোথাও এক অপূর্ব স্বপ্নিল ।।
বিষাদে ডুবিয়া অন্ধ আত্মা জানেনা এখন রাত কি দিন ।।
নীল জোছনায় দিগন্তে মিলি আছি নিথর কোন মায়ায়
খেয়ালের খেয়া পার হয়ে দেখি দুর্গম আগুনের নদী,
তবুও ছায়া ফেলে যায়, নক্ষত্রের পথ মনের আশায় ।।
দৃষ্টির আকুলতায় খুঁজিব তারে কত শত যোজন
জানিনা গন্তব্য তবু যাব নক্ষত্র থেকে অতল সাগর,
কিভাবে বোঝাব তার অন্তরিত থেকে দিতে পারি
এ জীবন বিসর্জন ।।
-এম,আর ফারজানা
আজ জল ঝড়াবো দুচোখ থেকে,
বৃষ্টি তুমি থেমে যাও
।
আগুনের পরশ যে দিল
এ মনে,
তাকে বলে দিও,যদি
তার দেখা পাও...।
বলতে কি পার বৃষ্টি
তুমি
বেদনার রং নীল না
কালো ?
আমার মনের সুখের তারারা
নিভালো সব আশার আলো...।
ওগো বৃষ্টি তুমি এসো
না আজ
আষারের ঝড় হয়ে,
যে ঝড় উঠেছে মনের
মাঝে
থামাবো তাকে কি দিয়ে...।
বহু সাধনায় যাকে চেয়েছি
সে চলে গিয়েছে অনেক
দূরে,
তার আঙ্গিনা উঠুক ভরে
হাসনা হেনার সৌরভে...।
আমার মনের রং আজ
ধুয়ে যাবে চোখের জলে,
তাকে বলে দিও,
যদি তার দেখা মেলে।
ভালোবাসো আমায়?
-মৌ দাশগুপ্তা
বললাম, “আচ্ছা, ভালোবাসো আমায়?”
স্মিতমুখে, আনমনেই শুনলে আমার কথা,
ভাবনায় বিভোর,হয়ত আমায় খেয়ালই করো নি,
কি ছিল তোমার খেয়ালে ? সত্যি করে বলো তো,
আমি,না অন্য কিছু?
অবাক হই তোমার নির্লিপ্ততা দেখে,
ভালবাসি বলতে কেন এত অস্বস্তি তোমার?
কেন তোমার মনকে আমায় বুঝতে হবে চোখের ইশারায়?
দেখছ, আজও আমার প্রশ্ন এড়িয়ে গেলে,
সোজা কথার সোজা উত্তরটা জানা নেই বুঝি?
অথচ দেখো, কি সহজেই না দেহে আর মনে দাগ ধরিয়েছো অগুনতি, যত্রতত্র,
ভালোবেসে, সর্বনাশে,সমাপনে,সমাপ্তিতে,
না গো না, কলঙ্ক তো নয়,ও যে আমার ভালবাসার অহংকার,
আপন গরবে সমুজ্জ্বল,দেদীপ্যমান,ঠিক চাঁদের কলঙ্কের মত,
সে নিয়েই তো চাঁদ দিব্যি আলো ছড়াচ্ছে,আজ কাল পরশু…..একইভাবে……
দেখো না, আমার ভালবাসা কেমন বন্দি পাখির মত ডানা ঝাপটায়,
সবার মাঝে থেকেও, তোমার বিহনে নিঃসঙ্গতা আমায় কুরে কুরে খায়
আর একাকী আমি ভালো লাগার যন্ত্রণায় জ্বলে পুড়ে মরি।
আজ তোমায় ছেড়ে দিলাম , আমার মনের আঙ্গিনা থেকে, মুক্ত তুমি
যাও উড়ে অন্য কোন মনে, অন্য কোন ভালোবাসার সন্ধানে।
তবুও অবচেতনে যখন ভালবাসার আলতো পরশে ঘনিয়ে আসে সন্ধ্যার মেঘমালা।
আমার শূন্য আঁচল ভরে ওঠে খসা স্মৃতির টুকরোয়,ভুলে যাওয়া কথার মালায়,
নিজের অজান্তেই ঠোঁট থেকে শব্দ, চোখ থেকে ক্লান্তি, শরীর থেকে শ্রান্তি মুছে,
মনখারাপের বাদলে দুচোখ ভরিয়ে দেখি আমার বুকের শূন্য খাঁচাতে,
তোমার ভালোবাসার শুকপাখি আনমনে বসে আছে।।
মাঝে মাঝে আমার এমন হয়
-সাবরিনা সিরাজী তিতির
কিচ্ছু ভালো লাগে না
ভালো লাগা , খারাপ লাগা , ভুলে যাওয়া , ভুলে থাকা
সব মিথ্যে মনে হয়
ক্রমশ বড় হতে থাকে মনের পাহাড়
সেখানে নির্ভার গৃহস্থালি অনুভূতিদের
আমি একমনে দেখি ওদের
ওরা কেমন শান্ত সুখে ঘরকন্না সারে
কেউ কাজে যায় , ফেরার পথে সওদা করে স্বপ্ন
কেউ খুব ব্যস্ত কাউকে ভুলে থাকায়
কারো চোখে এক আকাশ মেঘ
কেউ ছুটে যায় খোলা রোদ্দুরে !
বুকের ভিতরে টের পাই বড় হচ্ছে পাহাড়
সম্পূর্ণ গ্রাস হবার আগেই আমি কড়া নাড়ি
অনুভূতিদের কোন এক ঘরে
ঠিকানা না জানা আমি অচেনা দরজায় দাঁড়িয়ে
ভুল হাতে কড়া নেড়ে যাই
একটা বিশ্বাস সাথে নিয়ে ক্রমাগত অপেক্ষা করি
দরজা খুলে দেবে একটা বিশেষ অনুভূতি
হাত বাড়িয়ে কাছে টানবে
অমোঘ নিয়তির মতো !
ততক্ষণ পর্যন্ত কড়া নাড়বো আমি ।
নিন্দিত ধনুর্ধরঃ কিছু
নীল
ইনফ্যাচুয়েশন
-রাজর্ষি ঘোষ
আমার
নিন্দিত ধনুর্ধর বেশ
নাগর
হয়েছে।
ছিমছাম
সুদৃশ্য রেস্তোরা; টিপটপ
টেবিলের পারে
গুছিয়ে
অনিন্দ্য
বাঁকা
হাসি
হেমলক
হয়ে
আছে
হাতে
ধরা
সমীচীন
ক্রিস্টাল গ্লাস।
অপরিসীম নৈঃশব্দ শুষে
নিলো
নাগরিক
প্রেম
শরীরী
উঁহু
আক্রোশে
স্টিলেটোর নৈরিৎ
কোণে
জমা
মাধুকরী। মরি
মরি
যা
যা
জাগতিক
ঐশ্বর্য তার
নিটোল
শরীরের
অনুরাগ;
উষ্ণতায় স্বেদ
মরীচিকা হলে
জ্যামিতিক ইনফ্যাচুয়েশনে কেঁপে
কেঁপে
ওঠে
যে
আতপ্ত
রঙিন
ঠোঁট
কিসের
আবেগে
বলত
ধনুর্ধর? কতগুলো
অদৃশ্য
মীনচক্ষু বাঁধা
পড়ে
বোন
চায়নার
প্লেটে
চকচক
করে
উঠবে
চোখের
পাতারা?
রাতভর
দুই
পশলা
বৃষ্টি
হলে
নিভে
যায়
অসংখ্য
লুব্ধক;
দলছুট
মিনিস্কার্টের
ভোরের
তারা।
আমার
হেরে
যাওয়া
অর্জুন
তুমি
শেষ
ক্লান্ত চুরুটটাও
ছুঁড়ে
দিতে
পার
ছাইওঠা
অ্যাশট্রের নিভন্ত
মুখে।
অনেক
পুড়ল
প্রেম
আজ
ছাই
হয়ে
যাক
পাপের
মানুষ।
"শৃঙ্খল "
-শৈলেন্দ্র প্রসাদ চৌধুরী মানিক
আর একটু পরেই বারোটা বাজবে
সময় চলে যায় জীবন হতে ।
আজ আমি বড়ই ক্লান্ত
মনটাও ভাল নাই ?
আমার পৃথিবীকে অনেক বার ডেকেছি
বলেছি আমার কষ্টের কথা !
পৃথিবী আমার আমার কথা বুঝেনি
শুধু বলেছে
,"আমি তো আছি "!
কে শুনবে আমার কথা -
কেউ কি আছো এখানে ?
আমি চেয়েছিলাম একটি লাল গোলাপ ,
সে গোলাপ এখনো ফোটেনি !
আমি চেয়েছিলাম একটি প্রবাহমান নদী ,
নদীর ঝর্ণা টি মরে গেছে !
আমি চেয়েছিলাম মানব ও প্রকৃতির
মুক্তি ,
সাম্রাজ্যবাদ তা গিলে খেয়েছে !
আমি চাই কবি ও কবিতার মুক্তি ,
যা চেতনা দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ !
এসো আমাদের হারাবার আর কিছুই নাই ,
আছে শুধু শৃঙ্খল !
মোমবাতি – জ্বলছে – কেন --
?
-অর্পিতা
কার জন্যে এতো আলো জ্বেলেছ
হাতে হাতে মোম জ্বলছে
তোমরা সারি দিয়ে চলেছ ;
ভালোবাসার পদপ্রান্তে ।
দুই ভিন্ন ধর্মের মানুষ মিলতে চেয়েছিল
সে ভালোবাসার মৃত্যুতে , জ্বালিয়েছ মোম ।
সেখানে মূল্যের নিক্তিতে
হারিয়ে দিলে অসম ধর্মের ভালবাসাকে ।
এতো মোম কোথায় পাও ! ?
কারা প্রস্তুত করে ?
আজ এতো ঘটনা ঘটছে –
জ্বালিয়েছ মোম - ?
কোনও ধর্ষিতা নারীর কান্নায় ?
আচ্ছা সেই সব কোম্পানিগুলো
আর বানায় না মোমবাতি
হারানো চড়াই পাখিদের
খুঁজে আনতে পারো না ?
নাকি ঘর নোংরা করবে
তোমাদের অনেক অনেক দাম দিয়ে কেনা
পায়রা- ঘর !
তাই তাদের জন্যে তোমরা একটাও
মোমবাতি নষ্ট করতে চাও না ।
হারাতে চাও না মূল্য
নিজেদের পরিশ্রম নষ্ট করতে পারো না
ঐ ছোট্ট সুন্দর পাখিটার লাগি ,
একদিন যে তার
কিচিরমিচিরে ভরে দিত তোমাদের সারাটা দিন । -----
হাতে হাতে মোম জ্বলছে
তোমরা সারি দিয়ে চলেছ ;
ভালোবাসার পদপ্রান্তে ।
দুই ভিন্ন ধর্মের মানুষ মিলতে চেয়েছিল
সে ভালোবাসার মৃত্যুতে , জ্বালিয়েছ মোম ।
সেখানে মূল্যের নিক্তিতে
হারিয়ে দিলে অসম ধর্মের ভালবাসাকে ।
এতো মোম কোথায় পাও ! ?
কারা প্রস্তুত করে ?
আজ এতো ঘটনা ঘটছে –
জ্বালিয়েছ মোম - ?
কোনও ধর্ষিতা নারীর কান্নায় ?
আচ্ছা সেই সব কোম্পানিগুলো
আর বানায় না মোমবাতি
হারানো চড়াই পাখিদের
খুঁজে আনতে পারো না ?
নাকি ঘর নোংরা করবে
তোমাদের অনেক অনেক দাম দিয়ে কেনা
পায়রা- ঘর !
তাই তাদের জন্যে তোমরা একটাও
মোমবাতি নষ্ট করতে চাও না ।
হারাতে চাও না মূল্য
নিজেদের পরিশ্রম নষ্ট করতে পারো না
ঐ ছোট্ট সুন্দর পাখিটার লাগি ,
একদিন যে তার
কিচিরমিচিরে ভরে দিত তোমাদের সারাটা দিন । -----
-কুতুব আফতাব
আমার কেবলই পশ্চাতপদতা ,কেবলই পিছু হটা
অজানা পিছুটান , অকারণ আত্মঘাতী ,
হাজার মানুষ কাছে রেখে নিজের সাথে একলা মাতি।
ভাটির টানে ভাটিয়ালী মনমাঝি গায় মনের সুখে
আমি তখন যুদ্ধ করি ঢেউয়ের সাথে উল্টা স্রোতে ।
জীবনবোধের পাঠ চুকিয়ে সবাই যখন জীবনবাদী
আমি তখন আমার বুকে সস্তা বোধের কবর খুঁড়ি ।
বাসর রাতে বউ পেটানো মাথা পাগলা বরের মত
আমার বিবেক আমায় পেটায় অকারণে অবিরত ।
আমি শুধু পালিয়ে বেড়াই আমার থেকে অনেক দুরে
মিছে সবাই দিনে রাতে আমায় খুঁজে আমার ঘরে ।
টিপে টিপে তসবিদানা খতমে ইউনুস পাঠ করি
ভয়ংকর সব পথে হেঁটে চিনিতেছি সব ভুতের বাড়ী ।
একে চিনি,ওকে চিনি-অমুক ইতর, তমুক গুণী
আসলে সব একই প্রাণী, শুধু মানুষ জানি ।
তস্কর
-সৌমিত্র ঘোষ,
ফিরে এসেছি তোমায় ছেড়ে, অবিন্যস্ত আবরণী আর
আলো আধারিতে তোমার উন্মুক্ত ঐশ্বর্য ফেলে।
ফেলে এসেছি আমার চেতনাটুকু ।
জাগরণে ঘৃণা ভরে ধুয়ে ফেলবে ক্লেদাক্ত দেহখানি যা কাপুরুষত্বে অসম্মানিত ।
ভালোবাসার বিশ্বাসে তোমার অঞ্জলি সঁপে দিয়েছ ছন্দে ছন্দে, লালসার অতল গভীরে বিনিদ্র রাত্রিবাস যেন উপবাস ভঙ্গে ফলাহার ।
যে পুরুষে মহাপুরুষের প্রতিবিম্ব খুঁজেছ,
অরুণ আলোয় মোহভঙ্গে বিচূর্ণ, তার খোলসখানি তোমার সম্মুখে ।
শত্রু হয়ে তোমার দেহ সৌষ্ঠব বারে বারে ক্লেদাক্ত-
নিত্য নবচাতুর্যে ।
তুমি নিঃস্ব আজি রমণপক্ষে সরল বিশ্বাসে,
আমি তখন মুক্ত হয়ে নতুন শিকারে ।
চন্দ্রক্রোড়ে
জ্যোৎস্না
-অনুপম দাশ শর্মা
ল্যাভেন্ডারের সুবাস মোহিত শিউলীরঙা
শাড়ী আর
অরুণের ঝিমানো হালকা তেজে
বেশ খুশী সন্ধ্যা,
নীলকান্ত আকাশে বিন্দু বিন্দু
মেঘপাপড়ি
কালো হরিণচোখে প্রশস্ত অলক ছড়িয়েছে
আপামর জৈব ত্বকের দৃষ্টি
প্রতিফলনে।
তখনি সম্মোহন সুষমায় প্রেম বন্ধনে
শশধর;অবধারিত আগামী প্রেম অভিসারে।
রুপালী রোদ্দুরে নিরাকার ধানক্ষেতে যুবতী জ্যোৎস্না
সবে ডুবল দুধপুকুরে, ইথার
শিকড়ে অপরাজিতা সাগরে
সাঁতারের যাবতীয় অভিমুখ জ্যোৎস্নার
ফেনিল শরীরে।
রাতভর পৃথিবী ঘুমায় অবজ্ঞায়
আর চাঁদ
নৌকায় ভেসে ভেসে এক
আকাশ থেকে
আর এক আকাশ,
লুকোচুরি খেলে জ্যোৎস্নার দেহনন্দনে।
তারামণ্ডলের তুষার পাহাড়ে যুবতী
জ্যোৎস্নার
আপাদমস্তক শুষে রজতের ধবল
ঠোঁটে
অফুরান পৌরুষত্ব গুঁড়ো গুঁড়ো রাতের
কৃষ্ণপ্রপাত ক্রোড়ে।
মৃগয়া সম্ভোগে উল্লসিত চাঁদ ঊষার ওড়নায়
ভাসে
আবছা ক্ষণিক উদ্ভাসে,
অজস্র শিশিরপুঞ্জে জ্যোৎস্না হারিয়ে যায়
ভৈরবী আলাপনে,
কেন পড়ে আছ পরবাসে
-সৌমিত্র চক্রবর্ত্তী
কোন এক অচেনা মহানগরের জনসমুদ্রে নির্মোহ
প্রতিক্ষণ প্রবঞ্চক নির্লিপ্ত সহবাসে ক্লান্ত সময়,
অসম যুদ্ধে একমাত্র সঙ্গী সেই অপাপবিদ্ধ বালক-
‘এত রক্ত কেন?’-প্রশ্ন সূচীমুখে বিদ্ধ পাহাড়ি রাজা
মুহূর্তে ঘর ছেড়ে পথের ফকির। তবু সেই
অবলম্বনে বাহাত্তর হাজার বিন্দু মাথার ঘাম
হাতবদল প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবসায়ীর লোভী থাবায়।
অথচ এই দূর রুক্ষ প্রান্তরে ছোট্ট টালির চাল
কত ছোট ছোট নাম না জানা পাখি আর ফুল
ছোট নাগপুর মালভূমির মহুয়া মাতাল ধামসা
কোন এক অখ্যাত নুনি নদীর শীর্ণ জলধারায়
খেলা করা ছোট ছোট মাছের খিলখিল হাসি
আর সম্পূর্ণ শাসনহীন বাঁধনছাড়া এতটুকু বাসা
সলাজ অস্ফুটে বাঁশির সুরেলা সুর ভাসায় সুগন্ধি বাতাসে-
কেন পড়ে আছ পরবাসে? কোন ভয়ে নষ্ট জীবন?
আমি যে তোমার আত্মজন; আমি যে তোমায় ভালবাসি…
নিষিদ্ধ প্রবেশাধিকার
-চৌধুরী ফাহাদ
একবার মৃত্যুকে সামনে দাঁড় করিয়ে
জিগ্যেস করতে ইচ্ছে করে,
একটা জীবনের জন্য তোমার কতটা মৃত্যু চাই?
বিলাপের বীভৎসতায় চাই কত তাণ্ডব?
একবার মৃত্যুকে টুঁটিচেপে ধরে জানতে ইচ্ছে করে,
একটা মৃত্যুর আদেশনামার সাথে নিয়ে আসো
কতটা জীবনের পরোয়ানা?
মৃত্যুর পথে চাই আর কত মৃত্যু!
রক্তের মাঝে জেগে উঠে রক্তিম শ্বাস
ভেসে আসে শব্দের তীব্র আর্তনাদ,
ক্রোধের ঢাল বেয়ে নামে বোধের ঢল,
বিস্তৃত বিস্তার জুড়ে জেগে উঠে দ্রোহের চর।
দমহীন অদম্য ইচ্ছার বিদ্রোহে_
ইচ্ছে করে খুব, ইচ্ছের পাখায় চড়ে
পৃথিবীর সম্মুখ দরজায় সেঁটে দিয়ে আসি...
"এখানে মৃত্যুর প্রবেশ নিষিদ্ধ"
ভাষাহীন কাব্য
-ফেরদৌস হাসান খান
একটা ছেড়া কাগজ,
একটা লেখা কবিতা
নাগরিক ব্যস্ততার মাঝে
যেখানে খুঁজেছি আমি
আশ্রয় বেঁচে থাকার।
একপ্রস্ত চামড়া দিয়ে ঢাকা ছিল
আমারই জীবন ইতিহাস
খুঁজে বেড়াই যেথা শুধু
শক্ত বাঁধন।।
নিঃসীম রাতে করে,
করুন বিলাপ
বাতাসে ভেসে আসে,
ভাষাহীন অভিশাপ।
হাজারো স্মৃতির লুপ্তকাব্য
ছুটে বেড়ায় মনের আঙিনাতে
তোমাকে হারিয়ে ফেলেছি
যেন অসমাপ্ত কবিতাতে…..।।
স্মৃতির অতলে হাবুডুবু খায়
শীতল দীর্ঘশ্বাস
স্বপ্নাবসানের দিনলিপি আঁকি
নিস্তরঙ্গ হৃদয় মোহনায়।
তোমার আমার বৃষ্টিবিলাস
ভাষাহীন মহাকাব্য
সময়ের কালস্রোতে ভেসে গেছে
আমাদের দু’চোখ ভরা স্বপ্ন।।
জ্বলছে আমাদের প্রেমকাব্য আজও
ভালোবাসার দীপ জ্বালিয়ে
শ্মশানের অনলেতে
সুপ্ত কবিতা কল্পবিলাসী হয়েছে
ভাষাহীন অভিমান নিয়ে।।
আমি অনেক সূর্যোদয় জমিয়ে
রেখেছি
-অন্য দিন
বেশ কটা সূর্যাস্তও
শুধু তোমাকেই দেবো বলে
এক চিলতে রোদও উঠিয়ে
রেখেছি
সযত্নে বুকের চাতালে
ভেবো না দেউলিয়া হবে
এই প্রেমিকের বুক !
যদি মধুমঞ্চে জাগে কোনও কৃষ্ণপক্ষের
ছায়া
ভালোবাসার ভালো থাকার বিপরীতধর্মী
কিছু ঘটে
আমি সূর্যোদয়গুলোকে ছড়িয়ে দেবো মুহূর্তে
,
সূর্যাস্তের লালিমায় রাঙাবো তোমার ঠোঁট,
কটিদেশ – সর্বাঙ্গ
আর খুব যদি শীতে
আসো, প্রাণের উত্তাপ ফুরিয়ে যায়-
আমি তোমায় ভিজিয়ে দেবো
আমার নিজস্ব রোদ্দুরে
অবন্তিকা !
আমি স্বপ্নের ঘোর কেটে বাস্তবে
ফিরে দেখি
তুমি খুব বেশী দূরে
কোথাও নেই তো
খুব কাছেই তোমার আবাস
তবু তোমায় স্বপ্নে ভালোবাসি
বর্ণহীন স্বপ্নে কাছে আসি
তানপুরায় হাত রাখি – বেজে
ওঠে
বাকিটা..................রূপকথা !
অবন্তিকা
, শোনো
রঙ , ঘুম ও অনুপস্থিতির
মাঝখানে
আমি রূপকথা চাইনা ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন